আসল নাম

Steven James Anderson

জন্মদিন

১৮ই ডিসেম্বর, ১৯৬৪

জন্মস্থান

Austin, Texas, US

বাসস্থান

California, US

উচ্চতা

৬  ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮  মি)

ওজন

১১৪ কেজি (২৫২ পাউন্ড) 

ট্রেনার

Chris Adams

অভিষেক

৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯

অবসর

৩০ মার্চ, ২০০৩


যদি প্রশ্ন করা হয় অ্যাটিটিউড এরার তারকা কারা, আপনারা বলবেন শন মাইকেলস, কেইন, দ্যা রক, ম্যানকাইন্ড, দি আন্ডারটেকার, ভিন্স ম্যাকম্যান, দ্যা বিগ শো এবং কার্ট এঙ্গেল। যদি প্রশ্ন করা হয় এটিচুড ইরারর সবচেয়ে বড় তারকা কে? তাহলে আমার মনে হয় সবাই এক বাক্যে একটি নামই বলবে টেক্সাস র‍্যাটল স্নেক স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন। স্টিভ অস্টিন যে দারুণ জনপ্রিয় একজন রেসলার তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

একবার তারকাদের জনপ্রিয়তার উপর এক জরীপ চালান হয়। জরীপে প্রশ্ন ছিল চলচ্চিত্র, টেলেভিশন, সঙ্গীত, ক্রীড়া, মডেলিং-এই শাখাসমূহে বিচরণকারী নারী-পুরুষদের মাঝে আপনার প্রিয় তারকা কে? ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রাপ্ত সেসব উত্তর যখন গ্ণনা করা হল, দেখা গেল এসেছে স্টিভ অস্টিনের নাম। প্রতিযোগিতা আয়োজনকারীদের কাছে এই ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এতেই প্রমাণিত হয় এটিচুড ইরাতে কি পরিমাণ জনপ্রিয় ছিলেন স্টিভ অস্টিন।

♦ ব্যক্তিগত জীবন : 

ব্যক্তিগত জীবনে অস্টিন অত্যন্ত রগচটা। এই কারণে হয়ত তার বৈবাহিক জীবনগুলি তেমন সফল হয়নি। তবে তার চতুর্থ স্ত্রী ক্রিস্টিন ফেরেসের সাথে বর্তমানে সুখেই দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা যায়। রকের মত স্টিভো রূপালী পর্দায় অভিনয়ে করেছেন। তবে রকের মত সফল না হলেও, তার ঝুড়িতে দি এক্সপেন্ডেব্লস এর মত তারকাবহুল ব্যবসায় সফল ছবি আছে। কেভিন ন্যাশের সাথে তার বন্ধুত্ব রয়েছে। তার করা মুভির মধ্যে দ্যা কনডেমন্ড (২০০৭), ড্যামেজ (২০০৯), দি এক্সপেন্ডেব্লস (২০১০) উল্লেখযোগ্য।

♦ রেসলিং-এ আসার আগের জীবন : 

অস্টিনের প্রথম দিকের জীবনের কাহিনীটি কিন্তু এত মসৃণ ছিল না। পেশাদার রেসলিংএ যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত অস্টিন তার জন্মভূমি টেক্সাসেই থাকতেন। সেখানে তিনি ডকে লোডিং-আনলোডিং এর কাজ করতেন। এ কাজটি যে তিনি খুব আনন্দের সাথে করতেন, তা নয়। আসলে তখন তার ছাত্রজীবন মাত্র শেষ হয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন ভাল ফুটবলার ছিলেন। ফুটবলার হিসেবে নর্থ টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে একটি স্টাইপেন্ড পেতেন। ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর স্টাইপেন্ড বন্ধ হয়ে গেল। টাকার প্রয়োজন, অগত্যা ডকে অনেকটা শ্রমিকের কাজই শুরু করল। 

এরকম আর্থিক টানাটানির মধ্যেও প্রায়ই ডালাস চলে যেতেন অস্টিন রেসলিং দেখতে। হাতে টাকা না থাকলে টেলেভিশনের পর্দায় দেখতে বসতেন রেসলারদের কর্মকাণ্ড। এ রকমই একদিন কাজ শেষে বসেছেন টিভি পর্দার সামনে, একটি বিজ্ঞাপন তাকে উত্তেজিত করে তুলল।

বিজ্ঞাপনটি ছিল আসলে একটি রেসলিং প্রশিক্ষণকেন্দ্রের। ক্রিস এডামস নামের সেই সময়ের বিখ্যাত এক রেসলার খুলেছেন প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি। নবাগত আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পেশাদার রেসলার বানাতে চান তিনি। অস্টিন যেন এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে খুঁজে পেলেন নিজের পরবর্তী গন্তব্য। পরদিন সকালে আর কাজে গেলেন না। চলে গেলেন ক্রিস এডামসের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। শারীরিক সক্ষমতা তার আগেই ছিল। এবার এর সঙ্গে যোগ দিল কিছু কলা-কৌশল। 

অল্পদিনেই সতীর্থদের তিনি ছাড়িয়ে গেলেন। মাত্র ৫ মাস প্রশিক্ষণের পরে, সেটি ১৯৯০ সালের কথা পেশাদার লড়াইয়ে নামলেন তিনি। এত তাড়াতাড়ি লড়াইয়ে নামার বিষয়টি পছন্দ হয়নি তার গুরু ক্রিস এডামসের, কিন্তু অস্টিনের আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। ক্রিসের বাঁধা তিনি মানতে চাইলেন না। ফলে অনিবার্য বিরোধ, গুরু-সাগরেদের দ্বন্দ্ব। তবে অস্টিন তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। অস্টিনের সিদ্ধান্ত যে কতটা সঠিক ছিল পরে তা আমারা জেনেছি। 

♦ রেসলিং -এর দুনিয়ায় প্রবেশ :

• WCW -তে যোগদান : 

অস্টিন WCW যোগ দেন ১৯৯১ সালে। এখানে তিনি গুরু হিসেবে পান "The One Behind the One in ২১-১" পল হেম্যানকে। অস্টিন WCW তে পাঁচ বছর খেলেন। এসময় তিনি টেলিভিশন চ্যাম্পিয়নশিপ, ইউনাইটেড স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ, এনডব্লিওএ ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়াল্ড ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ প্রভৃতি শিরোপা জিতেন। বিশেষ করে এই সময় প্রয়াত রেসলার ব্রায়ান পিলম্যানের সাথে তার একটি দারুণ ট্যাগ টিম জুটু গড়ে ওঠে। সে সময় এ জুটিকে বিবেচনা করা হত সবচেয়ে দুর্ধর্ষ বলে। '৯৩ সালে এই জুটিই শেন ডগলাস ও রিকি স্টিমবোট জুটিকে হারিয়ে বিশ্ব ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়ন হয়। 

• WCW -থেকে বহিষ্কার : 

এ সময়ই অস্টিনের সাথে WCW কর্তৃপক্ষের একটি বিরোধ সৃষ্টি হয়। অস্টিন খেলতে রিঙে নামতেন কালো প্যান্ট, কালো বুট পরে। কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, রেসলিং এর প্রধান দর্শক যেহেতু টিনেজাররা, তাই একটু চাকচিক্যময় পোশাক পরে রিঙে যাওয়া দরকার। কিন্তু অস্টিন এসব সংস্কার মানতে রাজী নন। অস্টিনের তখন জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।

১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে WCW কর্তৃপক্ষের হাতে একটি সুযোগ তৈরি হল। সেদিন অস্টিন- পিলম্যান জুটি হেরে গেল, শিরোপা হারাল মোটামুটি অখ্যাত এক জুটির কাছে। এর থিক পরের বছরই জাপান সফরে অস্টিনের ট্রাইসেপ ছিঁড়ে যায়। তাকে যেতে হয় অপারেশনের টেবিলে। কিন্তু অপারেশনের পর বিছানায় ছিলেন তিনি যে সামান্য ক'টা দিন, এর মধ্যই WCW কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বাদ দেওয়ার। অতএব WCW এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক বিশপ তাকে কোম্পানী থেকে বহিষ্কার করে।

• WWF -এ যোগদান : 

একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সংগঠন থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর প্রথম কিছুদিন অস্টিন অবশ্য থাকেন কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে। কিন্তু নিজেকে সামলে নেন কিছুদিনের মধ্যেই। প্রচণ্ড এবং নিবিড় অনুশীলনের মাধ্যমে আরও দক্ষতা অর্জন করলেন। বাড়িয়ে তোলেন নিজের আত্মবিশ্বাস। ১৯৯৫-এর শেষ দিকে নিজ যোগ্যতায় চুক্তিবদ্ধ হন তিনি রেসলিং-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ডব্লিউডব্লিউই (তৎকালীন ডব্লিউডব্লিউএফ)-এর সাথে। 

নতুন রেসলিং সার্কিট, নতুন পরিচয়। তার নাম হল রিং মাস্টার। তবে শুরুতেই কিন্তু তাকে সুপারস্টার ক্যাটাগরিতে রাখা হয়নি। অস্টিন নিজেও বুঝতে পারেন, তার যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি এতে। কিন্তু তার আসলে তখন কিছু করার ছিল না। বড় কোন রেসলিং প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটাই ছিল তার মুল লক্ষ্য। তবে তিনি এটিও বুঝতে পেরেছিলেন, যে অবমূল্যায়নের শিকার তিনি হয়েছেন, সেখান থেকে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কেবল তার পক্ষে উত্তরণ সম্ভব। সে চেষ্টাই করতে লাগলেন তিনি ডব্লিউডব্লিউই-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার একেবারে প্রথম দিন থেকে।

• স্টোন কোল্ড নামের রহস্য : 

এবার আসা যাক একটি মজার টপিক্সে। স্টিভ অস্টিন রিং মাস্টার থেকে কিভাবে স্টোন কোল্ড হল এ কৌতূহল অনেকের মাঝে। ঘটনার সময়কাল ১৯৯৫। মাত্রই তিনি যোগ দিয়েছেন ডব্লিউডব্লিউই-এর বর্ণাঢ্য জগতে। রেসলিং জগতে প্রায় সকলেরই একটি করে পেশাগত নাম আছে। প্রায়ই দেখা যায় ঐ পেশাগত নামের আড়ালে রেসলারের পিতৃপ্রদত্ত নামটি হারিয়েই যায় (যেমন- হাল্ক হোগান)। কিন্তু ’৯৫ সাল পর্যন্ত অস্টিনের সেরকম কোন নামই ছিল না। তাই তিনি খুঁজছিলেন একটি জুতসই নাম। 

একদিন বাসায় বসে আলাপ করছিলেন তার তৎকালীন স্ত্রী জেনি ক্লার্ক (রেসলিং ম্যানেজার-রিং নেম লেডি ব্লসম)-এর সাথে। ব্যক্তিগত, পেশাগত অনেক বিষয়ই আসছিল কথাবার্তায়। অস্টিনের সামনে ছিল ধুমায়িত চায়ের কাপ। আলাপে তিনি এতই মশগুল ছিলেন যে, চায়ের কাপে চুমুক দিতেও ভুলে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী ব্ললেন-“চাটুকু খেয়ে নাও, অন্তত এটি পাথরের মত ঠাণ্ডা হওয়ার আগে (Stone cold)।”

উপমাটি অস্টিনের সাথে সাথেই মনে ধরে। ‘স্টোন কোল্ড’-বাহ দারুন তো! নিজের চিন্তার কথাটি জানালেন স্ত্রীকে। তিনিও সম্মতি দিলেন। এভাবেই আমরা পেলাম স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন। স্টোন কোল্ড আর স্টিভ অস্টিন এখন একে অন্যের পরিপূরক। তবে এই নামটির ইতিহাসের সাথে যে ব্যক্তিটির সংশ্লিষ্টতা ছিল অর্থাৎ জেনি ক্লারক-তার স্ত্রী, তার সাথে অস্টিনের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। অস্টিনের জীবনে পরে আরো দু’জন নাড়ি এসেছে, তবে সে আরেক কাহিনী।

• ‘স্টোন কোল্ড’ নামে রিং-এ প্রবেশ : 

‘স্টোন কোল্ড’-এই পেশাদারী নামটি নিয়ে অস্টিন প্রথম রিং-এ নামেন ১৯৯৬ সালে। সে বছর ২৩ জুন রাতে ‘কিং অব দ্যা রিং’ সিরিজে সেমিফাইনালে অস্টিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ‘ওয়াইল্ডম্যান’ মার্ক মেরো। অস্টিন ডব্লিউডব্লিউ-এ নতুন হলেও ততদিনে তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে অনেকেরই একটা ধারণা ছিল। বিপরীত দিকে মার্ক মেরো তো আগে থেকেই বিখ্যাত। ফলে লড়াইটি দারুণ জমবে এমন আশাই ছিল দর্শকদের। শুরু থেকেই দারুণ উত্তেজিত অস্টিন এমন আক্রমণ শুরু করে দিয়েছিলেন যে অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই মার্ক মেরো হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন। ম্যাচের পর দেখা গেল অস্টিনের ঠোঁট কেটে গেছে। নিজের দাঁত লেগেই কেটেছে ঠোঁট, বেশ কয়েকটি সেলাই পর্যন্ত দিতে হয়েছিল সেদিন। এভাবে সেমিফাইনালে জয়ের পর ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আবির্ভূত হন জ্যাক ‘দ্যা স্নেক’ রবারটস। 

রবারটস এমনিতে বেশ জাঁদরেল রেসলার হলেও ফাইনালে নেমেছিলেন কিছুটা শারিরীক সমস্যা নিয়ে। পাঁজরে, ব্যাথা ছিল। সে রাতেই সেমিফানালে ভ্যাডারের সাথে খেলতে গিয়ে আহত হন। লড়াইয়ের সময় এই সুযোগটি পুরোপুরি ব্যবহার করেন অস্টিন। বারবার রবারটসের পাজ্রেই আঘাত করতে থাকেন তিনি। ফলে বেশি সময় লাগেনি তার ‘কিং অব দ্যা রিংস’ শিরোপাটি জিততে। তার এই বিজয় যে নিছক দুর্ঘটনা ছিল না, তা প্রমাণ করেন তিনি পরবর্তী কয়েক মাসে। এ সময় তার কাছে কুপোকাত হন মার্ক মেরো, ইয়াকুজুনার মত তারকারা।

• প্রথম অগ্নিপরীক্ষা :

১৯৯৭ সালের শুরুর দিকে প্রথমবারের মতো এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় স্টোন কোল্ডকে। ব্যাপক জনপ্রিয় রয়েল রাম্বল সিরিজে আরও ২৯ সুপারস্টার রেসলারের সাথে রিং-এ ওঠার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। এই ফরম্যাটের খেলার নিয়ম হল, রিং-এর টপ রোপের উপর দিয়ে কোন একজনকে বাইরে ফেলে দিলে সে আর রিং-এ প্রবেশ করতে পারবে না। এভাবে, সবশেষে যিনি টিকে থাকবেন রিং-এ, তিনিই হবেন রয়েল রাম্বল। 

জনপ্রিয় রেসলার ব্রেট হাট, অস্টিনকে ফেলে দিলেও, রেয়াফারির চোখকে ফাকি দিয়ে তিনি আবার রিং-এ প্রবেশ করেন এবং সেই ব্রেট হাটকে ফেলে দিয়ে সে বছরের রয়েল রাম্বল বিজয়ী হন। ফলে শুরু হয় বিখ্যাত ব্রেট-অস্টিন রাইভালি। ডব্লিউডব্লিউ-এ এ দু’জন প্রথম মুখোমুখি হন ১৯৯৬ সালে-সারভাইভার সিরিজে। সেখানে অস্টিনের পরাজয় ঘটে। এর দু’মাস পরে ’৯৭ সালের শুরুর দিকে রয়েল রাম্বলে ব্রেটকে হারিয়ে অস্টিন তার প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু ব্রেট-অস্টিনের ফিউড তখন মাত্র শুরু। 

রেসল্ম্যানিয়া-১৩ এ দু’জনের মধ্যে এবার আয়োজন করা হল একটি সাবমিশন ম্যাচ। কোন পিনফল হবে না। এ লড়াইটি হয় রক্তক্ষয়ী। হাট রিংবেল দিয়ে অস্টিনকে আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। শুরু হয় দারুণ রক্তপাত। কিন্তু অস্টিন দমবার পাত্র নন। ফলে অতিথি রেফারি কেন শ্যামরক টেকনিক্যাল কারন দেখিয়ে লড়াই থামিয়ে দেন এবং ব্রেটকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। রক্তাক্ত অস্টিন যখন কারো সাহায্য ছাড়াই রিং ছাড়েন তখন গ্যালারি জুড়ে শুধু অস্টিন আর অস্টিন। মজার ব্যাপার ব্রেট রিঙে প্রবেশ করেছিলেন ফেস আর অস্টিন হিল হিসেবে। কিন্তু প্রস্থানের সময় থিক এর উল্টোটি ঘটে। এই দু’জনের মাঝে পরে আরও লড়াই হয় এবং অস্টিন পুরো হাট খান্দানের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পরেন।

• প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ :

ডব্লিঊডব্লিঊই-এ কোন চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্টের জন্য অস্টিন প্রথম অংশ নেন ১৯৯৭ সালের মে মাসের In Your House ১৫: A Cold Day in Hell পিপিভিটিতে। লড়াইটা ছিল আন্ডারটেকারের সাথে। দর্শকরা সবাই দেখেছে কি দারুনভাবে তিনি নাকাল করেছেন টেকারকে। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি তিনি। অস্টিন, টেকারকে স্টানার মেরে ধরাশায়ী করেন, কিন্তু তিন পর্যন্ত গোনার আগেই তার এক সময়ের পার্টনার ব্রায়ান পিলম্যান তড়িঘড়ি করে বেল বাজিয়ে দেন। ফলে অস্টিন বিভ্রান্ত হন, আর এ সুজোগে টেকার টম্বস্টোনের সাহায্যে ম্যাচটি জিতে নেয়। ফলে হাট ফাউন্ডেশনের সাথে সাথে পিলম্যানের সাথেও অস্টিনের বৈরিতা তৈরি হয়। 

সে মাসেই, ২৫মে, ট্যাগটিম চ্যাম্পিয়নশিপে ওয়েন এবং বুলডগকে পেলেন তিনি। এ জুটির বিরুদ্ধে লড়তে সঙ্গে নিলেন আরেক জনপ্রিয় রেসলার শন মাইকেলসকে। জয়ী হলেন তারা আর এটাই ছিল ডব্লিঊডব্লিঊই-এ অস্টিনের পাওয়া কোন গোল্ডের প্রথম স্বাদ। ১৯৯৭ সালে সামারস্লামে অস্টিন ইন্টারকন্টিন্যান্টাল চ্যামিয়নশিপ বেল্টের জন্য ডেফেন্ডিং চ্যামিয়ন ওয়েন হাটের মোকাবিলা করেন। ম্যাচটিতে এক মজার স্টিপুলেশন ছিল। যদি অস্টিন হারে, তবে তাকে ওয়েনের নিতম্বে চুমু খেতে হবে। 

ম্যাচের এক পর্যায়ে ওয়েন, অস্টিনকে পিল্ড্রাইভার দিলে, অস্টিন মারত্মকভাবে আহত হন। দর্শকদের সবাই যখন ভাবছিলেন, ওয়েনের জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখন অস্টিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে ম্যাচটি জিতে যান। তবে এর জন্য তাকে ভুগতে হয়। ইনজুরির কারণে তার থেকে ইন্টারকন্টিন্যান্টাল এবং ট্যাগ টীম চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট কেড়ে নেওয়া হয় এবং সারভাইভার সিরিজের আগ পর্যন্ত সাইড লাইনে বসিয়ে রাখা হয়। সাভভাইভার সিরিজে অস্টিন, ওয়েনের বিপক্ষে আবার ইন্টারকন্টিন্যান্টাল চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্টের জন্য লড়াই করেন এবং জয়ী হন।

• অস্টিনের সঙ্গে ভিন্সের বিরোধীতা :

সে সময়ের আরেক উঠটি জনপ্রিয় তারকা ‘দ্যা রক’। এদের যে কোন একজনের লড়াই থাকলে টিকেট চলে যায় কালোবাজারে। আর দু’জনের পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়লে তো কথাই নাই। ডব্লিঊডব্লিঊই এই সুযোগটিই নেওয়ার চেষ্টা করল। 

D-Generation X: In Your House পিপিভিতে অস্টিন আর রক পরস্পরের মোকাবিলা করেন। লড়াইতে অস্টিন জয়ী হন। ডব্লিঊডব্লিঊ কর্তৃপক্ষ ঐ ম্যাচটির পরের রাতেই আবার তাদের মাঝে লড়াইয়ের আয়োজন করেন। কারণ হিসেবে দাঁড় করান হয় যে, চ্যাম্পিয়নশীপ ম্যাচটিতে অস্টিন জয়ী হওয়ার জন্য তার পিকাপ-ট্রাকের সাহায্য নিয়েছিলেন। বেঁকে বসলেন অস্টিন।। তার প্রশ্ন-এ কেমন কথা? মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যব্ধানে এরকম দু’টি বড় লড়াই কি করে সম্ভব! ডব্লিঊডব্লিঊ-এর এক কথা- লড়তে হবে, যদি শিরোপা রাখতে চাও। অস্টিন রাজী হলেন না। ফলে শিরোপা কেড়ে নেওয়া হল। আর অস্টিন জড়িয়ে পড়লেন ডব্লিঊডব্লিঊ-এর সাথে এক নৈতিক লড়াইয়ে।

স্টিভ অস্টিনের সাথে অন্য তারকা রেসলারদের মৌলিক একটা পার্থক্য আছে। তিনি কেবল রিং-এর ভিতরেই লড়াই করেন না, রিং-এর বাইরেও লড়াইয়ে আপসহীন। এ লড়াই শারীরিক নয় কেবল, নৈতিকও। যে ডব্লিউডব্লিউই-এর প্ল্যাটফর্মে লড়ে এসেছেন তিনি খ্যাতির পাদপ্রদীপে, তারই কর্ণধারের সাথে বিরোধের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় তার নৈতিক লড়াইয়ের স্বরূপটি। 

ঘটনাটি ১৯৯৮ সালের। রয়েল র্যাম্বল জয়ের মাধ্যমে স্টোন কোল্ড স্টভ অস্টিন তখন দর্শকদের দারুণ পছন্দের। এ সময়েই তিনি নির্বাচিত হলেন তিনি চতুর্দশ রেসলম্যানিয়ার মেন ইভেন্টের জন্য। এতে বিজয়ী হতে পারলেই ডব্লিউডব্লিউই-এর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ খেতাবটি তার করায়ত্ত হয়। আসন্ন সে লড়াইয়ে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা রেসলার শন মাইকেলস। 

লড়াইটির বিষয়ে দর্শকদের মাঝে অতিরিক্ত আগ্রহ সৃষ্টি করতে ঘোষণা করা হল, সেদিন রিং-এ মাইক টাইসন উপস্থিত থাকবেন। এভাবে সবকিছু যখন ঠিকঠাক, স্টিভ অস্টিন কঠোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন লড়াইয়ের, তখনই দেখা দিল বিপত্তি। ডব্লিউডব্লিউই-এর মালিক ভিন্স ম্যাকম্যান জানালেন, তিনি অস্টিনকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে চান না। ভিন্স এ কথা বলল খোদ স্টিভকে। স্টিভের তখন অবাক হওয়ার পালা,-বলে কি লোকটি! তিনি অবশ্য জান্তেন-আগেও এরকম অনেক হয়েছে। রিং-এর বাইরে থেকে ভিন্স নিয়ন্ত্রণ করেছেন অনেক লড়াই।

• অ্যাটিটিউড এরার জন্ম :

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেক রেসলারই নতি স্বীকার করেছেন ভিন্সের অন্যায় আবদারের কাছে। ভিন্স এ ধরণের কাজ যে করতেন মুলত তার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে-তা বলা যায় নি:সন্দেহে। এর আগে প্রতিবারই তার এই অন্যায় ইচ্ছার জয় হলেও এবার বাধাপ্রাপ্ত হলেন স্টিভের কাছে। স্টিভ অন্যায় সে প্রস্তাব মানলেন তো না-ই, লড়াইয়ের দিন দেখা গেল তাকে মরিয়া ভঙ্গিতে। শন মাইকেলস লড়াইয়ে কেবল পরাজিতই হলেন না, কিছুটা আহত হয়েই তাকে রিং ত্যাগ করতে হল। ভিন্সের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই চ্যাম্পিয়ন হলেন স্টিভ অস্টিন। শুরু হল এক নতুন ইরা। অস্টিন ইরা তথা অ্যাটিটিউড ইরা। 

নতুন চ্যাম্পিয়নের সাথে ভিন্সের সম্পর্ক হল অত্যন্ত শীতল। তার চেষ্টা থাকল স্টিভকে জব্দ করার। সে অনুযায়ী প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করালেন এক সময়ের স্টিভের ট্যাগ টীম পার্টনার ডুড লাভ (মিক ফোলী)’কে। ’৯৮ এর এপ্রিল ও মে মাসে পরপর দু’বার মুখোমুখি হলেন তিনি স্টিভের সাথে, পরাজিত হলেন দু’বারই। এরপর ভিন্স নিয়ে আসলেন কেইনকে। ১৯৯৮ সালের কিং অব দ্যা রিং-এর ঐ টুর্নামেন্টে ম্যানকাইন্ড ও আন্ডারটেকারের হস্তক্ষেপে স্টিভ ম্যাচটি হেরে যায়। ম্যাচটি ছিল ফাস্ট ব্লাড ম্যাচ। তবে একদিন পরেই র ইজ ওয়্যারে শিরোপা উদ্ধার করেন স্টিভ।

স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন এবং ডব্লিউডব্লিউই-এর কর্ণধার মি. ভিন্সেন্ট কেনেডি ম্যাকম্যানের মাঝে ব্যক্তিত্বের লড়াই মোটামুটি কিংব্দন্তিতুল্য। আর তাদের এই লড়াই দর্শকদের দিয়েছে চরম আনন্দের খোরাক। ম্যাকম্যান, স্টিভকে দমাতে এক একে মিক ফোলি, কেইন, আন্ডারটেকার, বিগ শো, বিগ বসম্যান, ট্রিপল এইচ কতজনকেই না এনেছেন। কিন্তু কেউই দমাতে পারেনি অদম্য এই রেসলারকে।

• রেসলিং থেকে অবসর :

শুধু একজন। হ্যাঁ, একজন পেরেছিল অস্টিনেকে কিছুটা বিপাকে ফেলতে। বলুন তো কে সে? তিনি আর কেউ নন, আমাদের অতি প্রিয় রেসলার দ্যা রক। অবসরের আগে শেষ ম্যাচটিও তিনি খেলেছেন এই রকের সাথে রেসলম্যানিয়া-১৯ এ, যেখানে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।

আর যে ভিন্সের সাথে ম্যাকম্যানের পর্দায় দা-কুমড়ো সম্পর্ক, স্টিভ অস্টিন তার ক্যারিয়ারের সকল প্রকার সফলতার জন্য মি. মিকম্যানকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলেননি। এটাই আসল! ব্যবসায়ের জায়গায় ব্যবসা, আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গায় ব্যক্তিগত সম্পর্ক। আর অস্টিন যে কত বড় তারকা ছিল তার প্রমান ডব্লিউডব্লিউই হল অব ফেম (ক্ল্যাস ২০০৯)। ঐ আসরে তাকে এ সম্মানে ভূষিত করেন ডব্লিউডব্লিউই কর্ণধার মি. ম্যাকম্যান স্বয়ং।

♦ রেসলিং জগতে অর্জন সমূহ :

Pro Wrestling Illustrated

Feud of the Year (১৯৯৮, ১৯৯৯) vs. Vince McMahon

Match of the Year (১৯৯৭) vs. Bret Hart in a submission match at WrestleMania ১৩

Most Hated Wrestler of the Year (২০০১)

Most Popular Wrestler of the Year (১৯৯৮)

Rookie of the Year (১৯৯০)

Wrestler of the Year (১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০১)

Ranked No. ১ of the top ৫০০ singles wrestlers in the PWI ৫০০ in ১৯৯৮ and ১৯৯৯

Ranked No. ১৯ of the top ৫০০ singles wrestlers of the PWI Years in ২০০৩

Ranked No. ৫০ of the top ১০০ tag teams of the PWI Years with Brian Pillman in ২০০৩

Stanley Weston Award (২০১৯)

Professional Wrestling Hall of Fame

Class of ২০১৬

World Championship Wrestling

WCW World Television Championship (২ বার)

WCW United States Heavyweight Championship (২ বার)

WCW World Tag Team Championship (১ বার) – with Brian Pillman

NWA World Tag Team Championship (১ বার) – with Brian Pillman

World Wrestling Federation/World Wrestling Entertainment/WWE

WWF Championship (৬ বার)

WWF Intercontinental Championship (২ বার)

Million Dollar Championship (১ বার)

WWF Tag Team Championship (৪ বার) – with Shawn Michaels (১), Dude Love (১), The Undertaker (১), and Triple H (১)

King of the Ring (১৯৯৬)

Royal Rumble (১৯৯৭, ১৯৯৮, ২০০১)

WWE Hall of Fame (Class of ২০০৯)

Fifth Triple Crown Champion

Slammy Award

Freedom of Speech (১৯৯৭)

Best Original WWE Network Show – Stone Cold Podcast (২০১৫)

Wrestling Observer Newsletter

Best Box Office Draw (১৯৯৮, ১৯৯৯)

Best Brawler (২০০১)

Best Gimmick (১৯৯৭, ১৯৯৮)

Best Heel (১৯৯৬)

Best on Interviews (১৯৯৬

Best Non-Wrestler (২০০৩)

Feud of the Year (১৯৯৭) vs. The Hart Foundation

Feud of the Year (১৯৯৮, ১৯৯৯) vs. Vince McMahon

Match of the Year (১৯৯৭) vs. Bret Hart in a submission match at WrestleMania ১৩

Most Charismatic (১৯৯৭, ১৯৯৮)

Rookie of the Year (১৯৯০)

Tag Team of the Year (১৯৯৩) with Brian Pillman as The Hollywood Blonds

Worst Worked Match of the Year (১৯৯১) with Terrance Taylor vs. Bobby Eaton and P.N. News in a Scaffold match at The Great American Bash

Wrestler of the Year (১৯৯৮)

Wrestling Observer Newsletter Hall of Fame (Class of ২০০০)

 
• লেখক ঃ শাফকাত নাওয়াজ গুড্ডু।

STONE COLD STEVE AUSTIN : স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন


আসল নাম

Steven James Anderson

জন্মদিন

১৮ই ডিসেম্বর, ১৯৬৪

জন্মস্থান

Austin, Texas, US

বাসস্থান

California, US

উচ্চতা

৬  ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮  মি)

ওজন

১১৪ কেজি (২৫২ পাউন্ড) 

ট্রেনার

Chris Adams

অভিষেক

৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯

অবসর

৩০ মার্চ, ২০০৩


যদি প্রশ্ন করা হয় অ্যাটিটিউড এরার তারকা কারা, আপনারা বলবেন শন মাইকেলস, কেইন, দ্যা রক, ম্যানকাইন্ড, দি আন্ডারটেকার, ভিন্স ম্যাকম্যান, দ্যা বিগ শো এবং কার্ট এঙ্গেল। যদি প্রশ্ন করা হয় এটিচুড ইরারর সবচেয়ে বড় তারকা কে? তাহলে আমার মনে হয় সবাই এক বাক্যে একটি নামই বলবে টেক্সাস র‍্যাটল স্নেক স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন। স্টিভ অস্টিন যে দারুণ জনপ্রিয় একজন রেসলার তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

একবার তারকাদের জনপ্রিয়তার উপর এক জরীপ চালান হয়। জরীপে প্রশ্ন ছিল চলচ্চিত্র, টেলেভিশন, সঙ্গীত, ক্রীড়া, মডেলিং-এই শাখাসমূহে বিচরণকারী নারী-পুরুষদের মাঝে আপনার প্রিয় তারকা কে? ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রাপ্ত সেসব উত্তর যখন গ্ণনা করা হল, দেখা গেল এসেছে স্টিভ অস্টিনের নাম। প্রতিযোগিতা আয়োজনকারীদের কাছে এই ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এতেই প্রমাণিত হয় এটিচুড ইরাতে কি পরিমাণ জনপ্রিয় ছিলেন স্টিভ অস্টিন।

♦ ব্যক্তিগত জীবন : 

ব্যক্তিগত জীবনে অস্টিন অত্যন্ত রগচটা। এই কারণে হয়ত তার বৈবাহিক জীবনগুলি তেমন সফল হয়নি। তবে তার চতুর্থ স্ত্রী ক্রিস্টিন ফেরেসের সাথে বর্তমানে সুখেই দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা যায়। রকের মত স্টিভো রূপালী পর্দায় অভিনয়ে করেছেন। তবে রকের মত সফল না হলেও, তার ঝুড়িতে দি এক্সপেন্ডেব্লস এর মত তারকাবহুল ব্যবসায় সফল ছবি আছে। কেভিন ন্যাশের সাথে তার বন্ধুত্ব রয়েছে। তার করা মুভির মধ্যে দ্যা কনডেমন্ড (২০০৭), ড্যামেজ (২০০৯), দি এক্সপেন্ডেব্লস (২০১০) উল্লেখযোগ্য।

♦ রেসলিং-এ আসার আগের জীবন : 

অস্টিনের প্রথম দিকের জীবনের কাহিনীটি কিন্তু এত মসৃণ ছিল না। পেশাদার রেসলিংএ যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত অস্টিন তার জন্মভূমি টেক্সাসেই থাকতেন। সেখানে তিনি ডকে লোডিং-আনলোডিং এর কাজ করতেন। এ কাজটি যে তিনি খুব আনন্দের সাথে করতেন, তা নয়। আসলে তখন তার ছাত্রজীবন মাত্র শেষ হয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন ভাল ফুটবলার ছিলেন। ফুটবলার হিসেবে নর্থ টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে একটি স্টাইপেন্ড পেতেন। ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর স্টাইপেন্ড বন্ধ হয়ে গেল। টাকার প্রয়োজন, অগত্যা ডকে অনেকটা শ্রমিকের কাজই শুরু করল। 

এরকম আর্থিক টানাটানির মধ্যেও প্রায়ই ডালাস চলে যেতেন অস্টিন রেসলিং দেখতে। হাতে টাকা না থাকলে টেলেভিশনের পর্দায় দেখতে বসতেন রেসলারদের কর্মকাণ্ড। এ রকমই একদিন কাজ শেষে বসেছেন টিভি পর্দার সামনে, একটি বিজ্ঞাপন তাকে উত্তেজিত করে তুলল।

বিজ্ঞাপনটি ছিল আসলে একটি রেসলিং প্রশিক্ষণকেন্দ্রের। ক্রিস এডামস নামের সেই সময়ের বিখ্যাত এক রেসলার খুলেছেন প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি। নবাগত আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পেশাদার রেসলার বানাতে চান তিনি। অস্টিন যেন এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে খুঁজে পেলেন নিজের পরবর্তী গন্তব্য। পরদিন সকালে আর কাজে গেলেন না। চলে গেলেন ক্রিস এডামসের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। শারীরিক সক্ষমতা তার আগেই ছিল। এবার এর সঙ্গে যোগ দিল কিছু কলা-কৌশল। 

অল্পদিনেই সতীর্থদের তিনি ছাড়িয়ে গেলেন। মাত্র ৫ মাস প্রশিক্ষণের পরে, সেটি ১৯৯০ সালের কথা পেশাদার লড়াইয়ে নামলেন তিনি। এত তাড়াতাড়ি লড়াইয়ে নামার বিষয়টি পছন্দ হয়নি তার গুরু ক্রিস এডামসের, কিন্তু অস্টিনের আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। ক্রিসের বাঁধা তিনি মানতে চাইলেন না। ফলে অনিবার্য বিরোধ, গুরু-সাগরেদের দ্বন্দ্ব। তবে অস্টিন তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। অস্টিনের সিদ্ধান্ত যে কতটা সঠিক ছিল পরে তা আমারা জেনেছি। 

♦ রেসলিং -এর দুনিয়ায় প্রবেশ :

• WCW -তে যোগদান : 

অস্টিন WCW যোগ দেন ১৯৯১ সালে। এখানে তিনি গুরু হিসেবে পান "The One Behind the One in ২১-১" পল হেম্যানকে। অস্টিন WCW তে পাঁচ বছর খেলেন। এসময় তিনি টেলিভিশন চ্যাম্পিয়নশিপ, ইউনাইটেড স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ, এনডব্লিওএ ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়াল্ড ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ প্রভৃতি শিরোপা জিতেন। বিশেষ করে এই সময় প্রয়াত রেসলার ব্রায়ান পিলম্যানের সাথে তার একটি দারুণ ট্যাগ টিম জুটু গড়ে ওঠে। সে সময় এ জুটিকে বিবেচনা করা হত সবচেয়ে দুর্ধর্ষ বলে। '৯৩ সালে এই জুটিই শেন ডগলাস ও রিকি স্টিমবোট জুটিকে হারিয়ে বিশ্ব ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়ন হয়। 

• WCW -থেকে বহিষ্কার : 

এ সময়ই অস্টিনের সাথে WCW কর্তৃপক্ষের একটি বিরোধ সৃষ্টি হয়। অস্টিন খেলতে রিঙে নামতেন কালো প্যান্ট, কালো বুট পরে। কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, রেসলিং এর প্রধান দর্শক যেহেতু টিনেজাররা, তাই একটু চাকচিক্যময় পোশাক পরে রিঙে যাওয়া দরকার। কিন্তু অস্টিন এসব সংস্কার মানতে রাজী নন। অস্টিনের তখন জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।

১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে WCW কর্তৃপক্ষের হাতে একটি সুযোগ তৈরি হল। সেদিন অস্টিন- পিলম্যান জুটি হেরে গেল, শিরোপা হারাল মোটামুটি অখ্যাত এক জুটির কাছে। এর থিক পরের বছরই জাপান সফরে অস্টিনের ট্রাইসেপ ছিঁড়ে যায়। তাকে যেতে হয় অপারেশনের টেবিলে। কিন্তু অপারেশনের পর বিছানায় ছিলেন তিনি যে সামান্য ক'টা দিন, এর মধ্যই WCW কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বাদ দেওয়ার। অতএব WCW এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক বিশপ তাকে কোম্পানী থেকে বহিষ্কার করে।

• WWF -এ যোগদান : 

একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সংগঠন থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর প্রথম কিছুদিন অস্টিন অবশ্য থাকেন কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে। কিন্তু নিজেকে সামলে নেন কিছুদিনের মধ্যেই। প্রচণ্ড এবং নিবিড় অনুশীলনের মাধ্যমে আরও দক্ষতা অর্জন করলেন। বাড়িয়ে তোলেন নিজের আত্মবিশ্বাস। ১৯৯৫-এর শেষ দিকে নিজ যোগ্যতায় চুক্তিবদ্ধ হন তিনি রেসলিং-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ডব্লিউডব্লিউই (তৎকালীন ডব্লিউডব্লিউএফ)-এর সাথে। 

নতুন রেসলিং সার্কিট, নতুন পরিচয়। তার নাম হল রিং মাস্টার। তবে শুরুতেই কিন্তু তাকে সুপারস্টার ক্যাটাগরিতে রাখা হয়নি। অস্টিন নিজেও বুঝতে পারেন, তার যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি এতে। কিন্তু তার আসলে তখন কিছু করার ছিল না। বড় কোন রেসলিং প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটাই ছিল তার মুল লক্ষ্য। তবে তিনি এটিও বুঝতে পেরেছিলেন, যে অবমূল্যায়নের শিকার তিনি হয়েছেন, সেখান থেকে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কেবল তার পক্ষে উত্তরণ সম্ভব। সে চেষ্টাই করতে লাগলেন তিনি ডব্লিউডব্লিউই-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার একেবারে প্রথম দিন থেকে।

• স্টোন কোল্ড নামের রহস্য : 

এবার আসা যাক একটি মজার টপিক্সে। স্টিভ অস্টিন রিং মাস্টার থেকে কিভাবে স্টোন কোল্ড হল এ কৌতূহল অনেকের মাঝে। ঘটনার সময়কাল ১৯৯৫। মাত্রই তিনি যোগ দিয়েছেন ডব্লিউডব্লিউই-এর বর্ণাঢ্য জগতে। রেসলিং জগতে প্রায় সকলেরই একটি করে পেশাগত নাম আছে। প্রায়ই দেখা যায় ঐ পেশাগত নামের আড়ালে রেসলারের পিতৃপ্রদত্ত নামটি হারিয়েই যায় (যেমন- হাল্ক হোগান)। কিন্তু ’৯৫ সাল পর্যন্ত অস্টিনের সেরকম কোন নামই ছিল না। তাই তিনি খুঁজছিলেন একটি জুতসই নাম। 

একদিন বাসায় বসে আলাপ করছিলেন তার তৎকালীন স্ত্রী জেনি ক্লার্ক (রেসলিং ম্যানেজার-রিং নেম লেডি ব্লসম)-এর সাথে। ব্যক্তিগত, পেশাগত অনেক বিষয়ই আসছিল কথাবার্তায়। অস্টিনের সামনে ছিল ধুমায়িত চায়ের কাপ। আলাপে তিনি এতই মশগুল ছিলেন যে, চায়ের কাপে চুমুক দিতেও ভুলে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী ব্ললেন-“চাটুকু খেয়ে নাও, অন্তত এটি পাথরের মত ঠাণ্ডা হওয়ার আগে (Stone cold)।”

উপমাটি অস্টিনের সাথে সাথেই মনে ধরে। ‘স্টোন কোল্ড’-বাহ দারুন তো! নিজের চিন্তার কথাটি জানালেন স্ত্রীকে। তিনিও সম্মতি দিলেন। এভাবেই আমরা পেলাম স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন। স্টোন কোল্ড আর স্টিভ অস্টিন এখন একে অন্যের পরিপূরক। তবে এই নামটির ইতিহাসের সাথে যে ব্যক্তিটির সংশ্লিষ্টতা ছিল অর্থাৎ জেনি ক্লারক-তার স্ত্রী, তার সাথে অস্টিনের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। অস্টিনের জীবনে পরে আরো দু’জন নাড়ি এসেছে, তবে সে আরেক কাহিনী।

• ‘স্টোন কোল্ড’ নামে রিং-এ প্রবেশ : 

‘স্টোন কোল্ড’-এই পেশাদারী নামটি নিয়ে অস্টিন প্রথম রিং-এ নামেন ১৯৯৬ সালে। সে বছর ২৩ জুন রাতে ‘কিং অব দ্যা রিং’ সিরিজে সেমিফাইনালে অস্টিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ‘ওয়াইল্ডম্যান’ মার্ক মেরো। অস্টিন ডব্লিউডব্লিউ-এ নতুন হলেও ততদিনে তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে অনেকেরই একটা ধারণা ছিল। বিপরীত দিকে মার্ক মেরো তো আগে থেকেই বিখ্যাত। ফলে লড়াইটি দারুণ জমবে এমন আশাই ছিল দর্শকদের। শুরু থেকেই দারুণ উত্তেজিত অস্টিন এমন আক্রমণ শুরু করে দিয়েছিলেন যে অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই মার্ক মেরো হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন। ম্যাচের পর দেখা গেল অস্টিনের ঠোঁট কেটে গেছে। নিজের দাঁত লেগেই কেটেছে ঠোঁট, বেশ কয়েকটি সেলাই পর্যন্ত দিতে হয়েছিল সেদিন। এভাবে সেমিফাইনালে জয়ের পর ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আবির্ভূত হন জ্যাক ‘দ্যা স্নেক’ রবারটস। 

রবারটস এমনিতে বেশ জাঁদরেল রেসলার হলেও ফাইনালে নেমেছিলেন কিছুটা শারিরীক সমস্যা নিয়ে। পাঁজরে, ব্যাথা ছিল। সে রাতেই সেমিফানালে ভ্যাডারের সাথে খেলতে গিয়ে আহত হন। লড়াইয়ের সময় এই সুযোগটি পুরোপুরি ব্যবহার করেন অস্টিন। বারবার রবারটসের পাজ্রেই আঘাত করতে থাকেন তিনি। ফলে বেশি সময় লাগেনি তার ‘কিং অব দ্যা রিংস’ শিরোপাটি জিততে। তার এই বিজয় যে নিছক দুর্ঘটনা ছিল না, তা প্রমাণ করেন তিনি পরবর্তী কয়েক মাসে। এ সময় তার কাছে কুপোকাত হন মার্ক মেরো, ইয়াকুজুনার মত তারকারা।

• প্রথম অগ্নিপরীক্ষা :

১৯৯৭ সালের শুরুর দিকে প্রথমবারের মতো এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় স্টোন কোল্ডকে। ব্যাপক জনপ্রিয় রয়েল রাম্বল সিরিজে আরও ২৯ সুপারস্টার রেসলারের সাথে রিং-এ ওঠার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। এই ফরম্যাটের খেলার নিয়ম হল, রিং-এর টপ রোপের উপর দিয়ে কোন একজনকে বাইরে ফেলে দিলে সে আর রিং-এ প্রবেশ করতে পারবে না। এভাবে, সবশেষে যিনি টিকে থাকবেন রিং-এ, তিনিই হবেন রয়েল রাম্বল। 

জনপ্রিয় রেসলার ব্রেট হাট, অস্টিনকে ফেলে দিলেও, রেয়াফারির চোখকে ফাকি দিয়ে তিনি আবার রিং-এ প্রবেশ করেন এবং সেই ব্রেট হাটকে ফেলে দিয়ে সে বছরের রয়েল রাম্বল বিজয়ী হন। ফলে শুরু হয় বিখ্যাত ব্রেট-অস্টিন রাইভালি। ডব্লিউডব্লিউ-এ এ দু’জন প্রথম মুখোমুখি হন ১৯৯৬ সালে-সারভাইভার সিরিজে। সেখানে অস্টিনের পরাজয় ঘটে। এর দু’মাস পরে ’৯৭ সালের শুরুর দিকে রয়েল রাম্বলে ব্রেটকে হারিয়ে অস্টিন তার প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু ব্রেট-অস্টিনের ফিউড তখন মাত্র শুরু। 

রেসল্ম্যানিয়া-১৩ এ দু’জনের মধ্যে এবার আয়োজন করা হল একটি সাবমিশন ম্যাচ। কোন পিনফল হবে না। এ লড়াইটি হয় রক্তক্ষয়ী। হাট রিংবেল দিয়ে অস্টিনকে আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। শুরু হয় দারুণ রক্তপাত। কিন্তু অস্টিন দমবার পাত্র নন। ফলে অতিথি রেফারি কেন শ্যামরক টেকনিক্যাল কারন দেখিয়ে লড়াই থামিয়ে দেন এবং ব্রেটকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। রক্তাক্ত অস্টিন যখন কারো সাহায্য ছাড়াই রিং ছাড়েন তখন গ্যালারি জুড়ে শুধু অস্টিন আর অস্টিন। মজার ব্যাপার ব্রেট রিঙে প্রবেশ করেছিলেন ফেস আর অস্টিন হিল হিসেবে। কিন্তু প্রস্থানের সময় থিক এর উল্টোটি ঘটে। এই দু’জনের মাঝে পরে আরও লড়াই হয় এবং অস্টিন পুরো হাট খান্দানের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পরেন।

• প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ :

ডব্লিঊডব্লিঊই-এ কোন চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্টের জন্য অস্টিন প্রথম অংশ নেন ১৯৯৭ সালের মে মাসের In Your House ১৫: A Cold Day in Hell পিপিভিটিতে। লড়াইটা ছিল আন্ডারটেকারের সাথে। দর্শকরা সবাই দেখেছে কি দারুনভাবে তিনি নাকাল করেছেন টেকারকে। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি তিনি। অস্টিন, টেকারকে স্টানার মেরে ধরাশায়ী করেন, কিন্তু তিন পর্যন্ত গোনার আগেই তার এক সময়ের পার্টনার ব্রায়ান পিলম্যান তড়িঘড়ি করে বেল বাজিয়ে দেন। ফলে অস্টিন বিভ্রান্ত হন, আর এ সুজোগে টেকার টম্বস্টোনের সাহায্যে ম্যাচটি জিতে নেয়। ফলে হাট ফাউন্ডেশনের সাথে সাথে পিলম্যানের সাথেও অস্টিনের বৈরিতা তৈরি হয়। 

সে মাসেই, ২৫মে, ট্যাগটিম চ্যাম্পিয়নশিপে ওয়েন এবং বুলডগকে পেলেন তিনি। এ জুটির বিরুদ্ধে লড়তে সঙ্গে নিলেন আরেক জনপ্রিয় রেসলার শন মাইকেলসকে। জয়ী হলেন তারা আর এটাই ছিল ডব্লিঊডব্লিঊই-এ অস্টিনের পাওয়া কোন গোল্ডের প্রথম স্বাদ। ১৯৯৭ সালে সামারস্লামে অস্টিন ইন্টারকন্টিন্যান্টাল চ্যামিয়নশিপ বেল্টের জন্য ডেফেন্ডিং চ্যামিয়ন ওয়েন হাটের মোকাবিলা করেন। ম্যাচটিতে এক মজার স্টিপুলেশন ছিল। যদি অস্টিন হারে, তবে তাকে ওয়েনের নিতম্বে চুমু খেতে হবে। 

ম্যাচের এক পর্যায়ে ওয়েন, অস্টিনকে পিল্ড্রাইভার দিলে, অস্টিন মারত্মকভাবে আহত হন। দর্শকদের সবাই যখন ভাবছিলেন, ওয়েনের জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখন অস্টিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে ম্যাচটি জিতে যান। তবে এর জন্য তাকে ভুগতে হয়। ইনজুরির কারণে তার থেকে ইন্টারকন্টিন্যান্টাল এবং ট্যাগ টীম চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট কেড়ে নেওয়া হয় এবং সারভাইভার সিরিজের আগ পর্যন্ত সাইড লাইনে বসিয়ে রাখা হয়। সাভভাইভার সিরিজে অস্টিন, ওয়েনের বিপক্ষে আবার ইন্টারকন্টিন্যান্টাল চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্টের জন্য লড়াই করেন এবং জয়ী হন।

• অস্টিনের সঙ্গে ভিন্সের বিরোধীতা :

সে সময়ের আরেক উঠটি জনপ্রিয় তারকা ‘দ্যা রক’। এদের যে কোন একজনের লড়াই থাকলে টিকেট চলে যায় কালোবাজারে। আর দু’জনের পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়লে তো কথাই নাই। ডব্লিঊডব্লিঊই এই সুযোগটিই নেওয়ার চেষ্টা করল। 

D-Generation X: In Your House পিপিভিতে অস্টিন আর রক পরস্পরের মোকাবিলা করেন। লড়াইতে অস্টিন জয়ী হন। ডব্লিঊডব্লিঊ কর্তৃপক্ষ ঐ ম্যাচটির পরের রাতেই আবার তাদের মাঝে লড়াইয়ের আয়োজন করেন। কারণ হিসেবে দাঁড় করান হয় যে, চ্যাম্পিয়নশীপ ম্যাচটিতে অস্টিন জয়ী হওয়ার জন্য তার পিকাপ-ট্রাকের সাহায্য নিয়েছিলেন। বেঁকে বসলেন অস্টিন।। তার প্রশ্ন-এ কেমন কথা? মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যব্ধানে এরকম দু’টি বড় লড়াই কি করে সম্ভব! ডব্লিঊডব্লিঊ-এর এক কথা- লড়তে হবে, যদি শিরোপা রাখতে চাও। অস্টিন রাজী হলেন না। ফলে শিরোপা কেড়ে নেওয়া হল। আর অস্টিন জড়িয়ে পড়লেন ডব্লিঊডব্লিঊ-এর সাথে এক নৈতিক লড়াইয়ে।

স্টিভ অস্টিনের সাথে অন্য তারকা রেসলারদের মৌলিক একটা পার্থক্য আছে। তিনি কেবল রিং-এর ভিতরেই লড়াই করেন না, রিং-এর বাইরেও লড়াইয়ে আপসহীন। এ লড়াই শারীরিক নয় কেবল, নৈতিকও। যে ডব্লিউডব্লিউই-এর প্ল্যাটফর্মে লড়ে এসেছেন তিনি খ্যাতির পাদপ্রদীপে, তারই কর্ণধারের সাথে বিরোধের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় তার নৈতিক লড়াইয়ের স্বরূপটি। 

ঘটনাটি ১৯৯৮ সালের। রয়েল র্যাম্বল জয়ের মাধ্যমে স্টোন কোল্ড স্টভ অস্টিন তখন দর্শকদের দারুণ পছন্দের। এ সময়েই তিনি নির্বাচিত হলেন তিনি চতুর্দশ রেসলম্যানিয়ার মেন ইভেন্টের জন্য। এতে বিজয়ী হতে পারলেই ডব্লিউডব্লিউই-এর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ খেতাবটি তার করায়ত্ত হয়। আসন্ন সে লড়াইয়ে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা রেসলার শন মাইকেলস। 

লড়াইটির বিষয়ে দর্শকদের মাঝে অতিরিক্ত আগ্রহ সৃষ্টি করতে ঘোষণা করা হল, সেদিন রিং-এ মাইক টাইসন উপস্থিত থাকবেন। এভাবে সবকিছু যখন ঠিকঠাক, স্টিভ অস্টিন কঠোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন লড়াইয়ের, তখনই দেখা দিল বিপত্তি। ডব্লিউডব্লিউই-এর মালিক ভিন্স ম্যাকম্যান জানালেন, তিনি অস্টিনকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে চান না। ভিন্স এ কথা বলল খোদ স্টিভকে। স্টিভের তখন অবাক হওয়ার পালা,-বলে কি লোকটি! তিনি অবশ্য জান্তেন-আগেও এরকম অনেক হয়েছে। রিং-এর বাইরে থেকে ভিন্স নিয়ন্ত্রণ করেছেন অনেক লড়াই।

• অ্যাটিটিউড এরার জন্ম :

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেক রেসলারই নতি স্বীকার করেছেন ভিন্সের অন্যায় আবদারের কাছে। ভিন্স এ ধরণের কাজ যে করতেন মুলত তার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে-তা বলা যায় নি:সন্দেহে। এর আগে প্রতিবারই তার এই অন্যায় ইচ্ছার জয় হলেও এবার বাধাপ্রাপ্ত হলেন স্টিভের কাছে। স্টিভ অন্যায় সে প্রস্তাব মানলেন তো না-ই, লড়াইয়ের দিন দেখা গেল তাকে মরিয়া ভঙ্গিতে। শন মাইকেলস লড়াইয়ে কেবল পরাজিতই হলেন না, কিছুটা আহত হয়েই তাকে রিং ত্যাগ করতে হল। ভিন্সের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই চ্যাম্পিয়ন হলেন স্টিভ অস্টিন। শুরু হল এক নতুন ইরা। অস্টিন ইরা তথা অ্যাটিটিউড ইরা। 

নতুন চ্যাম্পিয়নের সাথে ভিন্সের সম্পর্ক হল অত্যন্ত শীতল। তার চেষ্টা থাকল স্টিভকে জব্দ করার। সে অনুযায়ী প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করালেন এক সময়ের স্টিভের ট্যাগ টীম পার্টনার ডুড লাভ (মিক ফোলী)’কে। ’৯৮ এর এপ্রিল ও মে মাসে পরপর দু’বার মুখোমুখি হলেন তিনি স্টিভের সাথে, পরাজিত হলেন দু’বারই। এরপর ভিন্স নিয়ে আসলেন কেইনকে। ১৯৯৮ সালের কিং অব দ্যা রিং-এর ঐ টুর্নামেন্টে ম্যানকাইন্ড ও আন্ডারটেকারের হস্তক্ষেপে স্টিভ ম্যাচটি হেরে যায়। ম্যাচটি ছিল ফাস্ট ব্লাড ম্যাচ। তবে একদিন পরেই র ইজ ওয়্যারে শিরোপা উদ্ধার করেন স্টিভ।

স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন এবং ডব্লিউডব্লিউই-এর কর্ণধার মি. ভিন্সেন্ট কেনেডি ম্যাকম্যানের মাঝে ব্যক্তিত্বের লড়াই মোটামুটি কিংব্দন্তিতুল্য। আর তাদের এই লড়াই দর্শকদের দিয়েছে চরম আনন্দের খোরাক। ম্যাকম্যান, স্টিভকে দমাতে এক একে মিক ফোলি, কেইন, আন্ডারটেকার, বিগ শো, বিগ বসম্যান, ট্রিপল এইচ কতজনকেই না এনেছেন। কিন্তু কেউই দমাতে পারেনি অদম্য এই রেসলারকে।

• রেসলিং থেকে অবসর :

শুধু একজন। হ্যাঁ, একজন পেরেছিল অস্টিনেকে কিছুটা বিপাকে ফেলতে। বলুন তো কে সে? তিনি আর কেউ নন, আমাদের অতি প্রিয় রেসলার দ্যা রক। অবসরের আগে শেষ ম্যাচটিও তিনি খেলেছেন এই রকের সাথে রেসলম্যানিয়া-১৯ এ, যেখানে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।

আর যে ভিন্সের সাথে ম্যাকম্যানের পর্দায় দা-কুমড়ো সম্পর্ক, স্টিভ অস্টিন তার ক্যারিয়ারের সকল প্রকার সফলতার জন্য মি. মিকম্যানকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলেননি। এটাই আসল! ব্যবসায়ের জায়গায় ব্যবসা, আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গায় ব্যক্তিগত সম্পর্ক। আর অস্টিন যে কত বড় তারকা ছিল তার প্রমান ডব্লিউডব্লিউই হল অব ফেম (ক্ল্যাস ২০০৯)। ঐ আসরে তাকে এ সম্মানে ভূষিত করেন ডব্লিউডব্লিউই কর্ণধার মি. ম্যাকম্যান স্বয়ং।

♦ রেসলিং জগতে অর্জন সমূহ :

Pro Wrestling Illustrated

Feud of the Year (১৯৯৮, ১৯৯৯) vs. Vince McMahon

Match of the Year (১৯৯৭) vs. Bret Hart in a submission match at WrestleMania ১৩

Most Hated Wrestler of the Year (২০০১)

Most Popular Wrestler of the Year (১৯৯৮)

Rookie of the Year (১৯৯০)

Wrestler of the Year (১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০১)

Ranked No. ১ of the top ৫০০ singles wrestlers in the PWI ৫০০ in ১৯৯৮ and ১৯৯৯

Ranked No. ১৯ of the top ৫০০ singles wrestlers of the PWI Years in ২০০৩

Ranked No. ৫০ of the top ১০০ tag teams of the PWI Years with Brian Pillman in ২০০৩

Stanley Weston Award (২০১৯)

Professional Wrestling Hall of Fame

Class of ২০১৬

World Championship Wrestling

WCW World Television Championship (২ বার)

WCW United States Heavyweight Championship (২ বার)

WCW World Tag Team Championship (১ বার) – with Brian Pillman

NWA World Tag Team Championship (১ বার) – with Brian Pillman

World Wrestling Federation/World Wrestling Entertainment/WWE

WWF Championship (৬ বার)

WWF Intercontinental Championship (২ বার)

Million Dollar Championship (১ বার)

WWF Tag Team Championship (৪ বার) – with Shawn Michaels (১), Dude Love (১), The Undertaker (১), and Triple H (১)

King of the Ring (১৯৯৬)

Royal Rumble (১৯৯৭, ১৯৯৮, ২০০১)

WWE Hall of Fame (Class of ২০০৯)

Fifth Triple Crown Champion

Slammy Award

Freedom of Speech (১৯৯৭)

Best Original WWE Network Show – Stone Cold Podcast (২০১৫)

Wrestling Observer Newsletter

Best Box Office Draw (১৯৯৮, ১৯৯৯)

Best Brawler (২০০১)

Best Gimmick (১৯৯৭, ১৯৯৮)

Best Heel (১৯৯৬)

Best on Interviews (১৯৯৬

Best Non-Wrestler (২০০৩)

Feud of the Year (১৯৯৭) vs. The Hart Foundation

Feud of the Year (১৯৯৮, ১৯৯৯) vs. Vince McMahon

Match of the Year (১৯৯৭) vs. Bret Hart in a submission match at WrestleMania ১৩

Most Charismatic (১৯৯৭, ১৯৯৮)

Rookie of the Year (১৯৯০)

Tag Team of the Year (১৯৯৩) with Brian Pillman as The Hollywood Blonds

Worst Worked Match of the Year (১৯৯১) with Terrance Taylor vs. Bobby Eaton and P.N. News in a Scaffold match at The Great American Bash

Wrestler of the Year (১৯৯৮)

Wrestling Observer Newsletter Hall of Fame (Class of ২০০০)

 
• লেখক ঃ শাফকাত নাওয়াজ গুড্ডু।

কোন মন্তব্য নেই

কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ!