আজ একজন হতভাগ্য প্রো-রেস্লারের কাহিনী বলতে চাই। তার নাম মুহাম্মদ হাসান। প্রকৃতপক্ষে আমি নিজেও এই ভদ্রলোকের অনেক বড় ফ্যান। আমার মতে, সে WWE এবং প্রো-রেস্লিং থেকে থেকে ঝরে পড়া সবচেয়ে প্রতিভাবান রেস্লার। (পোস্টটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই একটু সময় দিয়ে পুরোটা পড়ে দেখবেন।)
মুহাম্মদ হাসানের প্রকৃত নাম মার্ক কোপানি। WWEএর কাছ থেকে ডেভেলপমেন্টাল কন্ট্রাক্ট পান ২০০২সালে। সেখানে "মার্ক ম্যাগনাস" নামে কাজ করা শুরু করেন। সেই সময়ে WWEএর ডেভেলপমেন্টাল টেরিটোরি হিসেবে কাজ করছে ওভিডাব্লিউ (পরবর্তীতে FCW, এবং এখন WWE এর নিজস্ব sub-federation NXT)। ওভিডাব্লিউ এর ম্যাচ সাজানোর দায়িত্বে তখন ছিলেন বিখ্যাত রেস্লিং প্রোমোটার জিম কর্নেট। WWE ২০০৪ সালে একজন আরব-আমেরিকান চরিত্রের খোঁজে OVWতে আসে, তাদের কাছে মনে হয়েছিলো তখন WWEএর সকল বেইবিফেইস রেস্লারেরাই অ্যামেরিকান হওয়ায়, "দি আয়রন শেইক"এর মতো নতুন একজন আরব-অ্যামেরিকান রেস্লার, দর্শকদের কাছে ভালো হিল হতে পারবে। বলাই বাহুল্য, মার্ক তখন সাধারন রেস্লারের গিমিকেই আছেন, তিনি নিজেও একজন সাধারন অ্যামেরিকান, আরবদেশীয়ও নন। কিছুদিন আগেই মার্ক জনি জেটারকে (WWE এর স্পিরিট স্কোয়াডের জনি) হারিয়ে OVW চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন, তাই কর্নেট ভেবেচিন্তে মার্ককেই এই ভুমিকার জন্য প্রেফার করলেন। WWE খুশীমনে আরব-অ্যামেরিকান ভুমিকার জন্য মার্ক কোপানিকেই নির্বাচন করলো।
WWEতে তাকে প্রথম দেখা যায় ২০০৪ সালে মুহাম্মদ হাসান নামে, সাথে ছিলো তার তখনকার ম্যানেজার "খজরো দাইভারি।" রতে মার্ক ডেবিউ করেন ২০০৪এর ডিসেম্বর মাসে, মিক ফলির সাথে একটা ইনরিং সেগমেন্টে। শুরুতেই দর্শকদের থেকে ভয়াবহ রকমের হিট (ঘৃণা) জেনারেট করলেন মার্ক। ৯/১১ এর কল্যানে অ্যামেরিকান দর্শকেরা সেইসময়ে বিশ্বাস করতো, যে মুসলিম জাত মাত্রেই সন্ত্রাসী, এবং খলরিত্রের। মার্ক ডেবিউ করার সময়ে প্রোমোতে বারবারই বলেছেন, যে তিনি একজন মুসলিম অ্যামেরিকান, কিন্তু তাঁর পূর্বপুরুষেরা আরবদেশীয়। তাই অতি অল্পসময়েই দর্শকেরা হাসানের উপরে একেবারে খড়গহস্ত হয়ে উঠলো। এটিটিউড এরার পর এই প্রথম একজন রেস্লার দর্শকদের কাছ থেকে এতো ভয়ঙ্কর এবং বিশাল রিএকশন পেলো। হাসান নিজের যোগ্যতা এবং কিছুটা তাঁর উপরে আরোপিত গিমিকের জোরে হয়ে গেলেন কোম্পানির মেইন হিল।
হাসানকে লাগাতার বিভিন্ন রেস্লারের সাথে ম্যাচ দেওয়া হচ্ছিলো, তিনিও যাদের সাথেই ম্যাচ খেলছিলেন, প্রত্যেকেই ভয়াবহ রকমের চিয়ার পাচ্ছিলো দর্শকদের কাছ থেকে। তখনই ডিসিশন নেওয়া হয় হাসানকে মেইন ইভেন্টে পুশ করার জন্য। হাসান তখন আছে রতে। সেখানে জন সিনা তখন ড্রাফ্ট হয়ে আসা নতুন WWE চ্যাম্পিয়ন, সিনাকে মনে করা হচ্ছে রেস্লিংএর ভবিষ্যৎ। তাকে হারিয়ে তো আর হাসানকে পুশ করা যায় না। তাহলে? উত্তর হলো বাতিস্তা। সে তখন স্ম্যাকডাউনে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন, নগদের মাথায় হাসানকে স্ম্যাকডাউনে ড্রাফ্ট করা হলো। অদ্ভুত ব্যাপার, ব্র্যান্ড চেইঞ্জ করে হাসানের ক্ষতি তো দূরে থাক, উল্টো লাভ হলো। দর্শকেরা যেনো আরও বেশী ক্ষেপে গেলো হাসানের উপরে। আরও হিট পেতে থাকলো হাসান। একজন হিল রেস্লারের মাপকাঠি হলো, সে দর্শকের কাছ থেকে কতোটুকু "বু" পাবে, বা হিট জেনারেট করবে, হাসান হিট জেনারেশনের দিক দিয়ে একেবারে ট্রিপল এইচ, বা রিক ফ্লেয়ারের সমতুল্য হয়ে গেলেন। ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিলো, হাসানকে লিজেন্ড ও বর্ষীয়ান রেস্লারদের সাথে (শন মাইকেলস, হাল্ক হোগান, দি আন্ডারটেইকার) ম্যাচ খেলিয়ে মেইন ইভেন্ট খেলার উপযুক্ত বানিয়ে, অতঃপর সামারস্ল্যামে বাতিস্তার সাথে খেলিয়ে ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েইট চ্যাম্পিয়ন বানানো হবে। তারপর বাতিস্তা ও কোম্পানির অন্যান্য নতুন ফেইসদের সাথে হাসানের ফিউড হবে, এবং হাসান একটা মেইন ইভেন্টার হবে যাবেন।
জুলাই ৪, ২০০৫, নয়দিন পরে আন্ডারটেইকারের সাথে দ্যা গ্রেট অ্যামেরিকান ব্যাশে মুহাম্মদ হাসানের ম্যাচ। হাসান যেই ম্যাচটা জিতে পরে বাতিস্তাকে ওয়ার্ল্ড টাইটেলের জন্য চ্যালেঞ্জ করবে। সেদিন স্ম্যাকডাউনে দাইভারির সাথে আন্ডারটেইকারের ম্যাচ। আন্ডারটেইকার সহজেই জিতলেন, কিন্তু ম্যাচ শেষ হওয়ার পর দেখা গেলো এক আজব দৃশ্য। হাসান আন্ডারটেইকারকে আক্রমন করার কোনো চেষ্টাই করলেন না, তাকে দেখা গেলো রিং এনট্রান্সের সামনে নামাজ পড়ার ভঙ্গীতে বসে পড়তে। WWEএর কথামতো মার্ক তাঁর গিমিককে আরও পাকাপোক্ত করছেন। হঠাৎ কোথা থেকে কিছু স্কি মাস্ক পরা মুখোশধারী এসে আন্ডারটেইকারকে ঘিরে ফেললো। তাদের পরনে কালো জামা, এবং ক্যামোফ্লাজ প্যান্ট। তারা এসে মারধর দিয়ে আন্ডারটেইকারকে পেড়ে ফেললো, তারপরে হাসান ধিরেসুস্থে ক্যামেল ক্লাচ দিয়ে স্ম্যাকডাউন শেষ করলো। WWE বুঝতেই পারলোনা এই সেগমেন্টএর মধ্য দিয়ে তাদের, আর মার্কের কতোবড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
তিনদিন পরই লন্ডনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো। জানা গেলো, সেই ঘটনা মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের কাজ। "নিউ ইয়র্ক পোস্ট"এ বলা হয়েছে, হামলাকারীরা ছিলো, "স্কি মাস্ক পরা কিছু আরবদেশীয়।" WWE এর নেটওয়ার্ক চ্যানেল ইউপিএন ভয় পেয়ে হাসানের সেই সেগমেন্ট প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জানালো। WWE মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। এতো যত্ন করে গড়ে তোলা মুহাম্মদ হাসান ক্যারেক্টার না শেষ পর্যন্ত তাদের জেলের ভাত খাওয়ায়। সাধারন দর্শকেরা এতোকিছু বুঝতেন না, তাঁরা মনে করলেন মুহাম্মদ হাসান ওই সন্ত্রাসীদলেরই সদস্য। হাসানকে দর্শকদের সামনে আবার উপস্থাপন করাটাকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলো ইউপিএনের কাছে।
WWE হাসানকে সবধরনের কার্যক্রম থেকে দূরে রাখলো। পরের সপ্তাহের রতে এই নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা হলো না। সেই সপ্তাহের স্ম্যাকডাউনেও হাসানকে দেখা গেলো না। তাঁর পরিবর্তে তাঁর একজন আইনজীবীকে দেখা গেলো, যিনি এসে একটা প্রমোতে বললেন, "লন্ডনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে হাসানকে সংশ্লিষ্ট করায় হাসান মর্মাহত, এবং দর্শকদের তাঁর প্রতি ধারনা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তিনি স্ম্যাকডাউনে ব্যাক করবেন না।" WWE তখনও মর্মান্তিক সিদ্ধান্তটি নেয় নি। তখনও কোনোভাবে ব্যাপারটিকে মেরামত করে হাসানকে বাঁচানোর চেষ্টাই করছিলো WWE। হাসান WWEএর কাছে দায়বদ্ধ থাকায় ক্যারেক্টারের মধ্যে থেকেই দর্শকদের কাছে আকুতি জানালেন, তিনি শুধুই একজন প্রো-রেস্লার, কোনোরকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে তাঁকে না জড়ানোর অনুরোধ জানালেন দর্শকদের কাছে। কিন্তু অ্যামেরিকানরা তখন দেশপ্রেমে ফেটে পড়ছে, কোনো ওজর আপত্তিই টিকলো না তাদের কাছে। ইন্টারনেট ব্লগে, হাসান থাকলে প্রয়োজনে WWE বয়কট করার সিদ্ধান্ত জানালো কিছু এঁচোড়ে পাকা অ্যামেরিকান ফ্যানেরা। কাজেই WWE এর কাছে আর কোনো উপায়ই থাকলো না।
২০০৫ এর গ্রেট অ্যামেরিকান ব্যাশে স্টোরিলাইনে পরিবর্তন এনে আন্ডারটেইকার হারিয়ে দিলেন মুহাম্মাদ হাসানকে। তারপর অ্যামেরিকানদের জাতিগত সৌহার্দের স্বার্থে হাসানকে লাস্ট রাইড দিয়ে স্টেজের বাইরে ছুড়ে ফেলা হলো, যেনো হাসানরূপী মার্ক কোপানির ভাগ্যটিও একইভাবে স্টেজ থেকে নিচে পড়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেলো। হারিয়ে গেলেন মার্ক কোপানি। বাতিস্তাকে চ্যালেঞ্জ করাও হয়ে উঠলো না, হলো না সর্বকনিষ্ঠ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়াও। মার্ক কোপানিকে সেদিনের পর থেকে আর কোনো রেস্লিং কোম্পানিতে দেখা যায় নি। পারিপার্শ্বিকতার বেড়াজালে এতো উঁচু থেকে এভাবে নিচে পড়ে স্বপ্ন ভেঙে চুরচুর হওয়া মেনে নিতে পারলেন না মার্ক। অভিমানি কোপানি রিটায়ার করলেন সকল রকম রেস্লিং থেকে। WWE এর মার্কের মাথায় হাত বুলানোর মতো সময় ছিলো না, তারা তখন নতুন ভিলেন খুঁজে বের করতে ব্যস্ত।
রেস্লিং থেকে রিটায়ার করার পর মার্ক কোপানি কিছুদিন হলিউডে পার্শ্বঅভিনেতার কাজ করেছেন, সেখানে সুবিধা করতে না পেরে তিনি বর্তমানে হ্যানিবাল স্কুলে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর কাছে কখনও রেস্লিংএ ফিরে আসবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি হাসিমুখে না ফেরার কথা জানান। কোপানির অভিমান কি অযৌক্তিক? তিনি নিজে একজন অ্যামেরিকান, থাকেন অ্যামেরিকায়, তাঁর দেশের ভাইয়েরাই তাঁর সাথে যা করেছে, এতে কোপানির কতোটা ক্ষতি হয়েছে, সেটা যারা এই পোস্ট পড়ছেন, তাঁরা জানেন। এখনো পর্যন্ত আমরা জানি, র্যা নডি অরটন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন (ব্রক লেজনার সর্বকনিষ্ঠ WWE চ্যাম্পিয়ন), হয়তো আমরা এতোদিনে সামারস্ল্যাম ২০০৪এর সেই কীর্তি ভুলে, সামারস্ল্যাম ২০০৫এ মুহাম্মদ হাসানের কীর্তি নিয়ে আলোচনা করতাম, কারন বাতিস্তাকে হারিয়ে হাসান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হলে তিনিই হতেন সর্বকনিষ্ঠ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন, তাঁর বয়স তখন র্যাওনডির থেকেও কম। সকল রকমের পটেনশিয়ালিটি এবং উপযোগিতা থাকার পরেও শুধুমাত্র ভাগ্য ও পারিপার্শ্বিকতার দোষে সবকিছু হারালেন মার্ক, আমরাও হারালাম সম্ভবত WWE ইতিহাসের সেরা হিল রেস্লারকে।
মুহাম্মদ হাসানের প্রকৃত নাম মার্ক কোপানি। WWEএর কাছ থেকে ডেভেলপমেন্টাল কন্ট্রাক্ট পান ২০০২সালে। সেখানে "মার্ক ম্যাগনাস" নামে কাজ করা শুরু করেন। সেই সময়ে WWEএর ডেভেলপমেন্টাল টেরিটোরি হিসেবে কাজ করছে ওভিডাব্লিউ (পরবর্তীতে FCW, এবং এখন WWE এর নিজস্ব sub-federation NXT)। ওভিডাব্লিউ এর ম্যাচ সাজানোর দায়িত্বে তখন ছিলেন বিখ্যাত রেস্লিং প্রোমোটার জিম কর্নেট। WWE ২০০৪ সালে একজন আরব-আমেরিকান চরিত্রের খোঁজে OVWতে আসে, তাদের কাছে মনে হয়েছিলো তখন WWEএর সকল বেইবিফেইস রেস্লারেরাই অ্যামেরিকান হওয়ায়, "দি আয়রন শেইক"এর মতো নতুন একজন আরব-অ্যামেরিকান রেস্লার, দর্শকদের কাছে ভালো হিল হতে পারবে। বলাই বাহুল্য, মার্ক তখন সাধারন রেস্লারের গিমিকেই আছেন, তিনি নিজেও একজন সাধারন অ্যামেরিকান, আরবদেশীয়ও নন। কিছুদিন আগেই মার্ক জনি জেটারকে (WWE এর স্পিরিট স্কোয়াডের জনি) হারিয়ে OVW চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন, তাই কর্নেট ভেবেচিন্তে মার্ককেই এই ভুমিকার জন্য প্রেফার করলেন। WWE খুশীমনে আরব-অ্যামেরিকান ভুমিকার জন্য মার্ক কোপানিকেই নির্বাচন করলো।
WWEতে তাকে প্রথম দেখা যায় ২০০৪ সালে মুহাম্মদ হাসান নামে, সাথে ছিলো তার তখনকার ম্যানেজার "খজরো দাইভারি।" রতে মার্ক ডেবিউ করেন ২০০৪এর ডিসেম্বর মাসে, মিক ফলির সাথে একটা ইনরিং সেগমেন্টে। শুরুতেই দর্শকদের থেকে ভয়াবহ রকমের হিট (ঘৃণা) জেনারেট করলেন মার্ক। ৯/১১ এর কল্যানে অ্যামেরিকান দর্শকেরা সেইসময়ে বিশ্বাস করতো, যে মুসলিম জাত মাত্রেই সন্ত্রাসী, এবং খলরিত্রের। মার্ক ডেবিউ করার সময়ে প্রোমোতে বারবারই বলেছেন, যে তিনি একজন মুসলিম অ্যামেরিকান, কিন্তু তাঁর পূর্বপুরুষেরা আরবদেশীয়। তাই অতি অল্পসময়েই দর্শকেরা হাসানের উপরে একেবারে খড়গহস্ত হয়ে উঠলো। এটিটিউড এরার পর এই প্রথম একজন রেস্লার দর্শকদের কাছ থেকে এতো ভয়ঙ্কর এবং বিশাল রিএকশন পেলো। হাসান নিজের যোগ্যতা এবং কিছুটা তাঁর উপরে আরোপিত গিমিকের জোরে হয়ে গেলেন কোম্পানির মেইন হিল।
হাসানকে লাগাতার বিভিন্ন রেস্লারের সাথে ম্যাচ দেওয়া হচ্ছিলো, তিনিও যাদের সাথেই ম্যাচ খেলছিলেন, প্রত্যেকেই ভয়াবহ রকমের চিয়ার পাচ্ছিলো দর্শকদের কাছ থেকে। তখনই ডিসিশন নেওয়া হয় হাসানকে মেইন ইভেন্টে পুশ করার জন্য। হাসান তখন আছে রতে। সেখানে জন সিনা তখন ড্রাফ্ট হয়ে আসা নতুন WWE চ্যাম্পিয়ন, সিনাকে মনে করা হচ্ছে রেস্লিংএর ভবিষ্যৎ। তাকে হারিয়ে তো আর হাসানকে পুশ করা যায় না। তাহলে? উত্তর হলো বাতিস্তা। সে তখন স্ম্যাকডাউনে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন, নগদের মাথায় হাসানকে স্ম্যাকডাউনে ড্রাফ্ট করা হলো। অদ্ভুত ব্যাপার, ব্র্যান্ড চেইঞ্জ করে হাসানের ক্ষতি তো দূরে থাক, উল্টো লাভ হলো। দর্শকেরা যেনো আরও বেশী ক্ষেপে গেলো হাসানের উপরে। আরও হিট পেতে থাকলো হাসান। একজন হিল রেস্লারের মাপকাঠি হলো, সে দর্শকের কাছ থেকে কতোটুকু "বু" পাবে, বা হিট জেনারেট করবে, হাসান হিট জেনারেশনের দিক দিয়ে একেবারে ট্রিপল এইচ, বা রিক ফ্লেয়ারের সমতুল্য হয়ে গেলেন। ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিলো, হাসানকে লিজেন্ড ও বর্ষীয়ান রেস্লারদের সাথে (শন মাইকেলস, হাল্ক হোগান, দি আন্ডারটেইকার) ম্যাচ খেলিয়ে মেইন ইভেন্ট খেলার উপযুক্ত বানিয়ে, অতঃপর সামারস্ল্যামে বাতিস্তার সাথে খেলিয়ে ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েইট চ্যাম্পিয়ন বানানো হবে। তারপর বাতিস্তা ও কোম্পানির অন্যান্য নতুন ফেইসদের সাথে হাসানের ফিউড হবে, এবং হাসান একটা মেইন ইভেন্টার হবে যাবেন।
জুলাই ৪, ২০০৫, নয়দিন পরে আন্ডারটেইকারের সাথে দ্যা গ্রেট অ্যামেরিকান ব্যাশে মুহাম্মদ হাসানের ম্যাচ। হাসান যেই ম্যাচটা জিতে পরে বাতিস্তাকে ওয়ার্ল্ড টাইটেলের জন্য চ্যালেঞ্জ করবে। সেদিন স্ম্যাকডাউনে দাইভারির সাথে আন্ডারটেইকারের ম্যাচ। আন্ডারটেইকার সহজেই জিতলেন, কিন্তু ম্যাচ শেষ হওয়ার পর দেখা গেলো এক আজব দৃশ্য। হাসান আন্ডারটেইকারকে আক্রমন করার কোনো চেষ্টাই করলেন না, তাকে দেখা গেলো রিং এনট্রান্সের সামনে নামাজ পড়ার ভঙ্গীতে বসে পড়তে। WWEএর কথামতো মার্ক তাঁর গিমিককে আরও পাকাপোক্ত করছেন। হঠাৎ কোথা থেকে কিছু স্কি মাস্ক পরা মুখোশধারী এসে আন্ডারটেইকারকে ঘিরে ফেললো। তাদের পরনে কালো জামা, এবং ক্যামোফ্লাজ প্যান্ট। তারা এসে মারধর দিয়ে আন্ডারটেইকারকে পেড়ে ফেললো, তারপরে হাসান ধিরেসুস্থে ক্যামেল ক্লাচ দিয়ে স্ম্যাকডাউন শেষ করলো। WWE বুঝতেই পারলোনা এই সেগমেন্টএর মধ্য দিয়ে তাদের, আর মার্কের কতোবড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
তিনদিন পরই লন্ডনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো। জানা গেলো, সেই ঘটনা মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের কাজ। "নিউ ইয়র্ক পোস্ট"এ বলা হয়েছে, হামলাকারীরা ছিলো, "স্কি মাস্ক পরা কিছু আরবদেশীয়।" WWE এর নেটওয়ার্ক চ্যানেল ইউপিএন ভয় পেয়ে হাসানের সেই সেগমেন্ট প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জানালো। WWE মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। এতো যত্ন করে গড়ে তোলা মুহাম্মদ হাসান ক্যারেক্টার না শেষ পর্যন্ত তাদের জেলের ভাত খাওয়ায়। সাধারন দর্শকেরা এতোকিছু বুঝতেন না, তাঁরা মনে করলেন মুহাম্মদ হাসান ওই সন্ত্রাসীদলেরই সদস্য। হাসানকে দর্শকদের সামনে আবার উপস্থাপন করাটাকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলো ইউপিএনের কাছে।
WWE হাসানকে সবধরনের কার্যক্রম থেকে দূরে রাখলো। পরের সপ্তাহের রতে এই নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা হলো না। সেই সপ্তাহের স্ম্যাকডাউনেও হাসানকে দেখা গেলো না। তাঁর পরিবর্তে তাঁর একজন আইনজীবীকে দেখা গেলো, যিনি এসে একটা প্রমোতে বললেন, "লন্ডনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে হাসানকে সংশ্লিষ্ট করায় হাসান মর্মাহত, এবং দর্শকদের তাঁর প্রতি ধারনা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তিনি স্ম্যাকডাউনে ব্যাক করবেন না।" WWE তখনও মর্মান্তিক সিদ্ধান্তটি নেয় নি। তখনও কোনোভাবে ব্যাপারটিকে মেরামত করে হাসানকে বাঁচানোর চেষ্টাই করছিলো WWE। হাসান WWEএর কাছে দায়বদ্ধ থাকায় ক্যারেক্টারের মধ্যে থেকেই দর্শকদের কাছে আকুতি জানালেন, তিনি শুধুই একজন প্রো-রেস্লার, কোনোরকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে তাঁকে না জড়ানোর অনুরোধ জানালেন দর্শকদের কাছে। কিন্তু অ্যামেরিকানরা তখন দেশপ্রেমে ফেটে পড়ছে, কোনো ওজর আপত্তিই টিকলো না তাদের কাছে। ইন্টারনেট ব্লগে, হাসান থাকলে প্রয়োজনে WWE বয়কট করার সিদ্ধান্ত জানালো কিছু এঁচোড়ে পাকা অ্যামেরিকান ফ্যানেরা। কাজেই WWE এর কাছে আর কোনো উপায়ই থাকলো না।
২০০৫ এর গ্রেট অ্যামেরিকান ব্যাশে স্টোরিলাইনে পরিবর্তন এনে আন্ডারটেইকার হারিয়ে দিলেন মুহাম্মাদ হাসানকে। তারপর অ্যামেরিকানদের জাতিগত সৌহার্দের স্বার্থে হাসানকে লাস্ট রাইড দিয়ে স্টেজের বাইরে ছুড়ে ফেলা হলো, যেনো হাসানরূপী মার্ক কোপানির ভাগ্যটিও একইভাবে স্টেজ থেকে নিচে পড়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেলো। হারিয়ে গেলেন মার্ক কোপানি। বাতিস্তাকে চ্যালেঞ্জ করাও হয়ে উঠলো না, হলো না সর্বকনিষ্ঠ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়াও। মার্ক কোপানিকে সেদিনের পর থেকে আর কোনো রেস্লিং কোম্পানিতে দেখা যায় নি। পারিপার্শ্বিকতার বেড়াজালে এতো উঁচু থেকে এভাবে নিচে পড়ে স্বপ্ন ভেঙে চুরচুর হওয়া মেনে নিতে পারলেন না মার্ক। অভিমানি কোপানি রিটায়ার করলেন সকল রকম রেস্লিং থেকে। WWE এর মার্কের মাথায় হাত বুলানোর মতো সময় ছিলো না, তারা তখন নতুন ভিলেন খুঁজে বের করতে ব্যস্ত।
রেস্লিং থেকে রিটায়ার করার পর মার্ক কোপানি কিছুদিন হলিউডে পার্শ্বঅভিনেতার কাজ করেছেন, সেখানে সুবিধা করতে না পেরে তিনি বর্তমানে হ্যানিবাল স্কুলে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর কাছে কখনও রেস্লিংএ ফিরে আসবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি হাসিমুখে না ফেরার কথা জানান। কোপানির অভিমান কি অযৌক্তিক? তিনি নিজে একজন অ্যামেরিকান, থাকেন অ্যামেরিকায়, তাঁর দেশের ভাইয়েরাই তাঁর সাথে যা করেছে, এতে কোপানির কতোটা ক্ষতি হয়েছে, সেটা যারা এই পোস্ট পড়ছেন, তাঁরা জানেন। এখনো পর্যন্ত আমরা জানি, র্যা নডি অরটন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন (ব্রক লেজনার সর্বকনিষ্ঠ WWE চ্যাম্পিয়ন), হয়তো আমরা এতোদিনে সামারস্ল্যাম ২০০৪এর সেই কীর্তি ভুলে, সামারস্ল্যাম ২০০৫এ মুহাম্মদ হাসানের কীর্তি নিয়ে আলোচনা করতাম, কারন বাতিস্তাকে হারিয়ে হাসান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হলে তিনিই হতেন সর্বকনিষ্ঠ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন, তাঁর বয়স তখন র্যাওনডির থেকেও কম। সকল রকমের পটেনশিয়ালিটি এবং উপযোগিতা থাকার পরেও শুধুমাত্র ভাগ্য ও পারিপার্শ্বিকতার দোষে সবকিছু হারালেন মার্ক, আমরাও হারালাম সম্ভবত WWE ইতিহাসের সেরা হিল রেস্লারকে।
Credit : AB Hasan Chowdhury