বিঃদ্রঃ এই পোস্টে লেখা সমস্ত তথ্য লেখকের একান্ত মতামত, আমাদের তরফে কোন তথ্যের ক্রেডিট বা দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে না। পোস্টটি বৃহতাকার হলেও অতি গুরুত্বপূর্ণ, তাই একবারে না পারলে কয়েকবারে পড়ুন।

কটা বড় পোস্ট নিয়ে আবারো লেখার ইচ্ছা হলো। এবারের পোস্টটা ক্লিক (Kliq) নিয়ে। যারা এই ব্যাপারে খুব পরিস্কারভাবে জানেন না, তাদের জন্য ক্লিকের ব্যাপারে আগে একটু বিষদ বলে নেই। ক্লিক হলো পেশাদার রেসলারদের নিয়ে একটা গ্রুপবিশেষ, যারা নিজেদের স্বার্থে রেসলিং কোম্পানিতে একটা রেভোলিউশন জাতীয় করেছিলো, এবং রেসলিং ইন্ডাস্ট্রি কিছুটা লাভ, এবং ভয়াবহরকম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো এদের একতাবদ্ধতার ফলস্বরূপ; যার প্রমান এখনো পাওয়া যায়।

ক্লিকের এইসব রেসলারেরা ছিলেন যথাক্রমে শন মাইকেলস, ট্রিপল এইচ, কেভিন ন্যাশ, স্কট হল, শন ওয়ালটম্যান, প্রমুখ। ক্লিকের ইতিহাস হলো প্রো-রেসলিং জগতের সবচেয়ে নিন্দনীয় ইতিহাসের একটি, যার ভেতরে মন্ট্রিয়ল স্ক্রিউজবসহ আরও অনেক ঘটনাই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ক্লিকের গঠন ও বিচরন বিস্ময়করভাবে প্রো-রেসলিং ইতিহাসের অনেক মাইলফলকের প্রত্যক্ষ কারন, আবার অনেক অঘটনের নেপথ্য মাধ্যমও বটে।

এখানে অনেকের অনেক প্রিয় রেসলার বা পারসোনালিটি সম্পর্কে হয়তো অনেক ঘৃণ্য তথ্য জানা যাবে, সেক্ষেত্রে আমি চাই, প্রকৃত সত্যটা সবাই জানুক, আমাদের প্রিয় রেসলারেরা সবসময়েই আমাদের মনোরঞ্জন করেন, তবে প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত জীবনে পৃথক, আমাদের মতো তাদেরও সবারই কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার আছে যেগুলো তারা চান না কেউ জানুক। আসুন জেনে নেই, ক্লিক ও তাদের এসব ইতিহাস সম্পর্কে।

• ক্লিক (শুরুর গল্প) :-

শুরু করতে হবে সেই রকার্সের আমল থেকে। ১৯৮৮ সাল। আমাদের বেশীর ভাগের তখন জন্মই হয়নি (আমার নিজেরই হয়নি ), যখন শন মাইকেলস একজন ট্যাগটীম স্পেশালিষ্ট। মারটি জিন্যাটির সাথে তার তখন বেশ দহরম মহরম। ট্যাগ টীম ডিভিশনটা মোটামুটি তারা দখল করে রেখেছে, আর মেইন ইভেন্ট দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সেসময় হাল্ক হোগান, র‍্যান্ডি সেইভেজরা।

শন মাইকেলসকে বলা হয়, সর্বকালের অন্যতম সেরা প্রো-রেসলার। সেটা যতটা না তাঁর ইন-রিং এবিলিটির জন্য, তারচেয়ে অনেক বেশী তাঁর কোনো ব্যাপারে আগে থেকেই লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা, আর সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারার ক্ষমতার জন্য। তিনি সেসময়ে দেখলেন, মুলত বিশালদেহী রেসলারেরাই WWEতে মেইন ইভেন্ট খেলতে পারে। শ্রেয়তর ইনরিং, বা অসাধারন মাইক স্কিলওয়ালা রেসলারেরা বিশাল না হওয়ার কারনে তাদের মেইন ইভেন্টে নেওয়া হচ্ছে না।

শন নিজের অক্ষমতা বুঝতে পারেন। তিনি নিজে তখন বেশ ছোটোখাটো। উচ্চতা ৬ ফিটের কাছাকাছি, ওজন টেনেটুনে ২০০ পাউন্ড হবে, কোনো দিক দিয়েই তাঁকে বিশালদেহী বলা চলে না। এর কারণটা কিন্তু খুব বেশী অচিন্তনীয় নয়। একজন রেসলারকে সেসময় সবাই বিশাল দেখেই অভ্যস্ত। ছোটোখাটোদের জন্য মডেলিং বা ফিল্ম তো আছেই। যাদের আকার বিশাল না, তারা তাই সেসময় খুব একটা অ্যামেরিকান রেসলিংএ আসতো না। শন বুঝলেন, তাঁকে রেসলিং ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ কিছু করতে হলে শুধু সাধারন ট্যালেন্ট দিয়ে কিছুই হবে না, বরং এই ব্যাপারে সুচতুর কৌশলই পারে তাঁকে WWE এর মতো একটা বৃহৎ কোম্পানির মাথায় ওঠাতে।

বস্তুত, এভাবেই জন্ম হয় ক্লিকের। শন তাঁর খুব কাছের একজন বন্ধু “পল লেভেক” কে নিয়ে আসতে চান WWEতে। লেভেক WWEতে যোগ দেন একটা উদ্ভট গিমিক নিয়ে, যেখানে তিনি সবসময় রাজকীয় বেশভূষায় থাকতেন, এবং নিজেকে উচ্চবংশীয় দাবী করতেন। তাঁর নাম দেওয়া হয়, “হান্টার হার্স্ট হেল্মসলি” এই লেভেকই আমাদের অতি প্রিয় ট্রিপল এইচ। গিমিকটা যদিও খুব হাস্যকর ছিলো, কিন্তু লেভেকের কিন্তু প্রতিভার কোনো অভাব ছিলো না। কিন্তু যেহেতু WWEতে শুধু প্রতিভা দিয়ে কিছুই হয় না, তাই মেইন রোস্টারে আসতে তাঁর বেশ কিছু বছর লেগে গেলো। লেভেক ছিলেন সেসময় হালকা-পাতলা, শীর্ণকায়।

শন লেভেককে বললেন, আপাতত এদিকে খুব একটা সুবিধা হবে না। আগে WWEতে একটা শক্ত অবস্থান বানিয়ে নিতে হবে, তারপরে সে যেনো এদিকে আসে। সুতরাং লেভেক চলে গেলেন WCWতে। এদিকে শন কিন্তু WWEতে বসে নেই, তিনি তাঁর আরেক বন্ধুকে WWEতে নিয়ে এলেন। WWEএর বিশালদেহী রেসলারপ্রিতির কথা চিন্তা করেই শন তাঁর সেই ৭ ফুটিয়া বন্ধুকে এনেছিলেন, সেই বন্ধুর নাম “কেভিন ন্যাশ।” WWEতে তাঁর নামকরন করা হয় “ডিজেল।” লেভেকের ব্যাপারে সফল না হলেও এবারে শন বেশ সফল হলেন। একেবারে অচিরেই ন্যাশ চলে এলেন মেইন রোস্টারে, তাঁকে বানানো হলো শন মাইকেলসের অন-স্ক্রীন বডি-গার্ড।


• ক্লিকের বিস্তৃতিঃ-

সময়টা ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি। শন তখন তাঁর প্রাক্তন ট্যাগ টীম পার্টনার মার্টি জিন্যাটিকে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। চেষ্টা মোটামুটি ফলপ্রসূ। শন যে জিন্যাটির থেকে অনেক ভালো, সে ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ নেই, WWE ম্যানেজমেন্টও শনের পারফরম্যান্সে বেশ খুশী। শন তখন ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়ন, জ্যানেটি ৯৩ এর মে মাসের দিকে মানডে নাইট রতে শনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন, এরপরেই ন্যাশের আবির্ভাব হলো। শন হাঁফ ছেড়ে বাচলেন। নতুন গিমিকে প্রবেশ করলেন শন মাইকেলস “দ্যা হার্টব্রেক কিড।” শন শুধু ন্যাশের সাহায্য নিয়ে আইসি বেল্টটাই পুনরুদ্ধার করলেন না, বরং ন্যাশের ভরসাতেই শন ধীরে ধীরে মেইন ইভেন্টের দিকে একটু একটু করে হাত বাড়াতে লাগলেন।

১৯৯৩ এর সেপ্টেম্বরে, শন মাইকেলসকে ড্রাগ সেবনের শাস্তিস্বরূপ WWE থেকে বের করে দেওয়া হলো। শনের সাজানো বাগান প্রায় ছারখার হওয়ার উপক্রম হলো। শন তীব্রভাবে ড্রাগের অভিযোগ অস্বীকার করলেন। কিন্তু WWE তাঁর কোনো ওজর আপত্তিই শুনলো না। বস্তুত, সে সময়ে ভিন্স ম্যাকম্যান পর্দার আড়াল থেকে বেশ শক্তহাতে রেসলিং অপারেশন নিয়ন্ত্রন করতেন, আর তাঁর সাথে শনের তখনও খুব একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। অন-স্ক্রীন কারন দেখানো হলো, শন মাইকেলস তাঁর ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশীপ কারো সাথে ডিফেন্ড করছেন না, তাই তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

শন ব্যর্থমনোরথ হয়ে USWA এবং অন্য কিছু ক্রস-ব্র্যান্ড প্রোমোশনে খেলে এলেন। সুচতুরভাবে তিনি WCW এর অফারটা ফিরিয়ে দিলেন। WCW তে তখনও এরিক বিশফের শাসনামল শুরু হয়নি। যেসময় এতো কিছু হচ্ছে, এরিক তখনও WCW থেকে বেশ কিছুটা দূরে আছেন, কাজেই “মানডে নাইট ওয়ার” তখনও শুরু হয়নি, তবুও WCW তখন WWE এর বেশ নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী, NWA এর আওতাধীন হওয়ার পরেও।

ভিন্স ম্যাকম্যান যে বিশ্বস্ত এমপ্লয়ীদের পছন্দ করেন, আর তাঁর প্রিয়ভাজন হতে হলে যে কোনোমতেই WCW এর ধারেকাছে যাওয়া যাবে না, সেটা শন বুঝেছিলেন। অত্যন্ত চতুরতার সাথে তিনি WCW এর অফার ফিরিয়ে দিলেন, এদিকে WCWতে থাকা তাঁর বন্ধুদের সাথে কিন্তু ঠিকই যোগাযোগ রেখে চলতে থাকলেন। উভয় কোম্পানিতেই তিনি তখন তাঁর লোকজন ঢুকিয়েছেন, কাজেই কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে সব কিছুই ছিলো শনের নখদর্পণে।

নভেম্বরের দিকে আবার ফিরে এলেন শন মাইকেলস। প্রাক্তন বডি-গার্ড ন্যাশের সাথে টীম করে জিতলেন ট্যাগ টীম চ্যাম্পিয়নশিপ। অন-স্ক্রীনে এসময় ঘটে গেলো বেশ কিছু বড় বড় ঘটনা। শন এক্সিডেন্টালি সুপারকিক মারলেন ডিজেলকে, যার ফলস্বরূপ তাঁদের ট্যাগ টীম ভেঙ্গে গেলো, এবং শন নতুন বডি-গার্ড “সাইকো সিড” কে পেলেন তাঁর সঙ্গে। সিডকে শন আনেননি, সিড ভিন্সেরই আবিষ্কার। সিডের মোটা মাথায় যে শনের সুচতুর পরিকল্পনা ঢুকবে না, সেটা শন ভালোই আন্দাজ করেছিলেন। ভেতরে ভেতরে তিনি ন্যাশের সাথে তাঁর সুসম্পর্কটা বজায় রাখলেন।

ন্যাশ ততদিনে বব ব্যাকলান্ডকে হারিয়ে WWE চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, এদিকে শনও সিডের সাহায্য নিয়ে তাঁর আরেক বন্ধু রেইজর রেইমন (স্কট হল) কে হারিয়ে ৩য় বারের মতো ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ন্যাশ যে তাঁর আগে মেইন ইভেন্টে ঢুকে গেছেন, এ নিয়ে শন বিন্দুমাত্র হতাশও ছিলেন না। কারন তিনি জানতেন, যদি কেউ পারে তবে একমাত্র ন্যাশই পারবে তাঁকে মেইন ইভেন্টে নিয়ে তুলতে। শন চুপিসারে পল লেভেক ও শন ওয়ালটম্যানকে নিয়ে এলেন WWEতে। পুরোপুরিভাবে গঠিত হলো দ্যা ক্লিক (The Kliq), যারা এর পরের কয়েক দশক ধরে দাপিয়ে বেড়াবে পুরো রেসলিং ইন্ডাস্ট্রি।


• ক্লিকের ক্রিয়েটিভ দৌরাত্ম্যঃ-

শন শুরু করলেন ন্যাশের সাহায্য নিয়ে ধীরে ধীরে ভিন্স ম্যাকম্যানের সাথে দেখা সাক্ষাত শুরু করা। সেসময়ের শন মাইকেলসকে যারা দেখেননি, তাঁরা কখনও জানবেন না, তাঁর অসামান্য ক্যারিজমা, বা সম্মোহনী ক্ষমতা। পুরুষ হোক বা নারী, শন মাইকেলস কখনোই কোনো ব্যাপারে কাউকে রাজী করাতে অসমর্থ হননি। ন্যাশ তখন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন, তাঁর সাথে সাথেই লবি করতে থাকেন শন, উদ্দেশ্য ভিন্সের কৃপাদর্শন। এদিকে ট্রিপল এইচ হয়ে গেছেন তখন “দ্যা কানেক্টিকাট ব্লুব্লাড”, রেইজর রেইমন আছেন মিড-কার্ডে, আর উদীয়মানদের মধ্যে তখন ধরা হচ্ছে, শন ওয়ালটম্যান (1-2-3 কিড বা এক্স-প্যাক) কে। মূলত, সব জায়গাতেই লোকজন রেখে দিয়েছেন শন, কখন কাকে দরকার হবে তা কি আর বলা যায়?

ধীরে ধীরে চিঁড়ে ভিজলো। সবুরে মেওয়া ফলে গেলো। ভিন্স রাজী হলেন শনকে মেইন ইভেন্টে সুযোগ দেওয়ার জন্য। শনের এতদিনের পরিকল্পনা সফল হলো। এখানে অনেকের সাহায্য থাকলেও, প্রধানত বলতে হয় কেভিন ন্যাশের কথাই। তিনি না থাকলে শন মাইকেলস হয়তো বা “শন মাইকেলস” হতে পারতেন না। ভিন্স শনের হিল গিমিক পরিবর্তন করে তাঁকে বেইবিফেইস বানিয়ে দিলেন, চতুর ব্যবসায়িক বুদ্ধিসম্পন্ন ভিন্সের মনে হয়েছিলো শনের অমোঘ আকর্ষণী ক্ষমতার সুফল হয়তো তাঁরা ভোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ভিন্সের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠলেন শন।

এই পোস্ট পড়তে পড়তে হয়তো আপনাদের মনে হচ্ছে, “বাবা রে বাবা ! শন মাইকেলস এতো খারাপ লোক?” আমি কিন্তু দ্বিমত পোষণ করবো। শন মাইকেলস কখনোই খারাপ লোক ছিলেন না। প্রো-রেসলিং জগতটাই এমন, এখানে সততার ভাত নাই। তিনি শুধু বুদ্ধি খাটিয়েছিলেন, যোগাযোগ রেখেছিলেন। তাঁকে বুদ্ধিমান বলা যায়, কিন্তু অসৎ নয়। ... হুম, অসততা কিছুও তিনি করেছিলেন বটে। এবার আসি সেই ব্যাপারে।

শন মাইকেলস ভিন্সের কাছে আসতে পেরে এবার একটু বেশীই উন্মত্ত হয়ে উঠলেন। তিনি অকৃতজ্ঞ কখনোই ছিলেন না। যেসব প্রিয় বন্ধুরা তাঁকে কাছ থেকে সর্বদা রক্ষা করেছিলেন, তাঁদের রক্ষা করতে গিয়ে শন করলেন কিছু কু-কর্ম। ভিন্সের সাথে ২৪ ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করে এর মধ্যেই শন মাইকেলস পেয়েছিলেন ক্রিয়েটিভ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু অমুল্য ক্ষমতা। যারা অবগত নেই তাঁদের বলি, WWEতে একেকজন ক্রিয়েটিভ মোটামুটি ঈশ্বরের সমান ক্ষমতাশালী। এদের একেকজনের অঙ্গুলীহেলনে একজন রেসলার যেমন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, তেমনি টেরি জিন বোলেয়া নামক অখ্যাত তরুন “হাল্ক হোগান” হয়েও যেতে পারে।

শন ক্রিয়েটিভদের কিছু সিদ্ধান্তে পক্ষপাতসুলভ অসম্মতি জানালেন। কয়েকজন রেসলার ছিলো শনের অপছন্দের তালিকায়, এদের মধ্যে আছে কিছু বড় বড় রেসলারেরাও। ডিন ডগলাস ও ক্রিস ক্যানডিডোর WWE ক্যারিয়ার ধ্বংস হলো শনের হঠকারী সিদ্ধান্তে। আরও কিছু উদীয়মান এবং প্রতিশ্রুতিশীল রেসলারের উপরে খড়গহস্ত হলেন শন মাইকেলস। তাঁদের বেশীরভাগেরই একমাত্র অযোগ্যতা ছিলো, তাঁরা হয়তো কোনো না কোনোভাবে শন মাইকেলসকে ইমপ্রেস করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এসব প্রতিশ্রুতিশীল রেসলারের মধ্যে একজনের নাম ছিলো দ্যা রিংমাস্টার (স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন)।

ক্ষমতার নেশায় শন মাইকেলস হয়ে গেলেন স্বৈরাচারী। ভিন্স তখন হোগানের পর, কোম্পানির নতুন ফেইস তৈরিতে ব্যস্ত। তিনি এসব কিছু দেখছিলেন না, শনের ধ্বংসলীলায় বেশ কিছু রেসলার WWE ছেড়ে চলে গেলো। কোথায় গেলো? WCWতে। এরিক বিশফ তখন সবে এসে ঢুকেছেন WCWতে। শনকে থামানোর জন্য প্রয়োজন হলো এক অদ্ভুত ঘটনার, যা প্রো-রেসলিং ইতিহাসে “এমএসজি কার্টেন কল” নামে পরিচিত, ক্লিকের ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারন।


• এমএসজি কার্টেন কল ও মানডে নাইট যুদ্ধের সূচনাঃ-

১৯৯৫ সালের দিকে, শুরু হয়ে গেছে এটিটিউড এরা। WCW অলরেডি WWE এর দেখাদেখি একটা সাপ্তাহিক শো শুরু করে দিয়েছে। তার নাম “মানডে নাইটরো” প্রথম দিনেই ব্যাপক সাফল্যও পেয়েছে তারা। র এবং নাইটরো উভয় শোই সোমবার রাতে হওয়ায় একেবারে প্রথমেই WCW এর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, যেহেতু WWE অনেক পুরানো, এবং আগে থেকে তারা ওই দিনে শো করে অভ্যস্থ। সেক্ষেত্রে WCW এর তখনকার প্রোডাকশন এক্সিকিউটিভ (পরবর্তীতে হেড অফ অপারেশনস) এরিক বিশফের সাহসের প্রশংসা করতেই হয়।

এরিক বেশ কিছু ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তবেই সাহসী হতে পেরেছিলেন। ৮০ এর দশকে যেসব হাল্ক হোগান, সেইভেজরা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তাঁরা তখন আর WWEতে নেই। WWE ৯০ এর দশকের শুরু থেকেই এসব প্রতিষ্ঠিত স্টারদের বাদ দিয়ে নতুনদের দিকে মনযোগী হওয়া শুরু করেছে। হাল্ক বুদ্ধিমান লোক, সুবিধা হচ্ছে না বুঝতে পেরে ১৯৯৩ সালের দিকেই WWE ছেড়েছেন তিনি, মুভি ক্যারিয়ার শুরু করবেন এই আশায় হলিউডের আশাপাশে ঘোরাঘুরি করছেন। মাচো ম্যান সেইভেজের অবস্থাও ভালো না, ভিন্স তাঁকে পুরোদস্তুর ধারাভাষ্যকার বানিয়ে ছেড়েছেন। একজন রেসলারের ধারাভাষ্য দিতে ভালো লাগার কথা না, কিন্তু ভিন্স তাঁকে বুঝিয়েছেন, যে তাঁর চাহিদা আগের চেয়ে কমে গেছে, এবং এই কাজ না করলে তাঁকে আর রাখা নাও হতে পারে, কাজেই ঘাড় গুঁজে বেচারাকে কথা বলে যেতে হচ্ছে।

এরিক সবার আগে হাত করলেন এই দুজনকে। শন মাইকেলস, ব্রেট হার্টেরা তখনও উঠতি তারকা, রেসলিং বলতে মানুষ তখনও বোঝে হাল্ক হোগানদের। WCW তে নিজের বস টেড টার্নারকে রাজি করান এরিক, টেড ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে সাইন করান হোগান আর সেইভেজকে। হোগান মুভির ধান্ধা ছেড়ে চলে আসেন, সেইভেজও নিজের WWE চুক্তির ইতি ঘটিয়ে এরিকের ঘাঁটিতে চলে আসেন। সেই সময়ের আরেক সেনসেশন “রিক ফ্লেয়ারকে” এরিক আগেই নিয়ে এসেছেন। এরিক বিশফের WCW মানডে নাইটরো ঝাঁপিয়ে পড়লো WWE এর উপর।

প্রথম রাতেই এরিক দিলেন মহা সারপ্রাইজ। হোগান WWE ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাঁর শূন্যস্থান পূরণের জন্য আনা হয়েছিলো “লেক্স লুগারকে।“ লুগার ঘাড়ে-গর্দানে দানব বিশেষ, তাঁকে দেওয়া হয়েছিলো হোগানের অ্যামেরিকান দেশপ্রেমী গিমিক। কিন্তু লুগার প্রমান করেছিলেন, যে তিনি হোগান নন। চরমভাবে ব্যর্থ হন হাল্ক হতে গিয়ে, ফলে এরিক বিশফ ন্যুনতম সম্মানীর কথা বললেও তিনি WWE ছেড়ে WCW তে আসার জন্য রাজী হন।

এরিক নিজেই পরে বলেছেন, যে তাঁর ধারনা ছিলো, লেক্স এতো কম টাকায় রাজী হবেন না, কিন্তু লেক্সের কাছে তখন WWEতে থাকা প্রায় শাস্তিস্বরূপ। প্রায়ই তাঁকে নিয়ে WWE এর আক্ষেপের কথা শুনতে শুনতে তিনি ক্লান্ত ও বিদ্ধস্ত। বিশফ তাঁকে বলেন, চুক্তিমাফিক WWE এর সাথে নিজের শেষ রাতে পারফর্ম করে, কাউকে না জানিয়েই তিনি যেনো চলে আসেন WCWতে। লেক্স তাই করলেন। মানুষ বিস্ময়াভিভূত হয়ে গেলো। ব্যাপার কি? এই লোকটা না WWE এর? সে এখানে কি করে? তখনকার সময়ে ইন্টারনেটে দেখা যেতো না, যে কে কোন কোম্পানিতে আছে। ফলে, সবাই ধরেই নিলো, যে লুগারও WWE এর লোক।

ভিন্স তখন নিজের কপাল চাপড়াচ্ছেন। লুগার তাঁকে কিছু না জানিয়ে তাঁর কোম্পানির মানসম্মান ডুবিয়ে বসে আছেন। দর্শক মনে করছে, WWE এতোই নিচু কোম্পানি, যে তাঁরা চুরি করে অন্যদের শোতে চলে আসে। প্রথম সপ্তাহে WCW এর হলো বিশাল বিজয়। WWE বুঝলো, যে সামনে ঘোর বিপদ। সৃষ্টি হলো মানডে নাইট নিয়ে যুদ্ধ (Monday Night War)। ভাবছেন, ক্লিক নিয়ে লেখায় এরা আবার কেনো আসছে? কারন নিচের প্যারায়।

আগেই বলেছিলাম, যে শন মাইকেলস এবং ক্লিক তখন ক্ষমতার নেশায় প্রায় বিস্মৃত হয়েছে, যে তারাও সাধারন মানুষ, তাদেরও জবাবদিহি করতে হতে পারে। ১৯৯৫ সালের একটা হাউজ শো এর সময়কার ঘটনা, শোটা হয়েছিলো বিখ্যাত রেসলিং স্টেডিয়াম “ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে।” মেইন ইভেন্ট ছিলো ডিজেল আর শন মাইকেলসের মধ্যে। অন্য আরেকটা ম্যাচ খেলার কথা ট্রিপল এইচ, আর রেইজার রেইমনের।

শন আর ন্যাশের মেইন ইভেন্ট শেষ হওয়ার পরে এক বিচিত্র ঘটনা ঘটলো, রিঙে চলে এলেন ট্রিপল এইচ, রেইজার রেইমন, আর শন ওয়ালটম্যান। রেসলিং গিমিক অনুযায়ী তখন রেইমন আর মাইকেলস ফেইস, আর ওয়ালটম্যান, ট্রিপল এইচ এবং ডিজেল হিল, বা নেগেটিভ রেসলার। এরা সর্বসমক্ষে একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। উপলক্ষটা বোঝা গিয়েছিলো আরও পরে। বস্তুত, ন্যাশ আর স্কট হলের চুক্তি WWE এর সাথে সেই রাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাঁরা চলে যাচ্ছেন। তাই শেষবারের মতো ৫ বন্ধু একে অপরের সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন। দর্শকেরা ফেটে পড়লো অভিযোগে।

তখনকার আমলে ফেইস আর হিলের নিয়মটা খুব কড়া করে মানা হতো, সাধারন মানুষেরা জানতেনও না, যে স্ক্রিপ্টের বাইরেও এদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকা সম্ভব। এই ঘটনাকেই বলা হয়, বিখ্যাত “এমএসজি কার্টেন কল ইনসিডেন্ট।“ ভিন্স প্রচণ্ড রেগে গেলেন, এদের শাস্তি দিতেই হবে। শন মাইকেলস তখন কোম্পানির ভবিষ্যৎ, তাঁকে শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। হল ও ন্যাশ এরা এমনিতেই চলে যাচ্ছে, ওয়ালটম্যানকে কখনোই কেউ গোনার মধ্যে ধরেনি, তাই শাস্তিটা শেষ পর্যন্ত পেতে হয়েছিলো ট্রিপল এইচকে।

ট্রিপল এইচ তখন উদীয়মানদের মধ্যে বেশ প্রতিশ্রুতিশীল একজন বলে গন্য, ১৯৯৬ সালের কিং অফ দ্যা রিং জেতার জন্য তাঁকে বিবেচনা করে রাখা হয়েছে। শাস্তিস্বরূপ, তাঁর কাছ থেকে সেই অর্জন কেড়ে নেওয়া হলো, দিয়ে দেওয়া হলো “দ্যা রিংমাস্টার” নামে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত একজন রেসলারকে। জানা যায়, ট্রিপল এইচ নিজের দোষ স্বীকার করেছিলেন, মাথা পেতে নিয়েছিলেন এই শাস্তি। এখন ডেইমিয়েন স্যানডাও এর মতোই তাঁকে টানা বেশ কয়েক মাস সকল ম্যাচ হারানো হলো। শন তাঁকে বলেন ধৈর্য ধরতে। এদিকে হল ও ন্যাশও নেই। ক্লিক কি তবে ধ্বংস হয়ে গেলো? মোটেই না। ক্লিক বরং আরও বিস্তার লাভ করলো।


• আউটসাইডারস, এনডব্লিউও এবং ডিএক্সঃ-

১৯৯৬-৯৭ এর দিকের সময়, মানডে নাইট যুদ্ধ তখন চরম পর্যায়ে। রেটিংসে কখনও WWE এগিয়ে, আবার কখনও WCW। এরিক বিশফ নামের জিনিয়াস তখন করলেন এক ভয়াবহ পরিকল্পনা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁর দরকার ছিলো রেইজার রেইমন নামে খ্যাত স্কট হলকে। বিপুল পরিমানের অর্থলোভ দেখিয়ে হলকে, এবং পরে কেভিন ন্যাশকেও WCW তে আসার জন্য রাজি করালেন তিনি। তবে শর্ত ছিলো, শুধু চুক্তি সাক্ষর করলেই হবে না, বরং লেক্স লুগারের মতোই চুপিসারে চলে আসতে হবে কাউকে না জানিয়ে। হল ও ন্যাশ রাজি হলেন। ভিন্স তখন এই দুজনের উপর বেশ ক্ষেপা।

মনে করা হয় এমএসজি কার্টেন কল ইনসিডেন্ট ঘটিয়ে ভিন্সকে খেপিয়ে দেওয়াটাও ক্লিকের পরিকল্পনার একটা অংশ ছিলো, কারন ভিন্স না খেপলে এতো সহজে এই দুজন WWE এর শত্রুশিবিরে গিয়ে উঠতে পারতেন না। পরিকল্পনামাফিক, প্রথমে হল ও পরে ন্যাশকে দেখা যেতে লাগলো WCW এর বিভিন্ন সাপ্তাহিক শোতে। এরা নিয়মিত রেসলারদের মতো করে আসতেন না, সবসময়েই এদের দেখা যেতো দর্শকের সারিতে বসে থাকতে, হাতে টিকেট। মাঝে মধ্যে মাইক হাতে নিলেও নিজেদের সম্পর্কে কিছুই বলতেন না এরা। মোটামুটি কমন কথাটা থাকতো দর্শকদের উদ্দেশে, “তোমরা জানো আমরা কে, এও জানো আমরা কোথা থেকে এসেছি, কিন্তু জানো না যে কেনো এসেছি।"

বোঝাই যাচ্ছে, ইঙ্গিতটা একেবারেই WWE এর দিকে। সাধারন দর্শকেরা বিশ্বাস করে ফেললেন, যে এরা WWE এর লোক। এবং যেহেতু WCW এর সাথে একটা প্রতিযোগিতা চলছে, কাজেই এরা এসেছে WCW কে ধ্বংস করতে। বিশফের এমনই পরিকল্পনা ছিলো। তখন রেসলারদের চুক্তি শেষ হয়ে গেলে সেটা এতো সারম্বরে বলার রেওয়াজ ছিলো না, তখন WWE.Com ও ছিলো না, যে সেখানে লিখে দেওয়া হবে। কাজেই WWE এর ফ্যানেরা এদের কারনে চলে এলেন WCW তে। তাদের বিশ্বাস, WCW এর সাথে WWE যুদ্ধে নেমেছে, তাঁরা সমর্থন দিলেন ন্যাশ ও হলকে। এক মুহূর্তের জন্যও কেউ বুঝলো না, যে সমস্তই এরিক বিশফের ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্কপ্রসূত অসাধারন এক পরিকল্পনা। WCW আরও এগিয়ে গেলো রেটিং এর দিক দিয়ে। ভিন্সের কপালের বলিরেখা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো।

ব্যাপারটা প্রমান করা যাবে না, তবে মনে করা হয়, এসবে হাত আছে শন মাইকেলসেরও। শন ভিন্সকে গিয়ে বোঝান, যে হল ও ন্যাশকে থামানোর জন্য WWE এর তৈরি করা দরকার একটা ডি-জেনারেশন-এক্স। ভিন্সের কোনো উপায় ছিলো না। তিনি রাজি হলেন। গোড়াপত্তন হলো ডিএক্সএর। ডিএক্স শুরু থেকেই একটা প্রাপ্তবয়স্ক মজাকেন্দ্রিক পরিবেশ তৈরি করলো। কাজেই WWE এর শুরু থেকেই বাচ্চাদের নিয়ে তৈরি করা ফ্যানবেইজ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এতে ক্ষতির চেয়ে লাভ হয়েছিলো বেশী। কারন, WCW ইতিমধ্যেই হোগান, স্টিং, সেইভেজ, ন্যাশ ও হলদের নিয়ে সেই মার্কেটের উপরে ভালোরকম কব্জা করে রেখেছে, কাজেই WWE ডিএক্সদের দিয়ে কিছু নতুন প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকদের প্রলুব্ধ করলো তাদের শো দেখতে। শন মাইকেলসের এতে লাভ হলো সবচেয়ে বেশী। তিনি জাঁকিয়ে ঢুকে পড়লেন মেইন ইভেন্টে। হয়ে গেলেন ওই দশকের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র। ট্রিপল এইচের শাস্তিও তখন শেষ। ১৯৯৭ সালের কিং অফ দ্যা রিংটা জেতানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তাঁকে দিয়ে, যদিও এক বছর আগেই সেটা জেতার কথা ছিলো তাঁর।
এদিকে, যখন ডিএক্স চায়নাকে নিয়ে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক গিমিক চালাচ্ছে, বিশফ তখনও ব্যস্ত প্রতি সপ্তাহে WWE এর কফিনে এক একটা নতুন পেরেক ঠুকতে। তিনি এবার পরিকল্পনা করলেন নতুন কিছু করার, এতদিন ন্যাশ ও হলকে বলা হচ্ছিলো “দ্যা আউটসাইডারস।” বিশফ ঠিক করলেন, এদের সাথে তৃতীয় কাউকে দিয়ে একটা স্টেবল তৈরি করার, যেটা পুরো WCW এর উপর রাজত্ব করবে। এই চরিত্রের জন্য ঠিক করা হলো “দ্যা আইকন স্টিং” কে। প্রায় সকল কিছু ফাইনাল, এমন সময়ে হাল্ক হোগান এসে বিশফকে বললেন, তিনি হতে চান, আউটসাইডারদের তৃতীয় মেম্বার।

বিশফের মাথায় বজ্রবিদ্যুৎ বাড়ি মারলো, স্বীকার করতে বাধ্য হলেন স্টিং এর চেয়ে ১০০ গুন বেশী দরকার এখানে হোগানকে। হল ও ন্যাশকে শুরু থেকেই WWE এর ঘাতক হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি, কাজেই এখানে নতুন কোনো মেম্বার এলে সেটা অবশ্যই এমন কেউ হওয়া উচিত, যার নামের সাথেই WWE আছে। স্টিং একজন বিখ্যাত রেসলার, কোনো কোনো দিক দিয়ে হোগানের থেকেও, কিন্তু হোগানের মতো WWE এর ট্রেডমার্ক নন তিনি। রচিত হলো ইতিহাস। হাল্ক হোগান জীবনে প্রথমবারের মতো হিল ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেন। গঠিত হলো এনডব্লিউও (NWO)। হোগান ও দুজন ক্লিক যোদ্ধাকে নিয়ে।


• মনট্রিওল স্ক্রিউজবের পটভূমিঃ-

১৯৯৭ সাল। ক্লিক বিভক্ত হয়ে গেছে দুই কোম্পানিতে। স্কট হল ও কেভিন ন্যাশ তখন হাল্ক হোগানের সাথে এনডব্লিউও হয়ে প্রতি সপ্তাহে WCW এর মেইন ইভেন্ট কাঁপাচ্ছেন। আর এদিকে WWE তে ডিএক্স নিয়ে ব্যস্ত আছেন শন মাইকেলস আর ট্রিপল এইচ। শন ওয়ালটম্যান বা এক্স-প্যাককেও নিজেদের ঘাঁটিতে নিয়ে গেছেন এরিক বিশফ। ট্রিপল এইচের সাথে তখন “চায়না” নামধারীনি জোনি লরারের মহা ইটিশ-পিটিস চলছে। তিনি ডিএক্সে এসে ট্রিপল এইচ আর শনের সাথে বিভিন্ন সেগমেন্টে অংশ নিচ্ছেন। কাজেই ক্লিকে না থেকেও ক্লিকের খণ্ডকালীন বিভিন্ন ব্যাপারে একমাত্র ট্রিপল এইচের প্রেমিকা হওয়ায় তাঁর জন্য দ্বার ছিলো অবারিত।

ক্লিকের সেসময়ের মাথাব্যাথার নাম ব্রেট হার্ট। ব্রেট শনের মতো বুদ্ধি খাটানোর ঝামেলায় যান নি। নিজের যোগ্যতায় বহুদিন মিড-কার্ড, আপার মিড-কার্ড ঘোরাঘুরি করে সামর্থ্যের প্রমান দিয়ে এসেছেন মেইন ইভেন্টে। ভিন্সের সাথে বেশ সুসম্পর্কও আছে তাঁর। কাজেই ভিন্স ব্রেটকে তুলে দিয়েছেন একেবারে টপ ফেইস হিসেবে। শন দেখলেন সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। ব্রেটকে সরাতে না পারলে তাঁর তো মেইন ইভেন্টে জায়গা হবে না।

শন অবশ্য ভদ্রলোক। প্রথমেই কোনো কুটিল পদ্ধতিতে গেলেন না। তিনি বরং ভালমানুষের মতো ব্রেটকে ক্লিকের একটা মিটিংএ ডেকে আনলেন। তারপর বেশ বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই প্রস্তাব দিলেন, ক্লিকে জয়েন করার জন্য। শনের উদ্দেশ্যটি খুব মহৎ। ব্রেট একবার রাজি হয়ে গেলেই হয়, ক্লিকের নেতা হিসেবে এর পর থেকে ব্রেটের ভবিষ্যৎটিও থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয়। কিন্তু সেই গুড়ে বালি ঢেলে দিলেন ব্রেট নিজে। রুঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যাত করলেন শনকে। শাসালেন এই নিয়ে পরবর্তীতে তাঁর কাছে আর না আসতে। কাজেই, ঘি ওঠাতে আঙ্গুল বাঁকাতেই হলো শন মাইকেলসকে।

এদিকে, এরিক বিশফ চালাচ্ছেন তাঁর ধ্বংসলীলা। প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন নিয়ম বের করছেন WWE কে খতম করার জন্য। টার্নার সাহেবকে বলে কয়ে WCW নাইটরোর প্রচার সময় এগিয়ে এনেছেন আগে, যাতে র প্রচারের আগেই নাইটরো প্রচার হতে পারে। এখনের মতো WWE আগেও তাদের শো রেকর্ড করে রেখে পরে টিভিতে প্রচার করতো, অন্যদিকে WCW সরাসরি সম্প্রচারিত হতো। বিশফ নিজের শোতে WWE রতে কি হবে না হবে, সব বলে দেওয়া শুরু করলেন, যাতে কি হবে না হবে এসব জেনে দর্শক আর র না দেখেন, আর তাঁদের টিআরপি ক্রমবর্ধমান হয়। এতোকিছু করেও বেচারা ভিন্সের উপর এরিকের শয়তানী মস্তিষ্কের দয়া হলো না।

WWE থেকে সদ্য অবসর নেওয়া “এলানড্রা ব্লেইজ” WCW তে এলেন “মাডিউসা” নামে। সাথে তখন সদ্য জেতা WWE উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ। বিশফ অনুরোধ করলেন ব্লেইজ যেনো যেভাবে সম্ভব বেল্টটা সাথে করে নিয়ে আসেন। নিয়ম ছিলো, নিজের জেতা বেল্ট চ্যাম্পিয়ন নিজের কাছেই রাখতে পারবেন, কিন্তু ব্লেইজ যা করলেন, তা ছিলো চরম অসম্মানজনক। বিশফ তাঁকে বাধ্য করলেন লাইভ WCW নাইটরোতে এসে WWE উইমেন্স বেল্টটাকে আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়ার জন্য। ফেলার আগে তাঁকে দিয়ে এও বলালেন, “আমি মনে করি WWE উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশীপের জায়গা আবর্জনার ঝুড়িই হওয়া উচিত।“

ফিরে আসি WWE তে। ভিন্স পুরাই বিশফ আতঙ্কে পর্যুদস্ত। চুক্তি শেষ হওয়া প্রতিটা WWE রেসলারকে যেনো সাপের মতো ছোবল মেরে নিয়ে নিচ্ছে WCW। ভিন্সের পছন্দের বেইবিফেইস ব্রেটের চুক্তির মেয়াদও শেষপ্রান্তে। ব্রেট সৎ মানুষ, আগে থেকেই ভিন্সকে জানিয়ে রেখেছেন যে, বিশফ তাঁকে একটা অফার দিয়ে রেখেছে, এবং চুক্তি শেষ হলে তিনি WCW তেই যাচ্ছেন। এখানে ঘটলো এক চক্রান্ত।

নভেম্বরের দিকে ব্রেটের হোমটাউন, ক্যানাডার মনট্রিওলে ব্রেটের শেষ ম্যাচ পড়েছে শন মাইকেলসের সাথে। ব্রেট তখন WWE চ্যাম্পিয়ন, তাঁর ইচ্ছা নিজের শহরে শনকে হারিয়ে বেল্টটা নিয়ে রিটায়ার করবেন। ম্যাচটা হবে সারভাইভর সিরিজ পিপিভিতে। ভিন্স রাজি হলেন। বাধ সাধলেন শন মাইকেলস। শন ভিন্সের কান ভারী করলেন, বললেন তিনি জানেন যে ব্রেট ব্লেইজের পদাঙ্কই অনুসরন করবেন। ভিন্স পড়ে গেলেন আতান্তরে। উইমেন্স টাইটেল না হয় হলো, কিন্তু কোম্পানির প্রধান চ্যাম্পিয়নশিপ আবর্জনার ঝুড়িতে নিক্ষেপ করার ঝুঁকি তো নেওয়াই যায় না।

শেষে ভিন্স আর না পেরে ব্রেটকে সরাসরি প্রস্তাব করলেন, শনের সাথে ম্যাচটা হেরে বেল্টটা শনকে দিয়ে তারপর WWE ছাড়ার। ব্রেট বিস্মিত হলেন, কিন্তু রাজি হলেন না। নিজের দেশে ম্যাচ, জিতবেন বলে কতো আশা করে আছেন, এখন হারতে হবে মানে? অনেক ঝগড়াঝাঁটি আর রাগারাগির পর, অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, ব্রেটকে ম্যাচটা জেতানো হবে। কিন্তু ম্যাচ শেষে ব্রেট অবশ্যই ভিন্সকে বেল্টটা দিয়ে তারপর যাবেন। এখান থেকেই সুচনা হলো মনট্রিওল স্ক্রিউজবের।

• মনট্রিওল স্ক্রিউজব ও ক্লিকের ভূমিকাঃ-

এই বিখ্যাত ঘটনাটা একটু বিস্তারিত বলা দরকার। আমার মতে, রেসলিং ইতিহাসেরই সবচেয়ে নিন্দনীয় ঘটনা এটি। আশেপাশে অনেক ঘটনা ঘটেছিলো, চেষ্টা করবো যতোটুকু সম্ভব সবদিক স্পর্শ করেই যাওয়ার। ধারনা করা হয়, এই মনট্রিওল স্ক্রিউজবেও ক্লিকের হাত আছে। শন মাইকেলসের দুজন সৈনিক হল ও ন্যাশ তখন WCWতে, এরিক বিশফের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। কার্টেন কলের সুবাদে ভিন্স এদের মধ্যকার সুসম্পর্কের কথাও জানতেন। কাজেই, শন যখন বললেন, যে তিনি বিশ্বাসযোগ্য সুত্র থেকে জেনেছেন, যে ব্রেট বিশ্বাসঘাতকতা করবেন, তখন ভিন্স সেটা একেবারেই উড়িয়ে দিতে পারলেন না।

সকল রকম ইমোশনাল বাক্যালাপের পর ভিন্স মনস্থির করলেন, প্রান গেলেও তিনি ব্রেটকে WWE চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে WCW তে যেতে দেবেন না। যেহেতু ব্রেটকে রাজি করানো যাচ্ছে না, কাজেই অসদুপায় অবলম্বন করা ছাড়া এখানে আর কোনো রাস্তাই খোলা নেই। ভিন্সের দোষ দেওয়াও যায় না। মাডিউসার ঘটনার পর যদি এখন WWE টাইটেল বেল্টটিকেও কোনো রকম অসম্মান করা হয়, তবে তাঁর কোম্পানির হবে আক্ষরিক অর্থে চাট্টিবাট্টি গোল। না খেয়ে মরতে হবে, শুধু তাঁকে না, তাঁর কোম্পানিতে কাজ করা আরও অসংখ্য রেসলার ও চাকুরীজীবীকে।

হেড রাইটার (যিনি স্টোরিলাইন বানান) ভিন্স রুসোকে নিয়ে হতে লাগলো মুহুর্মুহু রুদ্ধদ্বার বৈঠক। কিন্তু, কোনোভাবেই ব্রেটকে না জানিয়ে বেল্ট রেখে দেওয়ার কোনো উপায় তাঁরা বের করতে পারলেন না। রুসো এক পর্যায়ে রেগেমেগে বলে দিলেন, “এতো কিছু না ভেবে রেফারি দিয়ে পিন করে শনকে জিতিয়ে দিলেই তো হয়।” হায় রুসো! তিনি নিজেও জানতেন না, ভিন্স ম্যাকম্যান তখন খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো এই আইডিয়াটাকেই আত্মস্থ করবেন। রচিত হলো নীল নকশা।

ভিন্স ম্যাকম্যান ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করলেন শন মাইকেলসের সাথে। শন তখন সাফল্যের নেশায় বাকিসব ভুলে বসে আছেন। তিনি ভিন্সকে সমর্থন দিলেন। কিন্তু ব্রেটের শহরে তাঁকে হারানোয় যে কি ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এই চিন্তাটা ভিন্স করলেও শনের মাথায় আসে নি। একেবারে নিমেষেই দুই ভাগ হয়ে গেলো গোটা WWE। ব্রেট কানাঘুষা শুনলেন, যে তাঁর সাথে কোনো ধরনের অনৈতিক ঘটনা ঘটতে পারে।

তাঁর পরিবারের সদস্য, বর্তমান ডিভা নাটালিয়ার বাবা “জিম নাইডহার্ট” তাঁকে পরামর্শ দিলেন, কখনোই “লেই ডাউন” না করার জন্য, এবং সবসময়েই কিক আউট করতে প্রস্তুত থাকার জন্য, যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। ব্রেটের ছোটো ভাই ওয়েন হার্ট, কাজিন ব্রিটিশ বুলডগ এরা সবাই ব্রেটকে ব্যাক আউট করার, ম্যাচটা না খেলার কথা বললেন। ব্রেট সরাসরি ভিন্সকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভিন্স হলফ করে বললেন, মনট্রিওলে ব্রেটের কাছেই থাকবে চ্যাম্পিয়নশিপ।

WWE এর ভেতরেও এই নিয়ে আলোচনা হলো। সবাই বুঝতে পারলো কিছু একটা অমঙ্গল ঘটতে চলেছে। ভিন্সের একজন প্রিয়পাত্র, WWE এর প্রতি সদাবিশ্বস্ত, এবং সম্প্রতি WCW এর অফার ফিরিয়ে দেওয়া আন্ডারটেইকার ব্যাকস্টেজে চেপে ধরলেন শন মাইকেলসকে। হুমকি দিলেন, যদি কোনো ধরনের গোলমাল হয়, তবে শন তাঁর হাতে খুন হবে। শন মারাত্মক ভয় পেলেন। ট্রিপল এইচ আর চায়না কোনোমতে সরিয়ে নিয়ে গেলো ডেডম্যানকে। এসমস্তই সত্যিকারের ঘটনা, এখানে কোনো স্টোরিলাইন নেই।

মনট্রিওলে শুরু হলো ১৯৯৭ সালের সারভাইভর সিরিজ। শুরুর ম্যাচ চলতে লাগলো। স্টোন কোল্ড ওয়েন হার্টকে হারিয়ে আইসি বেল্ট জিতলেন। দর্শক তুমুল নিন্দা জানালো, অথচ তখন অস্টিন ফেইস, আর ওয়েন হিল। যখন অন্য ম্যাচ চলছে, তখন চুপিসারে ভিন্স ম্যাকম্যানের রুমে চোরের মতো গিয়ে ঢুকলেন তিনজন। একজন শন মাইকেলস, আরেকজন সিনিয়র রেফারি আর্ল হেবনার, অন্যজন ভিন্স নিজে। জানা যায়, সমস্ত দুনিয়ায় মনট্রিওল স্ক্রিউজবের পরিকল্পনা এবং সে সম্পর্কে ধারনা ছিলো শুধু এই ৩জনের। হেবনারকে জানানো জরুরি ছিলো, কারন ডিসিশনটা তার কাছ থেকেই আসবে।

শন রুম থেকে বের হয়ে ট্রিপল এইচ আর চায়নার কাছে গেলেন। তাঁদের মূল পরিকল্পনার কিছুই জানালেন না, শুধু বললেন, যেকোনো রকমের পরিস্থিতির জন্য যেনো তাঁরা তৈরি থাকেন। ক্যানাডিয়ানরা লোক সুবিধার না, এর উপরে তাঁদের হিরো ব্রেট যদি আজ হেরে যায়, তাহলে WWE এর কাউকে বেঁচে ফিরতে দেওয়া না-ও হতে পারে।

ভিন্স তখন ব্যস্ত সার্জেন্ট স্লটার, এবং অন্য অফিশিয়ালদের সাথে নিয়ে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করতে, বাইরে থেকে ধরে ধরে সিকিউরিটির লোকজন নিয়ে আসা হলো। ব্রেট সেসময় মোটামুটি রিল্যাক্সই ছিলেন, ভিন্স তো তাঁকে বলেছেনই, যে কোনো রকমের কারচুপী হচ্ছে না। তবে চিন্তা কি? শুরু হলো শন আর ব্রেটএর WWE চ্যাম্পিওনশীপের ম্যাচ। বাকি ঘটনা পরের অংশে।


• মনট্রিওল স্ক্রিউজবের আফটারম্যাথঃ-

ব্রেট যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন। কখনোই শনকে কোনো সাবমিশন ধরতে দিচ্ছিলেন না। ম্যাচের মধ্যে এদের দুজনের চলছিলো অন্য ম্যাচ। কোনো সাবমিশনে ধরা মাত্রই ব্রেট কাউন্টার করছিলেন, মাটিতে ফেলে দিলেই তড়াক করে উঠে দাঁড়াচ্ছিলেন। তারপরেও শেষরক্ষা হলো না। ম্যাচের এক পর্যায়ে শন মাইকেলস ব্রেট হার্টের নিজস্ব সাবমিশন হোল্ড “শার্পশুটার” দিয়ে ধরলেন ব্রেটকে। চোখের পলকে ব্রেট গুঁড়ি মেরে শনের পা ধরে টেনে তাঁকে ফেলে দিয়ে হোল্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন।

তারপরেই শুনলেন রিং বেলের আওয়াজ। ব্যাপার কি? শন তাঁকে সাবমিশনে ধরা মাত্রই রেফারি আর্ল হেবনার ব্রেট ট্যাপ আউট করেছেন, এমন ইশারা করে বেল বাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ব্রেট হতবিহবল। দর্শকেরা দেখলো, তাঁদের চ্যাম্পিয়ন ব্রেট হার্ট নিজের সাবমিশন মুভেই ট্যাপ আউট করেছেন শন মাইকেলসের কাছে। শনকে বেল্ট দিয়ে দেওয়া হলো। শন বেল্ট নিয়ে আর কিছু দেখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন না।

ট্রিপল এইচ আর চায়না একরকম শনকে কোলে নিয়েই পলায়ন করলেন। ব্রেট এদিক সেদিক দেখলেন, রেফারিকে কোথাও দেখা গেলো না। বুদ্ধিমান আর্ল হেবনার কোনোমতে ইশারা করেই দিয়েছেন ভোঁদৌড়। ব্রেট এগিয়ে গেলেন রিং রোপের কাছে, সেখানে অসহায়ভাবে তাঁর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ভিন্স ম্যাকম্যান। ব্রেট মুখভর্তি করে থুথু মারলেন ভিন্সের মুখ লক্ষ্য করে। এদিকে ক্যানাডিয়ানরা তখন বিক্ষোভ করছে, তাঁদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে উপস্থিত কয়েকশো সিকিউরিটি।

ব্যাকস্টেজে উপস্থিত পূর্ণ WWE রোস্টারের সামনে বসে ভিন্স রুসো শিউরে উঠলেন আর্ল হেবনারকে তাঁর পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে দেখে। ভয়ভীত রুসোর দিকে এগিয়ে এলেন মিক ফোলি। কিছুক্ষন তাঁর চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন, “যা করেছো, এর জন্য তোমার লজ্জা পাওয়া উচিত।“ রুসো পালিয়ে এলেন সেখান থেকে। কেউ বিশ্বাস করবে না, যে তিনি এই ব্যাপারে কিছু জানতেন না।

ভিন্সের খোঁজে লকার রুমের দিকে ছুটে এলেন রুসো। সেখানে তখন লঙ্কাকাণ্ড হচ্ছে। শন মাইকেলস এবং তাঁর দলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আন্ডারটেইকার খ্যাত মার্ক ক্যালাওয়ে লকার রুমের এপাশ ওপাশ করছেন, আর সিংহের মতো হুঙ্কার দিচ্ছেন।


ভিন্স তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের সাথে নিজেকে বন্দী করে রেখেছেন একটা লকার রুমে। দরজার বাইরে থেকে ব্রেট ও পুরো হার্ট পরিবার ক্রমাগত লাথি মারছেন, আর ভিন্সের নামে নানান রকমের কটূক্তি করছেন। এদিকে বাইরে গোলমাল বাড়ছে। হঠাৎ দরজা খুলে গেলো, উন্মত্ত ব্রেট ছুটে গেলেন ভেতরে। ভেতর থেকে কথাবার্তা খুব একটা শোনা গেলো না, কিন্তু একটু পরেই গর্জন করতে করতে বেরিয়ে এলেন ব্রেট। সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন স্টেডিয়াম থেকে।

একটু পরেই সঙ্গীসাথী নিয়ে বেরিয়ে এলেন ভিন্স ম্যাকম্যান। গালে ঘুষির দাগ লাল থেকে ততক্ষনে বেগুনী বর্ণ ধারন করেছে। বাকিদের আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করার স্বার্থে, এবং ঝামেলা গেঞ্জাম থামানোর জন্য নিজে সাধ করে ঘুষি খেয়েছেন ঘটনার মূল চক্রান্তকারী, কোম্পানি রক্ষার স্বার্থে পাগল চেয়ারম্যান ভিন্স।

শেষ হলো নিন্দনীয় মনট্রিওল স্ক্রিউজবের ঘটনা। ব্রেট হার্ট চলে গেলেন WCW তে। কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন পরিবারের সদস্যদের উপর, যেনো ভুলেও তাঁরা কেউ WWE এর দিকে না আসেন। শন মাইকেলসের বড়ই সুসময়। আন্ডারটেইকার, ও অন্যান্য WWE সদস্যদের ভিন্সের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়েছেন। নিজে তখন WWE চ্যাম্পিয়ন। সবচেয়ে কাছের চ্যালা ট্রিপল এইচকেও ধীরে সুস্থে মেইন ইভেন্টে নিয়ে তুললেই হবে।

সমস্যা করছে দুটো নাবালক। এদের নাম যথাক্রমে স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন, আর দ্যা রক। কিন্তু এদের নিয়ে আর চিন্তা কি? একটাকে বানানো হবে জবার, অন্যটাকে আজীবন মিড-কার্ডে ফেলে রাখলেই হবে। শন মাইকেলস তখন WWE এর আইন। বাকিরাও ভয়ে আছেন, মনট্রিওলের ঘটনার পর থেকে। কখন কার উপরে নাখোশ হয়ে কোন অঙ্গুলিহেলনে যে কি করে ফেলেন, কে জানে? দেখাই তো যাচ্ছে, শনের অসাধ্য কিছু নেই।

আমরা মনে করতেই পারি, যে এসব দেখে এরিক বিশফ হয়তো WCWতে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। কিন্তু সেই অবকাশই তাঁর ছিলো না। সেখানে আগে থেকেই স্কট হল আর কেভিন ন্যাশ নামে দুই বান্দা আছে না? এখানেই ক্লিকের কৃতিত্ব, তাঁদের গল্প যেনো শেষ হয়েও শেষ হয় না। ক্লিক তখন লিটারালি রেসলিং দুনিয়া শাসন করছে। শন মাইকেলস ঠিক করলেন, আবার গোটা ক্লিককে এক কোম্পানিতে আনা দরকার। সেজন্য দরকার, এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী WCW কোম্পানিটা ডুবিয়ে দেওয়ার। যেহেতু ক্লিকের নেতা WWE তে আছেন, কাজেই সেটা যেমন আছে থাক। কেভিন ন্যাশের প্রতি আদেশ হলো, WCW এর গলা কেটে নদিতে ভাসিয়ে দেওয়ার।


• ক্লিকের WCW এর উপর কর্তৃত্বঃ-

এদিকে WCWতে ন্যাশ তাঁর দায়িত্বে বেশ পারদর্শী। নিজে বুকিং (কে জিতবে, কে হারবে এটা যারা ঠিক করে) এর কিছুই বোঝেন না, তবুও এরিক বিশফকে বলে কয়ে রাজি করালেন, যে তিনি বুকার হবেন। এরিকের মতো এমন একজন বুদ্ধিমান মানুষ কেনো এই প্রস্তাবে রাজি হলেন, সেটা রহস্যাবৃত। কিন্তু বুকিং এর ক্ষমতা পেয়ে ন্যাশ হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। এসময় আরেকটা রহস্যময় ঘটনা ঘটলো।

WWE এর হেড রাইটার, ভিন্স রুসো অতিরিক্ত কাজের চাপের দোহাই দিয়ে WWE এর চাকরী ছেড়ে দিয়ে উঠলেন WCW তে। বিশফের বুদ্ধিমত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এখানেও। যেই লোকটা এটিটিউড এরার সময়ে টানা WCW কে হারানোর জন্য নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছে, ভিন্সের বিশ্বস্ত সেনানী হিসেবে এতদিন কাজ করে গেছে, তাকে বিশফ কি বুঝে বিশ্বাস করলেন কে জানে? তবে রুসো গিয়ে পড়লেন একেবারে কেভিন ন্যাশের হাতে।

প্রথমদিকে WCW এর বুকিং মোটামুটি সহ্যের মধ্যেই ছিলো। সমস্যা হলো, শুধুমাত্র এনডব্লিউও এর সদস্যেরা ছাড়া আর কেউ কোনো ম্যাচে জিততো না। এনডব্লিউও এর সদস্যসংখ্যাও তখন কম না। যতদুর জানি, সংখ্যাটা ৩০ এর আশেপাশে। বাকিরা একটু গাঁইগুই করতে লাগলেন, ব্যাপারটা কেমন হচ্ছে, যে এনডব্লিউও কখনও হারবেই না? তাঁরা কি অতিমানব? ন্যাশ-রুসো জুটি তাঁদের প্রতিভা সর্বদিকে ছড়িয়ে দিলেন।

ক্রুজারওয়েইটদের তাঁরা আজীবন ক্রুজারওয়েইট হিসেবে রেখে দেওয়ারই পক্ষপাতী ছিলেন। ক্রমাগত বলে বলে ব্যর্থ হয়ে কোম্পানি ছেড়ে দেন ক্রিস জেরিকো, এডি গরেরোর মতো বিখ্যাত ক্রুজারওয়েইটরা। তাঁরা গিয়ে ওঠেন WWEতে। ন্যাশ হয়ে ওঠেন আরও স্বৈরাচারী। WCWতে তখন গোল্ডবার্গের বেশ বড়সড় একটা ফ্যানক্রেইজ হয়েছে। গোল্ডবার্গের আবিষ্কর্তা এরিক বিশফ স্বয়ং। গোল্ডবার্গের গিমিক ছিলো, টানা ম্যাচ জেতার। ১৭০ টা মাচ জেতার পরেই টনক নড়ে ন্যাশের। এতো ম্যাচ তো তাঁর জেতার কথা না। তিনি তো আর এনডব্লিউওর সদস্য না।

এরমধ্যে আবার জিম কর্নেট ঝামেলা পাকিয়ে বসে আছেন। গোল্ডবার্গ হাল্ক হোগানকে চ্যালেঞ্জ করে WCW ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। সুতরাং ন্যাশ ঠিক করলেন, তিনি গোল্ডবার্গকে একেবারে কবর খুঁড়ে মাটি চাপা দিয়ে দেবেন। সেইমতো স্টারকেইড ১৯৯৮তে ন্যাশ গোল্ডবার্গকে হারিয়ে তাঁর ১৭৩-০ উইনিং স্ত্রিক ভাঙ্গেন, গোল্ডবার্গের কাছ থেকে WCW চ্যাম্পিয়নশিপটিও পকেটে ভরেন। হাতে হাত মিলিয়ে রুসো আর ন্যাশ করতে থাকেন আরও বড় বড় অপকর্ম। দর্শকেরা ক্ষেপে গেলো। এরিক বিশফ যতদিনে বুঝতে পেরেছিলেন, ততদিনে আর কিছুই করার ছিলো না।

ধীরে ধীরে WCW এর রেটিংস কমতে শুরু করলো। পুরো শো জুড়ে NWO কি করেছে এবং এখন কি করছে, এতে মানুষের আর কোনো উৎসাহ থাকলো না। যেমনটা হয়েছে TNA এর “এইসেস এন্ড এইটস” স্টোরিলাইনের ক্ষেত্রে। WWE ইতোমধ্যে স্টোন কোল্ডের সাহায্যে এটিটিউড এরায় জয়লাভ করেছে। বিশফ যখন রুসোকে ক্রিয়েটিভ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়াতে নিজের ভুল বুঝেছেন, ততদিনে WCW একটা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে।

রুসোর সবচেয়ে ভয়াবহ ডিসিশনটা ছিলো, অভিনেতা ডেভিড আর্কেটকে দিয়ে WCW ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানো। যেই বেল্টটা একবার ছুঁয়ে দেখার জন্য প্রতিটা রেসলার তাদের সারাজীবন সংগ্রাম করে বেড়ায়, সেখানে একজন অভিনেতা এসে একেবারে রেসলিং এর কিছুই না জেনে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন, এটা WCW এর ভেতরেই কেউ মেনে নিতে পারলো না। বিক্ষোভ শুরু হলো। রুসোর বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকালেন অনেকে, ফলে ম্যাচে পারফরম্যান্স হতে লাগলো খারাপ। রুসো বরং আরও বেশী প্যাঁচ লাগিয়ে দিলেন।

মানডে নাইটরোতে রেসলিং বাদ দিয়ে নাচগান শুরু করে দিলেন, “কিস” নামে একজন এসে সবাইকে গান গেয়ে শোনাতে লাগলো। রুসো উপরে উপরে সবাইকে বোঝালেন, এতে করে এন্টারটেইনমেন্ট বাড়বে, মানুষ দেখতে উদ্বুদ্ধ হবে, হলো উল্টোটা। WCW এর ব্রডকাস্টিং চ্যানেল নাইটরো প্রচার করতে অসম্মতি জানালো, ওয়ার্নারদের সাথে টেড টার্নারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হলো। ফলে WCW হয়ে পড়লো একেবারেই একটা অকর্মণ্য কোম্পানি, যেই ভয়ে এতোদিন WWE ছিলো, WCW এর স্টাফদের সেই না খেতে পেয়ে মরার দশাই হলো।

এগিয়ে এলেন মনট্রিওলের দাগী অপরাধী ভিন্স ম্যাকম্যান, একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত। WCW কে কিনে নিলো WWE. এরিক বিশফ তখন নিজের অপকর্মের জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাঁকেও নিজের কাছে নিয়ে এলেন ভিন্স, কাজ দিলেন WWEতে, জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে তাঁকে তিনি ডেবিউ করান পরবর্তীতে ২০০২ সালে। এদিকে WCW এর সাথে ন্যাশ আর হলও চলে এলেন। আগে থেকে শন, ট্রিপল এইচ আর ওয়ালটম্যান ছিলেন, পুনর্গঠিত হলো ক্লিক।


• স্টোন কোল্ড, দ্যা রক এবং ক্লিকঃ-

এদিকে WCW এর অকর্মণ্য হয়ে যাওয়ার আগে WWE তে কি হচ্ছে? শন মাইকেলস যখন সর্বময় ক্ষমতার কর্তা, তাঁর তো তখনই ১৩-১৪ বার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ার কথা। কেনো হলেন না? সমস্যা হচ্ছে, যখন সবকিছু নিয়ন্ত্রনে থাকে, তখনই কিছু না কিছু সমস্যা হয়ে যায়, নাহলে কোনো মানুষ কখনোই ব্যর্থ হতো না। শনের ক্ষেত্রেও এমনই হলো। ব্রেট চলে যাওয়ার পর যে একাধিপত্য স্থাপন করেছিলেন তিনি, তা থেকে তাঁকে স্বেচ্ছায় সরে আসতে হয়। কারন, তাঁর পিঠের ইনজুরি।

এই ইনজুরির কারনে শনের ক্যারিয়ার পড়ে গেলো শঙ্কায়। তিনি আন্ডারটেইকার এবং অন্য নতুন মেইন ইভেন্টারদের সাথে ইনজুরির কারনে কুলিয়ে উঠতে পারলেন না। সিদ্ধান্ত হলো, কিছুদিন রেসলার হিসেবে রিটায়ার করে পিঠের ইনজুরি সারিয়ে তারপর আবার ফিরে আসবেন তিনি। সেইমতো ১৯৯৮ সালের রেসলম্যানিয়াতে স্টোন কোল্ডের কাছে WWE চ্যাম্পিয়নশিপটা হারানো হয় তাঁকে দিয়ে। শেষ হয় মেইন ইভেন্টে শন মাইকেলসের দাপট।

কিন্তু তাই বলে এমন না, যে শনের ক্ষমতার এখানে ইতি ঘটলো। একটিভ রেসলিং থেকে সরে গিয়ে তিনি বরং আরও জাঁকিয়ে বসেন ক্রিয়েটিভের আসনে। বানিয়ে দেওয়া হলো WWE এর অনস্ক্রীন কমিশনার (অনেকটা জেনারেল ম্যানেজারের মতো)। আগেই বলেছি শন অকৃতজ্ঞ ছিলেন না, তিনি বুঝলেন নিজে যখন অকার্যকর, কাজেই এখন সময় এসেছে প্রধান চ্যালা ট্রিপল এইচকে একটু একটু করে উপরের দিকে তোলার। ছেলেটা অনেক কষ্ট করেছে শনকে লাগাতার সাপোর্ট দিয়ে দিয়ে। কিন্তু ট্রিপল এইচ তখন মেইন ইভেন্ট থেকে যোজন যোজন দূরে। স্টোন কোল্ড তখন টপ ফেইস, মেইন ইভেন্টে আসি আসি করছেন দ্যা রক। ম্যানেজমেন্ট থেকে ম্যানকাইন্ডকেও একটা পুশ দেওয়ার কথা চলছে। এখন উপায়?

ঘুরে আসি ১৯৯৯ সালের রেসলম্যানিয়া থেকে। স্টোন কোল্ড তখন একেবারে ক্রেইজ, মানুষ তাঁকে ছাড়া আর কিছু বোঝে না। ওই বছরের রয়াল রাম্বলে ভিন্স ম্যাকম্যানের জেতাটা আরও বেশী বাড়িয়ে দিলো স্টোন কোল্ডের ফ্যান সাপোর্ট,যেমনটা ২০১৪তে ড্যানিয়েল ব্রায়ান না জেতায় তাঁর বেড়েছে। দ্যা রক তখন WWE চ্যাম্পিয়ন। নিয়ম হচ্ছে, রয়াল রাম্বল যে জিতবে, সেই পারবে রেসলম্যানিয়াতে WWE চ্যাম্পিয়নের সাথে খেলতে। এখন বুড়া দাদা ভিন্স নিশ্চয়ই দ্যা রকের সাথে খেলতে গিয়ে কোমরের হাড্ডি ভাঙবেন না। তাহলে রকের সাথে খেলবে কে? ফ্যান সাপোর্ট বলছে স্টোন কোল্ড।

এদিকে ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছা ম্যানকাইন্ডকে পুশ করার। সিদ্ধান্ত হলো, এই প্রথম রেসলম্যানিয়াতে মেইন ইভেন্ট হবে একটা ট্রিপল থ্রেট ম্যাচ। দ্যা রকের সাথে খেলবেন স্টোন কোল্ড আর ম্যানকাইন্ড। শন তেতেপুড়ে গেলেন। কি জ্বালা! এরা ৩জন মেইন ইভেন্টে চলে গেলে ট্রিপল এইচের কি হবে? তিনি ভিন্সের সাথে দরবার করতে লাগলেন, রাগটা তাঁর স্টোন কোল্ডের উপরে বেশী। প্রথমত, তাঁর কাছে হেরেই শনের ক্যারিয়ার থমকে আছে, আবার মানুষ বলছে, শন নাকি অস্টিনের কাছে হেরে তাঁর কাছে টর্চ তুলে (কোম্পানির প্রধান ফেইস হবার) দিয়েছেন। ক্রিয়েটিভদের সাথে শনের মতামত মিললো না।

ক্রিয়েটিভরা সাফ জানিয়ে দিলো, ট্রিপল এইচকে কোনোমতেই এখন মেইন ইভেন্টে নেওয়া যাবে না। সে এখনো মিড-কার্ডে আছে। বলা নেই, কওয়া নেই, মেইন ইভেন্ট খেলবে মানে? শন তখন উপায়ন্তর না দেখে ক্রিয়েটিভদের বোঝানোর চেষ্টা করলেন, যে এই ম্যাচটা ট্রিপল থ্রেট হওয়ার কোনোই দরকার নেই। দ্যা রকের সাথে ম্যানকাইন্ডকে খেলিয়ে দাও, তবুও বাবারা দয়া করে অস্টিনকে বাদ দাও। শেষ পর্যন্ত শনের বারংবার লবিতে কাজ হলো।

ভিন্স রাজি হলেন ম্যাচটা ওয়ান-অন-ওয়ান করতে। সমস্যা হচ্ছে, দ্যা রকের সাথে ম্যানকাইন্ড নয়, তিনি ঠিক করলেন স্টোন কোল্ডই খেলবেন। ম্যানকাইন্ডের পুশ স্থগিত হলো, রেসলম্যানিয়াতে বেচারাকে খেলানো হলো বিগ শোর সাথে। অস্টিনের তখন যেরকম ফ্যান ক্রেইজ, তাতে তাঁকে বাদ দিয়ে কিছু করার কল্পনাই করা যায় না, তাহলে সেই বছরের রেসলম্যানিয়া দেখতে কেউ আসতো না।

এরপর শন মাইকেলস আর কি পদক্ষেপ নিতেন, তা আর জানা গেলো না। কারন, পিঠের ইনজুরি মারাত্মক অবস্থা ধারন করায়, ডাক্তারের নির্দেশে তিনি চিরকালের জন্যে রেসলিং ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। ২০০০ সালের শুরু থেকে যেকোনো ধরনের অন-স্ক্রীন উপস্থিতিও করা হলো নিষেধ তাঁর জন্য। তবে ইতোমধ্যে বেচারা ট্রিপল এইচের জন্য অনেক কিছুই করেছেন তিনি।

তাঁকে ম্যানকাইন্ডের সাথে জিতিয়ে WWE চ্যাম্পিয়ন করে মেইন ইভেন্টে এনেছেন, নিজের গোড়াপত্তন করা গ্রুপ ডিএক্সএর নেতা বানিয়েছেন, চায়নাকে জেতানো হয়েছে উইমেন্স এর পাশাপাশি ইন্টারকন্টিনেন্টাল টাইটেলও। কিন্তু যে সময়ে ট্রিপল এইচের সবচেয়ে দরকার ছিলো শনকে, তখনই ইনজুরি তাঁকে সরিয়ে দিলো প্রো-রেসলিং থেকে।


• ট্রিপল এইচের উত্থানঃ-

শন মাইকেলস যতদিনে WWE থেকে অবসর নিয়েছেন, ততদিনে তিনি অনেক অপকর্ম করার চেষ্টা করে গেছেন। অস্টিনের ক্ষতি করার চেষ্টা করেও পারেননি। ট্রিপল এইচের মেইন ইভেন্টে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা দ্যা রকএর বারংবার সর্বনাশ করার চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। শন অবশেষে মানতে বাধ্য হয়েছেন, যে দ্যা রক এবং স্টোন কোল্ড এই দুটোই আসলে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অতিমানব। এদের কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যেতো না, কোনো না কোনোভাবে এরা ঠিকই আজ যে জায়গায় আছে, সেখানে চলে আসতো।

শন বহুবার দ্যা রকের কষ্টার্জিত ম্যাচে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ট্রিপল এইচকে, যে কারনে দ্যা রক এখনো এইচবিকের প্রতি যথেষ্ট রাগ পুষে রেখেছেন। মনে করে দেখুন, বিগত বছরগুলোয় দ্যা রক এবং শন মাইকেলসের একসাথে কয়টা সেগমেন্ট দেখেছেন? এমন কিন্তু নয়, যে এরা দুজনে কখনও একইসাথে ছিলো না WWEতে। এমনকি বিগত একটা রেসলম্যানিয়াতে যখন ভিন্স, শন আর রকের একটা ম্যাচের জন্য পরিকল্পনা করেন, তখন দ্যা রক সরাসরি শনের সাথে ম্যাচ খেলতে অসম্মতি জানান। তাঁর সাফ কথা, যার প্রতি তাঁর রেস্পেকট আসে না, তাঁর সাথে তিনি ম্যাচ খেলতে পারবেন না।

যাই হোক, ব্যাপারটা হলো এমন, যে ভিন্স WCWকে কিনে নেওয়ার আগেই শন মাইকেলসকে পিঠের ইনজুরির কারনে WWE ছেড়ে চলে যেতে হলো। ফলে ক্লিক পুনর্গঠিত হতে হতেও হলোনা। ক্লিকের সকল সদস্যরাই পড়ে গেলেন অথৈ সাগরে। এতকাল যা করার শন মাইকেলসই করেছেন, তাদের শুধু তাঁকে সমর্থন দিয়ে গেলেই হয়েছে। এখন কি হবে? হল, ন্যাশ, আর ওয়ালটম্যান ধরলেন ট্রিপল এইচকে। ট্রিপল এইচই একমাত্র পুরুষ, যে কিনা এতোদিন খুব কাছে থেকে দেখেছে শন মাইকেলসের কার্যপদ্ধতি।

ট্রিপল এইচ তখন কিছুটা নিজের যোগ্যতা, আর বাকিটা শনের সুপারিশে একজন মেইন ইভেন্টার। ওদিকে ন্যাশ আর হল অনাহুত, WCWতে ভেগে যাওয়ার কারনে ভিন্সের চোখে অপরাধী। কাজেই, যদি এই অবস্থায় কেউ কিছু করতে পারে, তাহলে ট্রিপল এইচ ছাড়া আর কেউ পারতো কি? ট্রিপল এইচ নিজেও স্বার্থপর ছিলেন না। তাঁর চোখেও ক্লিক সবসময়েই প্রথম প্রায়োরিটিতে ছিলো। নিজের ও বন্ধুদের স্বার্থে তিনি তখন খুবই জঘন্য একটা কাজ করেন। যেটা তাঁকে কোম্পানির শীর্ষে উঠতে অবশ্যই সাহায্য করেছে, তবে মানুষ হিসেবে কোথায় নামিয়েছে?

২০০০ সালের দিকে, রতে দেখা গেলো এক অদ্ভুত সেগমেন্ট। ট্রিপল এইচ ভিন্সের কন্যা স্টেফিনিকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছেন অন্য শহরে, সেখানে কারচুপী করে তাঁকে বিয়ে করে ফেলেছেন। হ্যাঁ, এটা ছিলো পুরোটাই স্টোরিলাইন, তবে বাস্তবের সাথে একেবারে মিল ছিলো না বললে ভুল হবে। ভিন্স নিজের কন্যার সাথে ট্রিপল এইচের বেশ কিছুদিন মাখামাখি দেখে ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিলেন, তখনই তাঁর উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়েছিলো এই বাস্তব ঘেঁষা ভয়াবহ স্টোরি লাইনের আইডিয়া।

ট্রিপল এইচ আর স্টেফিনির বিয়েটা প্রকৃতপক্ষে হয়েছে ২০০৩ সালে। ভালো কথা, চায়নাকে মনে আছে? ওই যে জোনি লরার, দানবাকৃতির মহিলা, যার সাথে ডিএক্স আমলে ট্রিপল এইচের ছিলো মহা প্রেম। ট্রিপল এইচ বন্ধুদের স্বার্থে চায়নাকে সোজা বাংলায় “ছ্যাঁক” দিয়েছেন। জানি না, এই কাজ তিনি কতোটা দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে করেছেন, কিন্তু এই ঘটনার পরে চায়নার ক্যারিয়ার WWE তে বেশ অস্বচ্ছ হয়ে আসে।

পরবর্তীতে চায়নাকে দেখা যায় হাওয়ার্ড স্টার্নসহ কিছু নগ্নতাবিশিষ্ট প্রোগ্রামে, এরপর তো একেবারে পর্ণস্টার। এসব দায় কি ট্রিপল এইচ একেবারেই না নিয়ে পারবেন? ওই যে, সেই পুরনো উক্তির কথা বলতে হয়, ক্লিক সবসময়েই ক্লিকের খেয়াল রেখেছে। শন ওয়ালটম্যান ট্রিপল এইচের অবর্তমানে চায়নার সাথে রিলেশনশীপ করেন এই সময়ে। এই জায়গায় একটা সংশয় আছে। এরা দুজনেই কি ট্রিপল এইচের কাছে প্রত্যাখ্যাত? শন ওয়ালটম্যানও কিন্তু WWE থেকে খুব বেশী কিছু পাননি। ক্লিকের একমাত্র অসফল সদস্য বলতে তাঁকেই বলতে হয়।

যাই হোক, দুই গাধা-গাধী নিজেদের ঘাড়ে মাথা রেখে কান্নাকাটি করলে করুক, আমরা ফিরে যাই ট্রিপল এইচের কাছে। তিনি এই ঘটনাটা যে কিভাবে ঘটিয়েছিলেন, সেটা রহস্যাবৃত। যেই কোম্পানিতে রেসলিং করেন, সেই কোম্পানিতেই নিজের বসের মেয়েকে পটিয়ে ফেলাটা কি একটা স্বাভাবিক ব্যাপার? 

হ্যাঁ, অনেকে বলতেই পারে, যে ট্রিপল এইচ কি দেখতে বুগিম্যানের মতো? তাঁকে কি কোনো মেয়ের পছন্দ হতে পারে না? হ্যাঁ, অবশ্যই পারে। কিন্তু ট্রিপল এইচই কেনো? আশেপাশে কি রক ছিলো না? যাই হোক, ২০০১ এর শেষের দিকে, ট্রিপল এইচ বসের মেয়েকে কব্জা করে যখন সবকিছু মোটামুটি গুছিয়ে এনেছেন, তখনই জানা গেলো, ফিরে আসছেন শন মাইকেলস।


• শন মাইকেলসের পুনর্জন্ম (রিবর্ন এন্ড ফরগিভেন):-

শন মাইকেলসের ফিরে আসার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়লো গোটা WWE রোস্টার। সবাই জানতো, যে এই লোকটা পারে না এমন কিছু নেই। পুরনোরা আগে থেকেই “শন আতঙ্কে” ছিলেন, নতুনেরা তাদের কাছ থেকে শুনে প্রমাদ গুনলো। না জানি এবার এসে কি করেন শন। এইখানে ঘটলো খুবই মজার একটা ব্যাপার। যিনি ফিরে এলেন তিনি শন মাইকেলসই বটে, তবে ৯০এর দশকের আত্মম্ভরি, সুযোগসন্ধানী, ধূর্ত শন মাইকেলস নন।

এই শন মাইকেলস ধীর-স্থির, সদাপ্রসন্ন, মিশুক ও ভদ্র শন মাইকেলস। মনে হলো আগের লোকটা যেনো হারিয়ে গেছে। এই শন মাইকেলস নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন সবার শেষে, বাকিদের সাহায্য করার জন্য যেন সদা প্রস্তুত তিনি। আসল রহস্য জানা গেলো পরে। শন মাইকেলস ইনজুরি তে থাকা অবস্থায় মনে করেছিলেন তাঁর আর কখনোই প্রো-রেস্লিঙ্গে ফিরে আসা হবে না, সেই ভয়াবহ ব্যাক ইনজুরির কারনে।

শন সেই সময় শুরু করেন ধর্মপালন, ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দেন নিজের ভাগ্য। পুরোপুরি ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যক্তিটি নিজের আগেকার সকল অপকর্মের জন্য ছিলেন মারাত্মকভাবে লজ্জিত, তাই ফিরে আসার পর তিনি সবার কাছেই কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা শুরু করেন (রতে সেসময় একটা সেগমেন্টে শন বলেছিলেন, তিনি চলে যাওয়ার পর ঈশ্বরকে খুঁজে পেয়েছেন। যার ফলে চতুর ভিন্স হুট করে একটা স্টোরিলাইন বানিয়ে ফেলেন, যাতে ভিন্স ও শেইন ম্যাকম্যানের সাথে ম্যাচ খেলেছিলো শন মাইকেলস এবং “গড।“বস্তুত সেটা একটা হ্যান্ডিক্যাপ ম্যাচ ছিলো।

গডের কি ঠেকা এসে রেসলিং করার?। ক্লিকের সদস্যেরা এবারের মতো ঝামেলায় আর কখনও পড়েনি। শন মাইকেলস তাদের সাফ জানিয়ে দেন, তিনি অন্যায্যভাবে আর কারো কোনো সাহায্য করতে পারবেন না। ফলে ট্রিপল এইচকে বাধ্য হয়ে ক্লিকের নেতার ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়, বসের মেয়েকে বিয়ে করার পর তিনি ছাড়া নেতা হওয়ার যোগ্যতা মনে হয় আর কারো অতোটা ছিলোও না।

এদিকে শন ক্লিকের ব্যাপারে তদ্বির করায় অসম্মতি জানানোয় গোটা ক্লিক যখন একটু বেকায়দায়, তখনই ভিন্স ম্যাকম্যান কোপ মারেন ক্লিকের ঘাড়ে। একেবারে নগদের মাথায় বের করে দেওয়া হয় কেভিন ন্যাশ আর স্কট হলকে। ন্যাশ পরে আরও দুইবার ফিরে আসেন বটে, কিন্তু হলকে আর কখনও দেখা যায়নি WWEতে। ন্যাশ ও হলের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার একটা উপায় তিনি অনেকদিন ধরেই খুঁজছেন। বলি হয়ে গেলেন এমনকি শন ওয়ালটম্যানও।

মেয়ে জামাইকে তো আর কিছু বলা যায় না, আর শন মাইকেলসের পরিবর্তন দেখে খোদ ভিন্সও প্রচণ্ড অবাক হয়েছিলেন, তাই শনের সাথে তাঁর আগের সুসম্পর্কটিই বজায় থাকলো। ভাগ্য পরিবর্তন হতে হতেও হলো না দুই অভাগার। এদের একজনের নাম “রোড ডগ” জেসি জেইমস, অন্যজন “মিস্টার অ্যাস” বিলি গান। এই দুজন মনে করেছিলেন, ক্লিকের বাকিরা চলে যাওয়ার হয়তো এদের কপালটা খুলবে।

কিন্তু যেমনটা আগে বলেছিলাম, ক্লিকের গঠনটা সুচতুর শন করেছিলেনই এমন কয়েকজন নিয়ে, যাদের হয়তো কোনো রেসলিং লিনিএজ নেই, কিন্তু এরা প্রত্যেকেই ভয়াবহ রকমের প্রতিভাবান (ওয়ালটম্যান ছাড়া )। তাই পরে আর কাউকে ক্লিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শন ক্রিয়েটিভ থাকাকালে অবশ্য এদের উপকার করার চেষ্টা করেছেন, এমনকি বিলি গানকে কিং অফ দ্যা রিংও বানিয়েছিলেন, কিন্তু হতভাগারা সেই সুযোগে বিখ্যাত হতে পারেনি। তাই শনকে চুপচাপ দেখে ভিন্স যখন এই দুটোকে ঘাড় ধরে বের করে দিলেন, তখন ট্রিপল এইচও কিছু বলতে পারলেন না। ডিএক্সের মেম্বার হলে কি হবে, শ্বশুর আব্বার কথার উপরে কি কিছু বলা যায়? যার হাতে আবার তাঁর ভবিষ্যৎ?

ট্রিপল এইচ তাড়াহুড়া করলেন না, শন তো পাশে আছেনই, হোক সে এখন ঈশ্বরভক্ত নরম-সরম মানুষ, তবুও মানুষটা শন মাইকেলস তো। প্রিয় বন্ধুদের কোম্পানি ছাড়ায় তিনি ব্যথিত হলেও ধৈর্যহারা হলেন না। ক্লিক বলতে গেলে তখন আর নেই বললেই চলে, একমাত্র ট্রিপল এইচ শক্তহাতে ধরে রাখলেন ক্লিকের ভবিষ্যৎ। ট্রিপল এইচের ইচ্ছা, শন মাইকেলসের মতো তিনি নিজেও বানাবেন একটি ক্লিক।

পুরানোদের সাথে মিলে সেইসব নতুনেরা শাসন করবেন গোটা প্রো-রেসলিং দুনিয়া। ট্রিপল এইচ গোটা ২০০২ সাল ধীরে ধীরে হবু শ্বশুর ভিন্সকে সাহায্য করতে লাগলেন, স্টেফিনিকে সময় দিতে লাগলেন। ২০০৩ সালে তাঁদের বিয়েটা হয়ে গেলে আর তাঁকে পায় কে? এসে গেলো সেই মাহেন্দ্রক্ষনও। ট্রিপল এইচ বসের মেয়েকে বিয়ে করেই মিশে গেলেন ক্রিয়েটিভদের মাঝে। রিক ফ্লেয়ারের সাথে খাতির করলেন, নিজের দলে ভেড়ালেন ডেভ বাতিস্তা ও র‍্যানডি অরটন নামে দুই নবপ্রতিভাকে। শুরু হলো আবারো ক্লিকের ত্রাস।


• ট্রিপল এইচের স্বৈরাচারঃ-

ট্রিপল এইচ ও তাঁর দলবল মিলে গোটা ২০০৩ সালে যা করলেন, সেটা স্বৈরাচার বললেও কম বলা হবে। ২০০৩ সালে বিয়ের আগ পর্যন্ত তিনি চুপ ছিলেন। এরমধ্যে কোম্পানিতে চলে এসেছে কিছু নতুন মেইন ইভেন্টার। ২০০১ সালেই ক্রিস জেরিকো দ্যা রক ও স্টোন কোল্ডকে হারিয়ে হয়ে গেছেন WWE চ্যাম্পিয়ন, কার্ট এঙ্গেলও জিতে গেছেন WWE টাইটেল। আরভিডি নিজের একটা ফ্যান ক্রেইজ বানিয়ে ফেলেছেন, এজ হয়ে গেছেন কিং অফ দ্যা রিং।

ভিন্স ঠিক যেমন ৯০এর দশকের শুরুতে হাল্ক ও সেইভেজের সাথে করেছিলেন, তেমনই এই দশকের শুরুতে করছিলেন। মিক ফোলি রিটায়ার করেছেন, রক ও অস্টিনও ততদিনে যাইযাই করছেন। ঠিক করা ছিলো এই জেরিকো, এঙ্গেল, এজ বা আরভিডিরাই শাসন করবেন এই দশক। কিন্তু এতো এতো মেইন ইভেন্টার থাকলে ট্রিপল এইচের কি হবে? ট্রিপল এইচ রক ও অস্টিনের সমসাময়িক, যেই সময়ে তাঁর অনিয়মিত হয়ে পড়ার কথা, সেই সময়েই তিনি ঝোপ বুঝে কোপ মারার সিদ্ধান্ত নিলেন। এমন সুযোগ আর আসবে না, WWE এর পুরো অপারেশন তাঁর হাতের মুঠোয়, এখনই তো সময়।

প্রথমেই জেরিকো এবং আরভিডি খুন হলেন ট্রিপল এইচের হাতে। এদের দুজনকেই তাঁর কাছে মনে হলো মেইন ইভেন্টের জন্য অযোগ্য। জেরিকো অলরেডি চলে এসেছিলেন মেইন ইভেন্টে, তাঁকে আবার ট্রিপল এইচের আদেশে চলে যেতে হলো মিড-কার্ডে। আরভিডি বেচারা তো তাঁর একমাত্র WWE চ্যাম্পিওনশিপটা জিতলেন গিয়ে ২০০৬ সালে। এজকে তাঁর আরও কিছু সময় বাজিয়ে দেখার ইচ্ছে হলো, তাই তাঁকেও মিড-কার্ডে পাঠানো হলো। এঙ্গেলকে তাঁর পছন্দই ছিলো, দয়া করে একমাত্র তাঁকেই রাখলেন মেইন ইভেন্টে।

এরপর থেকে কয়েক বছর যারা কখনও মেইন ইভেন্টে এসেছেন, এরা সবই ট্রিপল এইচের প্রিয়পাত্র। তিনি নিজে কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন, রতে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপনা করে পুরো ২০০৩ সালটাই কাটিয়ে দিলেন ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। অনেকে এলো আর গেলো, ট্রিপল এইচের সাম্রাজ্যের পতন হলো না। এরমধ্যে একটা গোপন ব্যাপার হয়েছিলো রেসলম্যানিয়া ১৯, ২০০৩ সালে। সেবার বুকারটিকে ট্রিপল এইচের সাথে জিতে চ্যাম্পিয়ন বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।

বুকার WCW এর একজন পরীক্ষিত মেইন ইভেন্টার, তাঁকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে একমাত্র সমস্যা ছিলো ট্রিপল এইচের। তিনি ক্রিয়েটিভদের কাছে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন, তাঁর কাছে বুকারকে এখনো মেইন ইভেন্টের উপযোগী মনে হয়নি। কাজেই মেইন ইভেন্টের উপযোগী হতে বুকারকে জেতানোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হলো। তিনি উপযোগী হলেন টানা ৩ বছর মিডকার্ডে কাটানোর পর, ২০০৬তে।

অস্টিন মাঝে একবার অল্প কিছুদিনের জন্য এসেছিলেন, ট্রিপল এইচের স্বৈরাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পালিয়ে বাঁচলেন তিনি। দ্যা রক অবশ্য এরপরেও অনেকদিন ছিলেন। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, এসব ঘটনার মাঝেই দ্যা রক নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিয়েছেন, তিনিও একজন বুদ্ধিমান মানুষ, বুঝেছিলেন আর বেশীদিন এখানে থাকা নয়। ট্রিপল এইচের শাসনামলের সময় দ্যা রক একজন হলিউড স্টার, এবং ট্রিপল এইচ সারা বছরের যা কামান, রক এক মাসেই এর বেশী উপার্জন করা শুরু করেন। তাই দ্যা রকের সাথে কোনো তেরিবেরি করার সাহস ট্রিপল এইচের কখনও হয়নি, কিন্তু তাই বলে তাঁকে মেইন ইভেন্টেও তিনি এরপরে আর ঢুকতে দেননি। রক ২০০৪ এর সময় একেবারেই WWE লিভ করেন।

২০০৩ ও ২০০৪ পুরো সময়টাই তিনি কাটান মেইন ইভেন্টে। জেতা হারা তো আছেই, কিন্তু পার্সোনাল ম্যাচ খেলে সময় নষ্ট করেননি, তাঁর প্রকৃত লালসা ছিলো ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিওনশীপের দিকে। তাই ২০০৫ সালের দিকে যখন জন সিনা একেবারে সমুদ্রের তলদেশ থেকে ভেসে উঠলেন, তখন কোম্পানির বাকি সদস্যেরা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ট্রিপল এইচ তারপরেও হার মানবেন না। নিজে খেলে যখন দেখলেন উঠতি রেসলার সিনার সাথে যুঝতে সমস্যা হচ্ছে, তখন তাঁর দুই প্রোটেজেকে এগিয়ে দিলেন সিনার কাছে।

র‍্যানডি অরটনের প্রতিভার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই, কিন্তু WWE তে নিজের ডেবিউএর ২ বছরেরও আগে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাটা একটু বাড়াবাড়ি নয় কি? ২০০৫ সালের রয়াল রাম্বলে জেতার কথা ছিলো জন সিনার। তাঁর উঠতি ক্রেইজ মনে করিয়ে দিচ্ছিলো স্টোন কোল্ডের সেই সাপোর্টের কথা। ট্রিপল এইচ বেঁকে বসলেন। না, বাতিস্তাকে জেতাতে হবে। সিনা এখনো তরুন, এতোবড় এচিভমেন্টের বয়স বা পরিপক্কতা কোনোটাই তাঁর এখনো আসেনি। ট্রিপল এইচ তাঁর প্রতি পদক্ষেপে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ৯০এর শন মাইকেলসকে।


• শেইন ম্যাকম্যানের অন্তর্ধান রহস্যঃ-

২০০৬ সালের দিকে পূর্ণতা পেলো ক্লিক। ক্লিকের প্রাক্তন ও বর্তমান নেতা ফিরে এলেন একইসাথে। পুনর্গঠিত হলো ডিএক্স। শন মাইকেলস আর ট্রিপল এইচ দাপিয়ে বেড়াতে লাগলেন মানডে নাইট রয়ের মেইন ইভেন্ট। ততদিনে আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে। ভিন্সের বড় পুত্র, শেইন ম্যাকম্যান কোনো এক অজ্ঞাত কারনে ছেড়ে দিয়েছেন WWE।

যেখানে শেইনকে ধীরে ধীরে ম্যাচ খেলিয়ে ভবিষ্যৎ ভিন্স ম্যাকম্যান বানানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিলো, WCW কে শেইন কিনেছিলেন, এমন একটা স্টোরিলাইন বানিয়ে যেখানে শেইনকে ভিন্সের পরেই সবচেয়ে বড় রেসলিং প্রোমোটার বানানোর কথা, তখন হঠাৎ শেইনের অন্তর্ধান একটু সন্দেহ কি জাগায় না? ২০০৬ সালে শন মাইকেলসের সাথে ভিন্স ম্যাকম্যানের স্টোরিলাইন রাইভালরিটা শেষ হওয়ার পরে একেবারে হুট করেই শেইন ম্যাকম্যানকে আর কখনও খুঁজেই পাওয়া গেলো না।

কিন্তু এই যে শেইন চলে গেলেন, এতে সবচেয়ে বড় লাভ হলো কার? যেই শেইন ছিলেন WWEতে বাবা ভিন্সের ডানহাত, নেক্সট ইন কম্যান্ড, তাঁর অবর্তমানে তাঁর শূন্যস্থান পুরন করছেন কে? শেইন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, WWEএর ব্যাপারে আর কোনোই উৎসাহ নেই তাঁর, তাহলে ভিন্সের এখন কিছু হলে WWE এর সমস্ত দায়িত্ব কে পাবে? বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিকটাই বা কে হবে? হ্যাঁ, তাঁর মেয়ের নাম এখানে আসবে।

কিন্তু মেয়ে যখন বিবাহিত, তখন মেয়ের আগে অবশ্যই চলে আসে মেয়ে জামাইয়ের নাম। ট্রিপল এইচ। এই যে, ট্রিপল এইচের অপারেশনের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পরেই শেইনের চলে যাওয়া, কিংবা শন মাইকেলসের সাথে রাইভালরির পরেই হঠাৎ সমগ্র প্রো-রেস্লিঙ্গের প্রতি শেইন ম্যাকম্যানের অনীহা, এ সমস্তই কি কাকতালীয়? নাকি এখানেও যোগাযোগ আছে ক্লিকের?

ন্যাশ ২০০৩ সালে ফিরে এসেছিলেন একবার, কিন্তু ইনজুরির কারনে তাঁকে আবার সাইডলাইন হয়ে যেতে হয়েছিলো। ট্রিপল এইচের টেস্ট প্রোজেক্টে র্যািনডি, বাতিস্তার পরে যোগ হয়েছে জন সিনার নামও। সিনার ব্যাপারে প্রথমদিকে ট্রিপল এইচ ছিলেন বেশ সরব, বেশ কিছু অফস্ক্রীন ইন্টারভিউতে বলেওছিলেন, যে এই লোকের কোম্পানিতে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

কিন্তু, সেই ভবিষ্যৎহীন লোকটি যখন ক্রমেই জনপ্রিয় থেকে জনপ্রিয়তর হয়ে উঠতে লাগলেন, তখন ট্রিপল এইচের আর কোনো উপায় ছিলো না তাঁকে প্রধান ফেইস বানানো ছাড়া। বাতিস্তার ব্যাপারে তাঁকে প্ল্যান কাজে লাগাতে অসমর্থ বলা যায়। বাতিস্তার বয়সটা কখনোই তাঁর পক্ষে ছিলো না। বাতিস্তা ২০০৫এ রয়াল রাম্বল জেতার সময়েই তাঁর বয়স প্রায় ৪০। তাঁকে তাড়াহুড়া করে রয়াল রাম্বল জেতানো, বা নিজে জব করে তাঁকে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন বানানোর দরকার ছিলো এখানেই।

ট্রিপল এইচ বুঝেছিলেন, যে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বাতিস্তা তাঁর সেরা সময়টা হারিয়ে ফেলবেন। র্যাননডির ব্যাপারে সেই ভয় ছিলো না। র্যাানডিও বুঝেছিলেন, যে কোম্পানিতে কিছু সুবিধা তিনি সবসময়েই পাবেন পল লেভেকের প্রিয়পাত্র হবার সুবাদে, কিন্তু প্রধান ফেইস হতে গেলে তাঁর নিজেরও কিছু যোগ্যতা লাগবে। সিনা বা র‍্যান্ডি কারো যোগ্যতা নিয়েই কোনো প্রশ্ন তুলবো না, কিন্তু একটা সময়ে দেখা গেছে এই দুজন ছাড়া মেইন ইভেন্ট ইমেজওয়ালা আর কোনো রেসলার ধারেকাছে নেই, তাই একটা সময় নিজেদের সাথেই এই দুজন খেলে গেছে একের পর এক ম্যাচ।

কিন্তু সেসময় এমন কেউ কি ছিলো না, যাকে মেইন ইভেন্টে সুযোগ দেওয়া যায়? জেরিকো আরভিডিরা তো বরাবরই ছিলেন, কিন্তু প্রতিবারই এরা ছিলেন উপেক্ষিত। স্টিং এমনকি WWEতে আসতে সাহসই পাননি। এছাড়া প্রতিভাবান নতুনেরা কেউ TNA, কেউ ROH, অথবা অন্যন্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট সার্কিটে গিয়ে খেলছেন। WWEএর, থুড়ি ট্রিপল এইচের, কখনোই তাঁদের কাউকে দরকার হয়নি।

পরবর্তীতে অনেক নতুন নতুন স্টার উঠে এসেছে। সিএম পাঙ্ক, বা ড্যানিয়েল ব্রায়ানের কথা বলা যায়। কিন্তু ক্লিকের সর্বনাশা ছোবল খেয়ে তাঁদেরও উঠে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। ধারনা করা হয়, সিএম পাঙ্কের WWE ছাড়ার নেপথ্য কারন, রয়াল রাম্বল ২০১৪তে বাতিস্তাকে জেতানো। খুব একটা মতবিভেদ হওয়ার কথা নয়, একটা ৫০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধকে দিয়ে মেইন ইভেন্ট খেলানোর চেয়ে রোম্যান রেইনসকে দিয়ে খেলালেও হয়তো কেউ কিছু বলতো না। কিন্তু বাতিস্তাকে জিততে দেখে রাগে ফেটে পড়েছে দর্শকেরা।

ফেইস বাতিস্তাকে হিল বানিয়ে ছেড়েছে। অনেক নতুন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ মেইন ইভেন্টার ছিলো হাতের কাছে। ব্রে ওয়াইয়াট, ড্যানিয়েল ব্রায়ান, রোম্যান, বা সিএম পাঙ্ক? যে লোকটা ২০১০ সালে তাঁর শেষ ম্যাচ খেলে গেছে, তাঁর ৪ বছর পরে ফিরে এসে জেতার চেয়ে যেই লোক ২০০৬ সাল থেকে টানা ফ্যান সাপোর্ট পাচ্ছে, এবং এখনো একটা রেসলম্যানিয়াতেও মেইন ইভেন্ট খেলতে দেওয়া হয়নি, তাঁর জেতাটা যুক্তিযুক্ত হতো না কি?


• ক্লিকের বর্তমান অবস্থা-

আসুন আমরা শেষে ক্লিক যোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটু জেনে নেই। ক্লিকের প্রথম নেতা শন মাইকেলস, প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন, অনেকের মতে সর্বকালের সেরা প্রো-রেসলার, ৯০এর দশকেরই সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র। কেভিন ন্যাশ প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন। তিনি আর স্কট হল একসময় বলতে গেলে গোটা WCW চালিয়েছেন। ন্যাশ এই দুজনের মধ্যে বেশী ক্ষমতাবান ছিলেন। হলের মাদক নিয়ে সমস্যা ছিলো বরাবরই।

ন্যাশকে দিয়ে ছাড়া এসব হতো না। এই দুজন মিলে WCW এর মতো একটা বড় রেসলিং এম্পায়ার ধসিয়ে দিয়েছেন। ট্রিপল এইচ। ইনিও প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন। সোজা কথায়, এই মুহূর্তে পুরো প্রো-রেসলিং দুনিয়াতেই সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। এঁর অঙ্গুলিহেলনেই ইদানিং প্রো-রেসলিং জগতে সবকিছু হয়। বাকি রইলো শুধু শন ওয়ালটম্যান। তাঁর সমস্যা ব্যাপক। একেবারেই মাইক স্কিল বলে কিছু ছিলো না বেচারার। তার উপরে আবার ট্রিপল এইচের ছেড়ে দেওয়া গার্লফ্রেন্ড চায়নার সাথে লাগাতার প্রেম করেছেন।

তবে ওয়ালটম্যান বা স্কট হলের রিহ্যাবের খরচ কিন্তু ট্রিপল এইচই দেন। ক্ষমতাধর হলেও তাঁর বন্ধুদের তিনি কখনোই ভুলে যাননি। এই কিছুদিন আগেও স্কট হলকে হল অফ ফেইম সম্মাননা দেওয়া হলো, এছাড়া ন্যাশও ইদানিং বেশ জমিয়ে ফিল্মে অভিনয় করছেন। মাঝেমাঝেই এসে ঘুরে যান WWEতে। আমরাও তাঁকে দেখে ধন্য হই। ট্রিপল এইচকে কি তবে কোনোভাবে স্বার্থপর বলা যাবে?

আরেকটা প্রশ্ন করা যায়। ট্রিপল এইচ কেনো ১৪ বার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন? যেখানে তার সমসাময়িকেরা এর চেয়ে অনেক কম বার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন? (দ্যা রক কিছুদিন আগে জিতে মোট ১০ বার, স্টোন কোল্ড ৬ বার) সেক্ষেত্রে স্টোন কোল্ডের চেয়ে কি এতোই বেটার সে? আবার যদি বিপরীত দিকে প্রশ্ন তুলি, যে বর্তমানে প্রো-রেসলিং এর হর্তা কর্তা, সে কি চাইলেই পারতো না, সর্বোচ্চ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিওনশীপের রেকর্ডটা নিজের পকেটে ভরতে? (রিক ফ্লেয়ার ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন)!

এই পোস্ট পড়ার পরে আমরা জানি, যে কিছুটা অনৈতিকতা ট্রিপল এইচ করেছেন নিজের স্বার্থে, কিন্তু যা ইচ্ছা তাই করতেই বা তাঁকে বাধা দিয়েছে কে? ট্রিপল এইচ যদি ২০১৪ সালেও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়, আমরা সাধারন ভক্তরা কিন্তু এতকিছু না দেখে অতীত রেকর্ড দেখে খুশীই হবো, আমাদের কাছে “যোগ্য রেসলার জিতেছে,” এমনই মনে হবে। ২০০২ এবং ২০০৬ এর পর তাঁর ইনজুরি ঘটিত তেমন কোনো সমস্যাও ছিলো না। এর কারন হিসেবে একটা খুব মজার প্রসঙ্গ টানা যায়।

২০০৩ সালে স্টেফের সাথে বিয়েটা যদি ট্রিপল এইচের কাছে লটারি জেতার মতো কিছু হয়েও থাকে, এবং চায়নাকে ছ্যাঁক দেওয়ার পর তাঁর সততা সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই, তবে পরবর্তীতে খুব সম্ভব স্টেফিনি ম্যাকম্যানকে তিনি মনে থেকেই ভালোবেসেছেন। এই দুজন একটি সুখী কাপল এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, এবং একজন সৎ ও প্রেমময় স্বামীর মতোই ট্রিপল এইচ তাঁর স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবারকেও আপন করে নিয়েছেন।

শেইন ম্যাকম্যানের অন্তর্ধান রহস্য যাই হয়ে থাকুক না কেনো, পরিশেষে তাঁর জায়গা নিয়ে ট্রিপল এইচ কিন্তু খুব খারাপ করছেন না। কোম্পানির ভালোমন্দ বুঝে তিনি নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন, যখন তিনি বুঝেছেন যে তাঁর সময় ফুরিয়েছে। সময়টা এখন তরুণদের। তাঁদেরকেই এখন সুযোগ করে দেওয়া উচিত। ইদানিং তিনি ইচ্ছা করেই সব ম্যাচে হেরে নতুনদের সুযোগ করে দেন, এটা কোম্পানির প্রতি ভালোবাসা না থাকলে তাঁর পক্ষে করা উচিত ছিলো না, কারন আমরা ২০০৩ সালে দেখেছি, ক্ষমতা থাকলে ট্রিপল এইচ কি কি করতে পারেন।

শেষ করার আগে একটা শেষ কথাও বলতে হয়। সেই কথাটা হচ্ছে, ক্লিক এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সামনে দিয়েই ক্লিকের দৌরাত্ম্য এখনো চলছে। হয়তো এটা কখনও শেষ হবে না। ভিন্স কিছু দিন পরে মারা গেলে, শাসন পুরোপুরিই ট্রিপল এইচের হাতে চলে আসবে, তখন তিনি আপনজনদের বাঁচাতে হয়তো আরও বেশী সক্রিয় হয়ে উঠবেন। আচ্ছা, ক্লিক আসলে কি? কিছু কাছের বন্ধুদের নিয়ে একটা গ্রুপ বৈ আর কিছু তো নয়। যারা অনেক আগে থেকেই বুঝেছিলো, যে পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর।

এখানে মামা-চাচা ছাড়া কোথাও কিছু হয় না। কিন্তু জীবনে প্রতিষ্ঠিতও তো হওয়া চাই। কয়েকজন কাছের বন্ধু মিলে তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যে নিজেরা বড় হওয়ার জন্য কখনও কারো কাছে সাহায্য চাইবেন না। নিজেদের বুদ্ধি ও ঐক্যের বলেই জীবন গড়বেন সবাই। এঁরা প্রায় প্রত্যেকেই নিজের নিজের প্রতিশ্রুতি পালনে সফল। তাঁদের সাফল্যে আমরা অভিভুত হতেই পারি, কারন এঁরা প্রথম জীবনে যা যা সংকল্প করেছেন, তার প্রতিটিই করে দেখিয়েছেন।

ভবিষ্যতে হয়তো এমন আরও ক্লিক বা ক্লিকসদৃশ দল আসবে। কেউ সফল হবে, কেউ ব্যর্থ, তবে শন মাইকেলস, ট্রিপল এইচ প্রভৃতি অন্তরঙ্গ বন্ধুরা প্রো-রেস্লিঙ্গের ইতিহাসে যা করে দেখিয়েছেন, তাতে তাঁদের সমকক্ষ হতে হয়তো আর কেউ কখনও পারবে না। এঁদের মহত্ত্ব এখানেই, “কিছু না” হিসেবে শুরু করেও আজ এঁরাই “সব কিছু।"

 • লেখকঃ Abid Hasan Chowdhury

The Kliq : রেসলিং ইন্ডাস্ট্রির গোপন ইতিহাস

বিঃদ্রঃ এই পোস্টে লেখা সমস্ত তথ্য লেখকের একান্ত মতামত, আমাদের তরফে কোন তথ্যের ক্রেডিট বা দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে না। পোস্টটি বৃহতাকার হলেও অতি গুরুত্বপূর্ণ, তাই একবারে না পারলে কয়েকবারে পড়ুন।

কটা বড় পোস্ট নিয়ে আবারো লেখার ইচ্ছা হলো। এবারের পোস্টটা ক্লিক (Kliq) নিয়ে। যারা এই ব্যাপারে খুব পরিস্কারভাবে জানেন না, তাদের জন্য ক্লিকের ব্যাপারে আগে একটু বিষদ বলে নেই। ক্লিক হলো পেশাদার রেসলারদের নিয়ে একটা গ্রুপবিশেষ, যারা নিজেদের স্বার্থে রেসলিং কোম্পানিতে একটা রেভোলিউশন জাতীয় করেছিলো, এবং রেসলিং ইন্ডাস্ট্রি কিছুটা লাভ, এবং ভয়াবহরকম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো এদের একতাবদ্ধতার ফলস্বরূপ; যার প্রমান এখনো পাওয়া যায়।

ক্লিকের এইসব রেসলারেরা ছিলেন যথাক্রমে শন মাইকেলস, ট্রিপল এইচ, কেভিন ন্যাশ, স্কট হল, শন ওয়ালটম্যান, প্রমুখ। ক্লিকের ইতিহাস হলো প্রো-রেসলিং জগতের সবচেয়ে নিন্দনীয় ইতিহাসের একটি, যার ভেতরে মন্ট্রিয়ল স্ক্রিউজবসহ আরও অনেক ঘটনাই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ক্লিকের গঠন ও বিচরন বিস্ময়করভাবে প্রো-রেসলিং ইতিহাসের অনেক মাইলফলকের প্রত্যক্ষ কারন, আবার অনেক অঘটনের নেপথ্য মাধ্যমও বটে।

এখানে অনেকের অনেক প্রিয় রেসলার বা পারসোনালিটি সম্পর্কে হয়তো অনেক ঘৃণ্য তথ্য জানা যাবে, সেক্ষেত্রে আমি চাই, প্রকৃত সত্যটা সবাই জানুক, আমাদের প্রিয় রেসলারেরা সবসময়েই আমাদের মনোরঞ্জন করেন, তবে প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত জীবনে পৃথক, আমাদের মতো তাদেরও সবারই কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার আছে যেগুলো তারা চান না কেউ জানুক। আসুন জেনে নেই, ক্লিক ও তাদের এসব ইতিহাস সম্পর্কে।

• ক্লিক (শুরুর গল্প) :-

শুরু করতে হবে সেই রকার্সের আমল থেকে। ১৯৮৮ সাল। আমাদের বেশীর ভাগের তখন জন্মই হয়নি (আমার নিজেরই হয়নি ), যখন শন মাইকেলস একজন ট্যাগটীম স্পেশালিষ্ট। মারটি জিন্যাটির সাথে তার তখন বেশ দহরম মহরম। ট্যাগ টীম ডিভিশনটা মোটামুটি তারা দখল করে রেখেছে, আর মেইন ইভেন্ট দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সেসময় হাল্ক হোগান, র‍্যান্ডি সেইভেজরা।

শন মাইকেলসকে বলা হয়, সর্বকালের অন্যতম সেরা প্রো-রেসলার। সেটা যতটা না তাঁর ইন-রিং এবিলিটির জন্য, তারচেয়ে অনেক বেশী তাঁর কোনো ব্যাপারে আগে থেকেই লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা, আর সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারার ক্ষমতার জন্য। তিনি সেসময়ে দেখলেন, মুলত বিশালদেহী রেসলারেরাই WWEতে মেইন ইভেন্ট খেলতে পারে। শ্রেয়তর ইনরিং, বা অসাধারন মাইক স্কিলওয়ালা রেসলারেরা বিশাল না হওয়ার কারনে তাদের মেইন ইভেন্টে নেওয়া হচ্ছে না।

শন নিজের অক্ষমতা বুঝতে পারেন। তিনি নিজে তখন বেশ ছোটোখাটো। উচ্চতা ৬ ফিটের কাছাকাছি, ওজন টেনেটুনে ২০০ পাউন্ড হবে, কোনো দিক দিয়েই তাঁকে বিশালদেহী বলা চলে না। এর কারণটা কিন্তু খুব বেশী অচিন্তনীয় নয়। একজন রেসলারকে সেসময় সবাই বিশাল দেখেই অভ্যস্ত। ছোটোখাটোদের জন্য মডেলিং বা ফিল্ম তো আছেই। যাদের আকার বিশাল না, তারা তাই সেসময় খুব একটা অ্যামেরিকান রেসলিংএ আসতো না। শন বুঝলেন, তাঁকে রেসলিং ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ কিছু করতে হলে শুধু সাধারন ট্যালেন্ট দিয়ে কিছুই হবে না, বরং এই ব্যাপারে সুচতুর কৌশলই পারে তাঁকে WWE এর মতো একটা বৃহৎ কোম্পানির মাথায় ওঠাতে।

বস্তুত, এভাবেই জন্ম হয় ক্লিকের। শন তাঁর খুব কাছের একজন বন্ধু “পল লেভেক” কে নিয়ে আসতে চান WWEতে। লেভেক WWEতে যোগ দেন একটা উদ্ভট গিমিক নিয়ে, যেখানে তিনি সবসময় রাজকীয় বেশভূষায় থাকতেন, এবং নিজেকে উচ্চবংশীয় দাবী করতেন। তাঁর নাম দেওয়া হয়, “হান্টার হার্স্ট হেল্মসলি” এই লেভেকই আমাদের অতি প্রিয় ট্রিপল এইচ। গিমিকটা যদিও খুব হাস্যকর ছিলো, কিন্তু লেভেকের কিন্তু প্রতিভার কোনো অভাব ছিলো না। কিন্তু যেহেতু WWEতে শুধু প্রতিভা দিয়ে কিছুই হয় না, তাই মেইন রোস্টারে আসতে তাঁর বেশ কিছু বছর লেগে গেলো। লেভেক ছিলেন সেসময় হালকা-পাতলা, শীর্ণকায়।

শন লেভেককে বললেন, আপাতত এদিকে খুব একটা সুবিধা হবে না। আগে WWEতে একটা শক্ত অবস্থান বানিয়ে নিতে হবে, তারপরে সে যেনো এদিকে আসে। সুতরাং লেভেক চলে গেলেন WCWতে। এদিকে শন কিন্তু WWEতে বসে নেই, তিনি তাঁর আরেক বন্ধুকে WWEতে নিয়ে এলেন। WWEএর বিশালদেহী রেসলারপ্রিতির কথা চিন্তা করেই শন তাঁর সেই ৭ ফুটিয়া বন্ধুকে এনেছিলেন, সেই বন্ধুর নাম “কেভিন ন্যাশ।” WWEতে তাঁর নামকরন করা হয় “ডিজেল।” লেভেকের ব্যাপারে সফল না হলেও এবারে শন বেশ সফল হলেন। একেবারে অচিরেই ন্যাশ চলে এলেন মেইন রোস্টারে, তাঁকে বানানো হলো শন মাইকেলসের অন-স্ক্রীন বডি-গার্ড।


• ক্লিকের বিস্তৃতিঃ-

সময়টা ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি। শন তখন তাঁর প্রাক্তন ট্যাগ টীম পার্টনার মার্টি জিন্যাটিকে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। চেষ্টা মোটামুটি ফলপ্রসূ। শন যে জিন্যাটির থেকে অনেক ভালো, সে ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ নেই, WWE ম্যানেজমেন্টও শনের পারফরম্যান্সে বেশ খুশী। শন তখন ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়ন, জ্যানেটি ৯৩ এর মে মাসের দিকে মানডে নাইট রতে শনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন, এরপরেই ন্যাশের আবির্ভাব হলো। শন হাঁফ ছেড়ে বাচলেন। নতুন গিমিকে প্রবেশ করলেন শন মাইকেলস “দ্যা হার্টব্রেক কিড।” শন শুধু ন্যাশের সাহায্য নিয়ে আইসি বেল্টটাই পুনরুদ্ধার করলেন না, বরং ন্যাশের ভরসাতেই শন ধীরে ধীরে মেইন ইভেন্টের দিকে একটু একটু করে হাত বাড়াতে লাগলেন।

১৯৯৩ এর সেপ্টেম্বরে, শন মাইকেলসকে ড্রাগ সেবনের শাস্তিস্বরূপ WWE থেকে বের করে দেওয়া হলো। শনের সাজানো বাগান প্রায় ছারখার হওয়ার উপক্রম হলো। শন তীব্রভাবে ড্রাগের অভিযোগ অস্বীকার করলেন। কিন্তু WWE তাঁর কোনো ওজর আপত্তিই শুনলো না। বস্তুত, সে সময়ে ভিন্স ম্যাকম্যান পর্দার আড়াল থেকে বেশ শক্তহাতে রেসলিং অপারেশন নিয়ন্ত্রন করতেন, আর তাঁর সাথে শনের তখনও খুব একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। অন-স্ক্রীন কারন দেখানো হলো, শন মাইকেলস তাঁর ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশীপ কারো সাথে ডিফেন্ড করছেন না, তাই তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

শন ব্যর্থমনোরথ হয়ে USWA এবং অন্য কিছু ক্রস-ব্র্যান্ড প্রোমোশনে খেলে এলেন। সুচতুরভাবে তিনি WCW এর অফারটা ফিরিয়ে দিলেন। WCW তে তখনও এরিক বিশফের শাসনামল শুরু হয়নি। যেসময় এতো কিছু হচ্ছে, এরিক তখনও WCW থেকে বেশ কিছুটা দূরে আছেন, কাজেই “মানডে নাইট ওয়ার” তখনও শুরু হয়নি, তবুও WCW তখন WWE এর বেশ নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী, NWA এর আওতাধীন হওয়ার পরেও।

ভিন্স ম্যাকম্যান যে বিশ্বস্ত এমপ্লয়ীদের পছন্দ করেন, আর তাঁর প্রিয়ভাজন হতে হলে যে কোনোমতেই WCW এর ধারেকাছে যাওয়া যাবে না, সেটা শন বুঝেছিলেন। অত্যন্ত চতুরতার সাথে তিনি WCW এর অফার ফিরিয়ে দিলেন, এদিকে WCWতে থাকা তাঁর বন্ধুদের সাথে কিন্তু ঠিকই যোগাযোগ রেখে চলতে থাকলেন। উভয় কোম্পানিতেই তিনি তখন তাঁর লোকজন ঢুকিয়েছেন, কাজেই কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে সব কিছুই ছিলো শনের নখদর্পণে।

নভেম্বরের দিকে আবার ফিরে এলেন শন মাইকেলস। প্রাক্তন বডি-গার্ড ন্যাশের সাথে টীম করে জিতলেন ট্যাগ টীম চ্যাম্পিয়নশিপ। অন-স্ক্রীনে এসময় ঘটে গেলো বেশ কিছু বড় বড় ঘটনা। শন এক্সিডেন্টালি সুপারকিক মারলেন ডিজেলকে, যার ফলস্বরূপ তাঁদের ট্যাগ টীম ভেঙ্গে গেলো, এবং শন নতুন বডি-গার্ড “সাইকো সিড” কে পেলেন তাঁর সঙ্গে। সিডকে শন আনেননি, সিড ভিন্সেরই আবিষ্কার। সিডের মোটা মাথায় যে শনের সুচতুর পরিকল্পনা ঢুকবে না, সেটা শন ভালোই আন্দাজ করেছিলেন। ভেতরে ভেতরে তিনি ন্যাশের সাথে তাঁর সুসম্পর্কটা বজায় রাখলেন।

ন্যাশ ততদিনে বব ব্যাকলান্ডকে হারিয়ে WWE চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, এদিকে শনও সিডের সাহায্য নিয়ে তাঁর আরেক বন্ধু রেইজর রেইমন (স্কট হল) কে হারিয়ে ৩য় বারের মতো ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ন্যাশ যে তাঁর আগে মেইন ইভেন্টে ঢুকে গেছেন, এ নিয়ে শন বিন্দুমাত্র হতাশও ছিলেন না। কারন তিনি জানতেন, যদি কেউ পারে তবে একমাত্র ন্যাশই পারবে তাঁকে মেইন ইভেন্টে নিয়ে তুলতে। শন চুপিসারে পল লেভেক ও শন ওয়ালটম্যানকে নিয়ে এলেন WWEতে। পুরোপুরিভাবে গঠিত হলো দ্যা ক্লিক (The Kliq), যারা এর পরের কয়েক দশক ধরে দাপিয়ে বেড়াবে পুরো রেসলিং ইন্ডাস্ট্রি।


• ক্লিকের ক্রিয়েটিভ দৌরাত্ম্যঃ-

শন শুরু করলেন ন্যাশের সাহায্য নিয়ে ধীরে ধীরে ভিন্স ম্যাকম্যানের সাথে দেখা সাক্ষাত শুরু করা। সেসময়ের শন মাইকেলসকে যারা দেখেননি, তাঁরা কখনও জানবেন না, তাঁর অসামান্য ক্যারিজমা, বা সম্মোহনী ক্ষমতা। পুরুষ হোক বা নারী, শন মাইকেলস কখনোই কোনো ব্যাপারে কাউকে রাজী করাতে অসমর্থ হননি। ন্যাশ তখন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন, তাঁর সাথে সাথেই লবি করতে থাকেন শন, উদ্দেশ্য ভিন্সের কৃপাদর্শন। এদিকে ট্রিপল এইচ হয়ে গেছেন তখন “দ্যা কানেক্টিকাট ব্লুব্লাড”, রেইজর রেইমন আছেন মিড-কার্ডে, আর উদীয়মানদের মধ্যে তখন ধরা হচ্ছে, শন ওয়ালটম্যান (1-2-3 কিড বা এক্স-প্যাক) কে। মূলত, সব জায়গাতেই লোকজন রেখে দিয়েছেন শন, কখন কাকে দরকার হবে তা কি আর বলা যায়?

ধীরে ধীরে চিঁড়ে ভিজলো। সবুরে মেওয়া ফলে গেলো। ভিন্স রাজী হলেন শনকে মেইন ইভেন্টে সুযোগ দেওয়ার জন্য। শনের এতদিনের পরিকল্পনা সফল হলো। এখানে অনেকের সাহায্য থাকলেও, প্রধানত বলতে হয় কেভিন ন্যাশের কথাই। তিনি না থাকলে শন মাইকেলস হয়তো বা “শন মাইকেলস” হতে পারতেন না। ভিন্স শনের হিল গিমিক পরিবর্তন করে তাঁকে বেইবিফেইস বানিয়ে দিলেন, চতুর ব্যবসায়িক বুদ্ধিসম্পন্ন ভিন্সের মনে হয়েছিলো শনের অমোঘ আকর্ষণী ক্ষমতার সুফল হয়তো তাঁরা ভোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ভিন্সের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠলেন শন।

এই পোস্ট পড়তে পড়তে হয়তো আপনাদের মনে হচ্ছে, “বাবা রে বাবা ! শন মাইকেলস এতো খারাপ লোক?” আমি কিন্তু দ্বিমত পোষণ করবো। শন মাইকেলস কখনোই খারাপ লোক ছিলেন না। প্রো-রেসলিং জগতটাই এমন, এখানে সততার ভাত নাই। তিনি শুধু বুদ্ধি খাটিয়েছিলেন, যোগাযোগ রেখেছিলেন। তাঁকে বুদ্ধিমান বলা যায়, কিন্তু অসৎ নয়। ... হুম, অসততা কিছুও তিনি করেছিলেন বটে। এবার আসি সেই ব্যাপারে।

শন মাইকেলস ভিন্সের কাছে আসতে পেরে এবার একটু বেশীই উন্মত্ত হয়ে উঠলেন। তিনি অকৃতজ্ঞ কখনোই ছিলেন না। যেসব প্রিয় বন্ধুরা তাঁকে কাছ থেকে সর্বদা রক্ষা করেছিলেন, তাঁদের রক্ষা করতে গিয়ে শন করলেন কিছু কু-কর্ম। ভিন্সের সাথে ২৪ ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করে এর মধ্যেই শন মাইকেলস পেয়েছিলেন ক্রিয়েটিভ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু অমুল্য ক্ষমতা। যারা অবগত নেই তাঁদের বলি, WWEতে একেকজন ক্রিয়েটিভ মোটামুটি ঈশ্বরের সমান ক্ষমতাশালী। এদের একেকজনের অঙ্গুলীহেলনে একজন রেসলার যেমন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, তেমনি টেরি জিন বোলেয়া নামক অখ্যাত তরুন “হাল্ক হোগান” হয়েও যেতে পারে।

শন ক্রিয়েটিভদের কিছু সিদ্ধান্তে পক্ষপাতসুলভ অসম্মতি জানালেন। কয়েকজন রেসলার ছিলো শনের অপছন্দের তালিকায়, এদের মধ্যে আছে কিছু বড় বড় রেসলারেরাও। ডিন ডগলাস ও ক্রিস ক্যানডিডোর WWE ক্যারিয়ার ধ্বংস হলো শনের হঠকারী সিদ্ধান্তে। আরও কিছু উদীয়মান এবং প্রতিশ্রুতিশীল রেসলারের উপরে খড়গহস্ত হলেন শন মাইকেলস। তাঁদের বেশীরভাগেরই একমাত্র অযোগ্যতা ছিলো, তাঁরা হয়তো কোনো না কোনোভাবে শন মাইকেলসকে ইমপ্রেস করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এসব প্রতিশ্রুতিশীল রেসলারের মধ্যে একজনের নাম ছিলো দ্যা রিংমাস্টার (স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন)।

ক্ষমতার নেশায় শন মাইকেলস হয়ে গেলেন স্বৈরাচারী। ভিন্স তখন হোগানের পর, কোম্পানির নতুন ফেইস তৈরিতে ব্যস্ত। তিনি এসব কিছু দেখছিলেন না, শনের ধ্বংসলীলায় বেশ কিছু রেসলার WWE ছেড়ে চলে গেলো। কোথায় গেলো? WCWতে। এরিক বিশফ তখন সবে এসে ঢুকেছেন WCWতে। শনকে থামানোর জন্য প্রয়োজন হলো এক অদ্ভুত ঘটনার, যা প্রো-রেসলিং ইতিহাসে “এমএসজি কার্টেন কল” নামে পরিচিত, ক্লিকের ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারন।


• এমএসজি কার্টেন কল ও মানডে নাইট যুদ্ধের সূচনাঃ-

১৯৯৫ সালের দিকে, শুরু হয়ে গেছে এটিটিউড এরা। WCW অলরেডি WWE এর দেখাদেখি একটা সাপ্তাহিক শো শুরু করে দিয়েছে। তার নাম “মানডে নাইটরো” প্রথম দিনেই ব্যাপক সাফল্যও পেয়েছে তারা। র এবং নাইটরো উভয় শোই সোমবার রাতে হওয়ায় একেবারে প্রথমেই WCW এর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, যেহেতু WWE অনেক পুরানো, এবং আগে থেকে তারা ওই দিনে শো করে অভ্যস্থ। সেক্ষেত্রে WCW এর তখনকার প্রোডাকশন এক্সিকিউটিভ (পরবর্তীতে হেড অফ অপারেশনস) এরিক বিশফের সাহসের প্রশংসা করতেই হয়।

এরিক বেশ কিছু ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তবেই সাহসী হতে পেরেছিলেন। ৮০ এর দশকে যেসব হাল্ক হোগান, সেইভেজরা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তাঁরা তখন আর WWEতে নেই। WWE ৯০ এর দশকের শুরু থেকেই এসব প্রতিষ্ঠিত স্টারদের বাদ দিয়ে নতুনদের দিকে মনযোগী হওয়া শুরু করেছে। হাল্ক বুদ্ধিমান লোক, সুবিধা হচ্ছে না বুঝতে পেরে ১৯৯৩ সালের দিকেই WWE ছেড়েছেন তিনি, মুভি ক্যারিয়ার শুরু করবেন এই আশায় হলিউডের আশাপাশে ঘোরাঘুরি করছেন। মাচো ম্যান সেইভেজের অবস্থাও ভালো না, ভিন্স তাঁকে পুরোদস্তুর ধারাভাষ্যকার বানিয়ে ছেড়েছেন। একজন রেসলারের ধারাভাষ্য দিতে ভালো লাগার কথা না, কিন্তু ভিন্স তাঁকে বুঝিয়েছেন, যে তাঁর চাহিদা আগের চেয়ে কমে গেছে, এবং এই কাজ না করলে তাঁকে আর রাখা নাও হতে পারে, কাজেই ঘাড় গুঁজে বেচারাকে কথা বলে যেতে হচ্ছে।

এরিক সবার আগে হাত করলেন এই দুজনকে। শন মাইকেলস, ব্রেট হার্টেরা তখনও উঠতি তারকা, রেসলিং বলতে মানুষ তখনও বোঝে হাল্ক হোগানদের। WCW তে নিজের বস টেড টার্নারকে রাজি করান এরিক, টেড ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে সাইন করান হোগান আর সেইভেজকে। হোগান মুভির ধান্ধা ছেড়ে চলে আসেন, সেইভেজও নিজের WWE চুক্তির ইতি ঘটিয়ে এরিকের ঘাঁটিতে চলে আসেন। সেই সময়ের আরেক সেনসেশন “রিক ফ্লেয়ারকে” এরিক আগেই নিয়ে এসেছেন। এরিক বিশফের WCW মানডে নাইটরো ঝাঁপিয়ে পড়লো WWE এর উপর।

প্রথম রাতেই এরিক দিলেন মহা সারপ্রাইজ। হোগান WWE ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাঁর শূন্যস্থান পূরণের জন্য আনা হয়েছিলো “লেক্স লুগারকে।“ লুগার ঘাড়ে-গর্দানে দানব বিশেষ, তাঁকে দেওয়া হয়েছিলো হোগানের অ্যামেরিকান দেশপ্রেমী গিমিক। কিন্তু লুগার প্রমান করেছিলেন, যে তিনি হোগান নন। চরমভাবে ব্যর্থ হন হাল্ক হতে গিয়ে, ফলে এরিক বিশফ ন্যুনতম সম্মানীর কথা বললেও তিনি WWE ছেড়ে WCW তে আসার জন্য রাজী হন।

এরিক নিজেই পরে বলেছেন, যে তাঁর ধারনা ছিলো, লেক্স এতো কম টাকায় রাজী হবেন না, কিন্তু লেক্সের কাছে তখন WWEতে থাকা প্রায় শাস্তিস্বরূপ। প্রায়ই তাঁকে নিয়ে WWE এর আক্ষেপের কথা শুনতে শুনতে তিনি ক্লান্ত ও বিদ্ধস্ত। বিশফ তাঁকে বলেন, চুক্তিমাফিক WWE এর সাথে নিজের শেষ রাতে পারফর্ম করে, কাউকে না জানিয়েই তিনি যেনো চলে আসেন WCWতে। লেক্স তাই করলেন। মানুষ বিস্ময়াভিভূত হয়ে গেলো। ব্যাপার কি? এই লোকটা না WWE এর? সে এখানে কি করে? তখনকার সময়ে ইন্টারনেটে দেখা যেতো না, যে কে কোন কোম্পানিতে আছে। ফলে, সবাই ধরেই নিলো, যে লুগারও WWE এর লোক।

ভিন্স তখন নিজের কপাল চাপড়াচ্ছেন। লুগার তাঁকে কিছু না জানিয়ে তাঁর কোম্পানির মানসম্মান ডুবিয়ে বসে আছেন। দর্শক মনে করছে, WWE এতোই নিচু কোম্পানি, যে তাঁরা চুরি করে অন্যদের শোতে চলে আসে। প্রথম সপ্তাহে WCW এর হলো বিশাল বিজয়। WWE বুঝলো, যে সামনে ঘোর বিপদ। সৃষ্টি হলো মানডে নাইট নিয়ে যুদ্ধ (Monday Night War)। ভাবছেন, ক্লিক নিয়ে লেখায় এরা আবার কেনো আসছে? কারন নিচের প্যারায়।

আগেই বলেছিলাম, যে শন মাইকেলস এবং ক্লিক তখন ক্ষমতার নেশায় প্রায় বিস্মৃত হয়েছে, যে তারাও সাধারন মানুষ, তাদেরও জবাবদিহি করতে হতে পারে। ১৯৯৫ সালের একটা হাউজ শো এর সময়কার ঘটনা, শোটা হয়েছিলো বিখ্যাত রেসলিং স্টেডিয়াম “ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে।” মেইন ইভেন্ট ছিলো ডিজেল আর শন মাইকেলসের মধ্যে। অন্য আরেকটা ম্যাচ খেলার কথা ট্রিপল এইচ, আর রেইজার রেইমনের।

শন আর ন্যাশের মেইন ইভেন্ট শেষ হওয়ার পরে এক বিচিত্র ঘটনা ঘটলো, রিঙে চলে এলেন ট্রিপল এইচ, রেইজার রেইমন, আর শন ওয়ালটম্যান। রেসলিং গিমিক অনুযায়ী তখন রেইমন আর মাইকেলস ফেইস, আর ওয়ালটম্যান, ট্রিপল এইচ এবং ডিজেল হিল, বা নেগেটিভ রেসলার। এরা সর্বসমক্ষে একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। উপলক্ষটা বোঝা গিয়েছিলো আরও পরে। বস্তুত, ন্যাশ আর স্কট হলের চুক্তি WWE এর সাথে সেই রাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাঁরা চলে যাচ্ছেন। তাই শেষবারের মতো ৫ বন্ধু একে অপরের সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন। দর্শকেরা ফেটে পড়লো অভিযোগে।

তখনকার আমলে ফেইস আর হিলের নিয়মটা খুব কড়া করে মানা হতো, সাধারন মানুষেরা জানতেনও না, যে স্ক্রিপ্টের বাইরেও এদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকা সম্ভব। এই ঘটনাকেই বলা হয়, বিখ্যাত “এমএসজি কার্টেন কল ইনসিডেন্ট।“ ভিন্স প্রচণ্ড রেগে গেলেন, এদের শাস্তি দিতেই হবে। শন মাইকেলস তখন কোম্পানির ভবিষ্যৎ, তাঁকে শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। হল ও ন্যাশ এরা এমনিতেই চলে যাচ্ছে, ওয়ালটম্যানকে কখনোই কেউ গোনার মধ্যে ধরেনি, তাই শাস্তিটা শেষ পর্যন্ত পেতে হয়েছিলো ট্রিপল এইচকে।

ট্রিপল এইচ তখন উদীয়মানদের মধ্যে বেশ প্রতিশ্রুতিশীল একজন বলে গন্য, ১৯৯৬ সালের কিং অফ দ্যা রিং জেতার জন্য তাঁকে বিবেচনা করে রাখা হয়েছে। শাস্তিস্বরূপ, তাঁর কাছ থেকে সেই অর্জন কেড়ে নেওয়া হলো, দিয়ে দেওয়া হলো “দ্যা রিংমাস্টার” নামে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত একজন রেসলারকে। জানা যায়, ট্রিপল এইচ নিজের দোষ স্বীকার করেছিলেন, মাথা পেতে নিয়েছিলেন এই শাস্তি। এখন ডেইমিয়েন স্যানডাও এর মতোই তাঁকে টানা বেশ কয়েক মাস সকল ম্যাচ হারানো হলো। শন তাঁকে বলেন ধৈর্য ধরতে। এদিকে হল ও ন্যাশও নেই। ক্লিক কি তবে ধ্বংস হয়ে গেলো? মোটেই না। ক্লিক বরং আরও বিস্তার লাভ করলো।


• আউটসাইডারস, এনডব্লিউও এবং ডিএক্সঃ-

১৯৯৬-৯৭ এর দিকের সময়, মানডে নাইট যুদ্ধ তখন চরম পর্যায়ে। রেটিংসে কখনও WWE এগিয়ে, আবার কখনও WCW। এরিক বিশফ নামের জিনিয়াস তখন করলেন এক ভয়াবহ পরিকল্পনা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁর দরকার ছিলো রেইজার রেইমন নামে খ্যাত স্কট হলকে। বিপুল পরিমানের অর্থলোভ দেখিয়ে হলকে, এবং পরে কেভিন ন্যাশকেও WCW তে আসার জন্য রাজি করালেন তিনি। তবে শর্ত ছিলো, শুধু চুক্তি সাক্ষর করলেই হবে না, বরং লেক্স লুগারের মতোই চুপিসারে চলে আসতে হবে কাউকে না জানিয়ে। হল ও ন্যাশ রাজি হলেন। ভিন্স তখন এই দুজনের উপর বেশ ক্ষেপা।

মনে করা হয় এমএসজি কার্টেন কল ইনসিডেন্ট ঘটিয়ে ভিন্সকে খেপিয়ে দেওয়াটাও ক্লিকের পরিকল্পনার একটা অংশ ছিলো, কারন ভিন্স না খেপলে এতো সহজে এই দুজন WWE এর শত্রুশিবিরে গিয়ে উঠতে পারতেন না। পরিকল্পনামাফিক, প্রথমে হল ও পরে ন্যাশকে দেখা যেতে লাগলো WCW এর বিভিন্ন সাপ্তাহিক শোতে। এরা নিয়মিত রেসলারদের মতো করে আসতেন না, সবসময়েই এদের দেখা যেতো দর্শকের সারিতে বসে থাকতে, হাতে টিকেট। মাঝে মধ্যে মাইক হাতে নিলেও নিজেদের সম্পর্কে কিছুই বলতেন না এরা। মোটামুটি কমন কথাটা থাকতো দর্শকদের উদ্দেশে, “তোমরা জানো আমরা কে, এও জানো আমরা কোথা থেকে এসেছি, কিন্তু জানো না যে কেনো এসেছি।"

বোঝাই যাচ্ছে, ইঙ্গিতটা একেবারেই WWE এর দিকে। সাধারন দর্শকেরা বিশ্বাস করে ফেললেন, যে এরা WWE এর লোক। এবং যেহেতু WCW এর সাথে একটা প্রতিযোগিতা চলছে, কাজেই এরা এসেছে WCW কে ধ্বংস করতে। বিশফের এমনই পরিকল্পনা ছিলো। তখন রেসলারদের চুক্তি শেষ হয়ে গেলে সেটা এতো সারম্বরে বলার রেওয়াজ ছিলো না, তখন WWE.Com ও ছিলো না, যে সেখানে লিখে দেওয়া হবে। কাজেই WWE এর ফ্যানেরা এদের কারনে চলে এলেন WCW তে। তাদের বিশ্বাস, WCW এর সাথে WWE যুদ্ধে নেমেছে, তাঁরা সমর্থন দিলেন ন্যাশ ও হলকে। এক মুহূর্তের জন্যও কেউ বুঝলো না, যে সমস্তই এরিক বিশফের ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্কপ্রসূত অসাধারন এক পরিকল্পনা। WCW আরও এগিয়ে গেলো রেটিং এর দিক দিয়ে। ভিন্সের কপালের বলিরেখা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো।

ব্যাপারটা প্রমান করা যাবে না, তবে মনে করা হয়, এসবে হাত আছে শন মাইকেলসেরও। শন ভিন্সকে গিয়ে বোঝান, যে হল ও ন্যাশকে থামানোর জন্য WWE এর তৈরি করা দরকার একটা ডি-জেনারেশন-এক্স। ভিন্সের কোনো উপায় ছিলো না। তিনি রাজি হলেন। গোড়াপত্তন হলো ডিএক্সএর। ডিএক্স শুরু থেকেই একটা প্রাপ্তবয়স্ক মজাকেন্দ্রিক পরিবেশ তৈরি করলো। কাজেই WWE এর শুরু থেকেই বাচ্চাদের নিয়ে তৈরি করা ফ্যানবেইজ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এতে ক্ষতির চেয়ে লাভ হয়েছিলো বেশী। কারন, WCW ইতিমধ্যেই হোগান, স্টিং, সেইভেজ, ন্যাশ ও হলদের নিয়ে সেই মার্কেটের উপরে ভালোরকম কব্জা করে রেখেছে, কাজেই WWE ডিএক্সদের দিয়ে কিছু নতুন প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকদের প্রলুব্ধ করলো তাদের শো দেখতে। শন মাইকেলসের এতে লাভ হলো সবচেয়ে বেশী। তিনি জাঁকিয়ে ঢুকে পড়লেন মেইন ইভেন্টে। হয়ে গেলেন ওই দশকের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র। ট্রিপল এইচের শাস্তিও তখন শেষ। ১৯৯৭ সালের কিং অফ দ্যা রিংটা জেতানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তাঁকে দিয়ে, যদিও এক বছর আগেই সেটা জেতার কথা ছিলো তাঁর।
এদিকে, যখন ডিএক্স চায়নাকে নিয়ে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক গিমিক চালাচ্ছে, বিশফ তখনও ব্যস্ত প্রতি সপ্তাহে WWE এর কফিনে এক একটা নতুন পেরেক ঠুকতে। তিনি এবার পরিকল্পনা করলেন নতুন কিছু করার, এতদিন ন্যাশ ও হলকে বলা হচ্ছিলো “দ্যা আউটসাইডারস।” বিশফ ঠিক করলেন, এদের সাথে তৃতীয় কাউকে দিয়ে একটা স্টেবল তৈরি করার, যেটা পুরো WCW এর উপর রাজত্ব করবে। এই চরিত্রের জন্য ঠিক করা হলো “দ্যা আইকন স্টিং” কে। প্রায় সকল কিছু ফাইনাল, এমন সময়ে হাল্ক হোগান এসে বিশফকে বললেন, তিনি হতে চান, আউটসাইডারদের তৃতীয় মেম্বার।

বিশফের মাথায় বজ্রবিদ্যুৎ বাড়ি মারলো, স্বীকার করতে বাধ্য হলেন স্টিং এর চেয়ে ১০০ গুন বেশী দরকার এখানে হোগানকে। হল ও ন্যাশকে শুরু থেকেই WWE এর ঘাতক হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি, কাজেই এখানে নতুন কোনো মেম্বার এলে সেটা অবশ্যই এমন কেউ হওয়া উচিত, যার নামের সাথেই WWE আছে। স্টিং একজন বিখ্যাত রেসলার, কোনো কোনো দিক দিয়ে হোগানের থেকেও, কিন্তু হোগানের মতো WWE এর ট্রেডমার্ক নন তিনি। রচিত হলো ইতিহাস। হাল্ক হোগান জীবনে প্রথমবারের মতো হিল ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেন। গঠিত হলো এনডব্লিউও (NWO)। হোগান ও দুজন ক্লিক যোদ্ধাকে নিয়ে।


• মনট্রিওল স্ক্রিউজবের পটভূমিঃ-

১৯৯৭ সাল। ক্লিক বিভক্ত হয়ে গেছে দুই কোম্পানিতে। স্কট হল ও কেভিন ন্যাশ তখন হাল্ক হোগানের সাথে এনডব্লিউও হয়ে প্রতি সপ্তাহে WCW এর মেইন ইভেন্ট কাঁপাচ্ছেন। আর এদিকে WWE তে ডিএক্স নিয়ে ব্যস্ত আছেন শন মাইকেলস আর ট্রিপল এইচ। শন ওয়ালটম্যান বা এক্স-প্যাককেও নিজেদের ঘাঁটিতে নিয়ে গেছেন এরিক বিশফ। ট্রিপল এইচের সাথে তখন “চায়না” নামধারীনি জোনি লরারের মহা ইটিশ-পিটিস চলছে। তিনি ডিএক্সে এসে ট্রিপল এইচ আর শনের সাথে বিভিন্ন সেগমেন্টে অংশ নিচ্ছেন। কাজেই ক্লিকে না থেকেও ক্লিকের খণ্ডকালীন বিভিন্ন ব্যাপারে একমাত্র ট্রিপল এইচের প্রেমিকা হওয়ায় তাঁর জন্য দ্বার ছিলো অবারিত।

ক্লিকের সেসময়ের মাথাব্যাথার নাম ব্রেট হার্ট। ব্রেট শনের মতো বুদ্ধি খাটানোর ঝামেলায় যান নি। নিজের যোগ্যতায় বহুদিন মিড-কার্ড, আপার মিড-কার্ড ঘোরাঘুরি করে সামর্থ্যের প্রমান দিয়ে এসেছেন মেইন ইভেন্টে। ভিন্সের সাথে বেশ সুসম্পর্কও আছে তাঁর। কাজেই ভিন্স ব্রেটকে তুলে দিয়েছেন একেবারে টপ ফেইস হিসেবে। শন দেখলেন সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। ব্রেটকে সরাতে না পারলে তাঁর তো মেইন ইভেন্টে জায়গা হবে না।

শন অবশ্য ভদ্রলোক। প্রথমেই কোনো কুটিল পদ্ধতিতে গেলেন না। তিনি বরং ভালমানুষের মতো ব্রেটকে ক্লিকের একটা মিটিংএ ডেকে আনলেন। তারপর বেশ বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই প্রস্তাব দিলেন, ক্লিকে জয়েন করার জন্য। শনের উদ্দেশ্যটি খুব মহৎ। ব্রেট একবার রাজি হয়ে গেলেই হয়, ক্লিকের নেতা হিসেবে এর পর থেকে ব্রেটের ভবিষ্যৎটিও থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয়। কিন্তু সেই গুড়ে বালি ঢেলে দিলেন ব্রেট নিজে। রুঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যাত করলেন শনকে। শাসালেন এই নিয়ে পরবর্তীতে তাঁর কাছে আর না আসতে। কাজেই, ঘি ওঠাতে আঙ্গুল বাঁকাতেই হলো শন মাইকেলসকে।

এদিকে, এরিক বিশফ চালাচ্ছেন তাঁর ধ্বংসলীলা। প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন নিয়ম বের করছেন WWE কে খতম করার জন্য। টার্নার সাহেবকে বলে কয়ে WCW নাইটরোর প্রচার সময় এগিয়ে এনেছেন আগে, যাতে র প্রচারের আগেই নাইটরো প্রচার হতে পারে। এখনের মতো WWE আগেও তাদের শো রেকর্ড করে রেখে পরে টিভিতে প্রচার করতো, অন্যদিকে WCW সরাসরি সম্প্রচারিত হতো। বিশফ নিজের শোতে WWE রতে কি হবে না হবে, সব বলে দেওয়া শুরু করলেন, যাতে কি হবে না হবে এসব জেনে দর্শক আর র না দেখেন, আর তাঁদের টিআরপি ক্রমবর্ধমান হয়। এতোকিছু করেও বেচারা ভিন্সের উপর এরিকের শয়তানী মস্তিষ্কের দয়া হলো না।

WWE থেকে সদ্য অবসর নেওয়া “এলানড্রা ব্লেইজ” WCW তে এলেন “মাডিউসা” নামে। সাথে তখন সদ্য জেতা WWE উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ। বিশফ অনুরোধ করলেন ব্লেইজ যেনো যেভাবে সম্ভব বেল্টটা সাথে করে নিয়ে আসেন। নিয়ম ছিলো, নিজের জেতা বেল্ট চ্যাম্পিয়ন নিজের কাছেই রাখতে পারবেন, কিন্তু ব্লেইজ যা করলেন, তা ছিলো চরম অসম্মানজনক। বিশফ তাঁকে বাধ্য করলেন লাইভ WCW নাইটরোতে এসে WWE উইমেন্স বেল্টটাকে আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়ার জন্য। ফেলার আগে তাঁকে দিয়ে এও বলালেন, “আমি মনে করি WWE উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশীপের জায়গা আবর্জনার ঝুড়িই হওয়া উচিত।“

ফিরে আসি WWE তে। ভিন্স পুরাই বিশফ আতঙ্কে পর্যুদস্ত। চুক্তি শেষ হওয়া প্রতিটা WWE রেসলারকে যেনো সাপের মতো ছোবল মেরে নিয়ে নিচ্ছে WCW। ভিন্সের পছন্দের বেইবিফেইস ব্রেটের চুক্তির মেয়াদও শেষপ্রান্তে। ব্রেট সৎ মানুষ, আগে থেকেই ভিন্সকে জানিয়ে রেখেছেন যে, বিশফ তাঁকে একটা অফার দিয়ে রেখেছে, এবং চুক্তি শেষ হলে তিনি WCW তেই যাচ্ছেন। এখানে ঘটলো এক চক্রান্ত।

নভেম্বরের দিকে ব্রেটের হোমটাউন, ক্যানাডার মনট্রিওলে ব্রেটের শেষ ম্যাচ পড়েছে শন মাইকেলসের সাথে। ব্রেট তখন WWE চ্যাম্পিয়ন, তাঁর ইচ্ছা নিজের শহরে শনকে হারিয়ে বেল্টটা নিয়ে রিটায়ার করবেন। ম্যাচটা হবে সারভাইভর সিরিজ পিপিভিতে। ভিন্স রাজি হলেন। বাধ সাধলেন শন মাইকেলস। শন ভিন্সের কান ভারী করলেন, বললেন তিনি জানেন যে ব্রেট ব্লেইজের পদাঙ্কই অনুসরন করবেন। ভিন্স পড়ে গেলেন আতান্তরে। উইমেন্স টাইটেল না হয় হলো, কিন্তু কোম্পানির প্রধান চ্যাম্পিয়নশিপ আবর্জনার ঝুড়িতে নিক্ষেপ করার ঝুঁকি তো নেওয়াই যায় না।

শেষে ভিন্স আর না পেরে ব্রেটকে সরাসরি প্রস্তাব করলেন, শনের সাথে ম্যাচটা হেরে বেল্টটা শনকে দিয়ে তারপর WWE ছাড়ার। ব্রেট বিস্মিত হলেন, কিন্তু রাজি হলেন না। নিজের দেশে ম্যাচ, জিতবেন বলে কতো আশা করে আছেন, এখন হারতে হবে মানে? অনেক ঝগড়াঝাঁটি আর রাগারাগির পর, অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, ব্রেটকে ম্যাচটা জেতানো হবে। কিন্তু ম্যাচ শেষে ব্রেট অবশ্যই ভিন্সকে বেল্টটা দিয়ে তারপর যাবেন। এখান থেকেই সুচনা হলো মনট্রিওল স্ক্রিউজবের।

• মনট্রিওল স্ক্রিউজব ও ক্লিকের ভূমিকাঃ-

এই বিখ্যাত ঘটনাটা একটু বিস্তারিত বলা দরকার। আমার মতে, রেসলিং ইতিহাসেরই সবচেয়ে নিন্দনীয় ঘটনা এটি। আশেপাশে অনেক ঘটনা ঘটেছিলো, চেষ্টা করবো যতোটুকু সম্ভব সবদিক স্পর্শ করেই যাওয়ার। ধারনা করা হয়, এই মনট্রিওল স্ক্রিউজবেও ক্লিকের হাত আছে। শন মাইকেলসের দুজন সৈনিক হল ও ন্যাশ তখন WCWতে, এরিক বিশফের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। কার্টেন কলের সুবাদে ভিন্স এদের মধ্যকার সুসম্পর্কের কথাও জানতেন। কাজেই, শন যখন বললেন, যে তিনি বিশ্বাসযোগ্য সুত্র থেকে জেনেছেন, যে ব্রেট বিশ্বাসঘাতকতা করবেন, তখন ভিন্স সেটা একেবারেই উড়িয়ে দিতে পারলেন না।

সকল রকম ইমোশনাল বাক্যালাপের পর ভিন্স মনস্থির করলেন, প্রান গেলেও তিনি ব্রেটকে WWE চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে WCW তে যেতে দেবেন না। যেহেতু ব্রেটকে রাজি করানো যাচ্ছে না, কাজেই অসদুপায় অবলম্বন করা ছাড়া এখানে আর কোনো রাস্তাই খোলা নেই। ভিন্সের দোষ দেওয়াও যায় না। মাডিউসার ঘটনার পর যদি এখন WWE টাইটেল বেল্টটিকেও কোনো রকম অসম্মান করা হয়, তবে তাঁর কোম্পানির হবে আক্ষরিক অর্থে চাট্টিবাট্টি গোল। না খেয়ে মরতে হবে, শুধু তাঁকে না, তাঁর কোম্পানিতে কাজ করা আরও অসংখ্য রেসলার ও চাকুরীজীবীকে।

হেড রাইটার (যিনি স্টোরিলাইন বানান) ভিন্স রুসোকে নিয়ে হতে লাগলো মুহুর্মুহু রুদ্ধদ্বার বৈঠক। কিন্তু, কোনোভাবেই ব্রেটকে না জানিয়ে বেল্ট রেখে দেওয়ার কোনো উপায় তাঁরা বের করতে পারলেন না। রুসো এক পর্যায়ে রেগেমেগে বলে দিলেন, “এতো কিছু না ভেবে রেফারি দিয়ে পিন করে শনকে জিতিয়ে দিলেই তো হয়।” হায় রুসো! তিনি নিজেও জানতেন না, ভিন্স ম্যাকম্যান তখন খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো এই আইডিয়াটাকেই আত্মস্থ করবেন। রচিত হলো নীল নকশা।

ভিন্স ম্যাকম্যান ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করলেন শন মাইকেলসের সাথে। শন তখন সাফল্যের নেশায় বাকিসব ভুলে বসে আছেন। তিনি ভিন্সকে সমর্থন দিলেন। কিন্তু ব্রেটের শহরে তাঁকে হারানোয় যে কি ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এই চিন্তাটা ভিন্স করলেও শনের মাথায় আসে নি। একেবারে নিমেষেই দুই ভাগ হয়ে গেলো গোটা WWE। ব্রেট কানাঘুষা শুনলেন, যে তাঁর সাথে কোনো ধরনের অনৈতিক ঘটনা ঘটতে পারে।

তাঁর পরিবারের সদস্য, বর্তমান ডিভা নাটালিয়ার বাবা “জিম নাইডহার্ট” তাঁকে পরামর্শ দিলেন, কখনোই “লেই ডাউন” না করার জন্য, এবং সবসময়েই কিক আউট করতে প্রস্তুত থাকার জন্য, যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। ব্রেটের ছোটো ভাই ওয়েন হার্ট, কাজিন ব্রিটিশ বুলডগ এরা সবাই ব্রেটকে ব্যাক আউট করার, ম্যাচটা না খেলার কথা বললেন। ব্রেট সরাসরি ভিন্সকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভিন্স হলফ করে বললেন, মনট্রিওলে ব্রেটের কাছেই থাকবে চ্যাম্পিয়নশিপ।

WWE এর ভেতরেও এই নিয়ে আলোচনা হলো। সবাই বুঝতে পারলো কিছু একটা অমঙ্গল ঘটতে চলেছে। ভিন্সের একজন প্রিয়পাত্র, WWE এর প্রতি সদাবিশ্বস্ত, এবং সম্প্রতি WCW এর অফার ফিরিয়ে দেওয়া আন্ডারটেইকার ব্যাকস্টেজে চেপে ধরলেন শন মাইকেলসকে। হুমকি দিলেন, যদি কোনো ধরনের গোলমাল হয়, তবে শন তাঁর হাতে খুন হবে। শন মারাত্মক ভয় পেলেন। ট্রিপল এইচ আর চায়না কোনোমতে সরিয়ে নিয়ে গেলো ডেডম্যানকে। এসমস্তই সত্যিকারের ঘটনা, এখানে কোনো স্টোরিলাইন নেই।

মনট্রিওলে শুরু হলো ১৯৯৭ সালের সারভাইভর সিরিজ। শুরুর ম্যাচ চলতে লাগলো। স্টোন কোল্ড ওয়েন হার্টকে হারিয়ে আইসি বেল্ট জিতলেন। দর্শক তুমুল নিন্দা জানালো, অথচ তখন অস্টিন ফেইস, আর ওয়েন হিল। যখন অন্য ম্যাচ চলছে, তখন চুপিসারে ভিন্স ম্যাকম্যানের রুমে চোরের মতো গিয়ে ঢুকলেন তিনজন। একজন শন মাইকেলস, আরেকজন সিনিয়র রেফারি আর্ল হেবনার, অন্যজন ভিন্স নিজে। জানা যায়, সমস্ত দুনিয়ায় মনট্রিওল স্ক্রিউজবের পরিকল্পনা এবং সে সম্পর্কে ধারনা ছিলো শুধু এই ৩জনের। হেবনারকে জানানো জরুরি ছিলো, কারন ডিসিশনটা তার কাছ থেকেই আসবে।

শন রুম থেকে বের হয়ে ট্রিপল এইচ আর চায়নার কাছে গেলেন। তাঁদের মূল পরিকল্পনার কিছুই জানালেন না, শুধু বললেন, যেকোনো রকমের পরিস্থিতির জন্য যেনো তাঁরা তৈরি থাকেন। ক্যানাডিয়ানরা লোক সুবিধার না, এর উপরে তাঁদের হিরো ব্রেট যদি আজ হেরে যায়, তাহলে WWE এর কাউকে বেঁচে ফিরতে দেওয়া না-ও হতে পারে।

ভিন্স তখন ব্যস্ত সার্জেন্ট স্লটার, এবং অন্য অফিশিয়ালদের সাথে নিয়ে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করতে, বাইরে থেকে ধরে ধরে সিকিউরিটির লোকজন নিয়ে আসা হলো। ব্রেট সেসময় মোটামুটি রিল্যাক্সই ছিলেন, ভিন্স তো তাঁকে বলেছেনই, যে কোনো রকমের কারচুপী হচ্ছে না। তবে চিন্তা কি? শুরু হলো শন আর ব্রেটএর WWE চ্যাম্পিওনশীপের ম্যাচ। বাকি ঘটনা পরের অংশে।


• মনট্রিওল স্ক্রিউজবের আফটারম্যাথঃ-

ব্রেট যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন। কখনোই শনকে কোনো সাবমিশন ধরতে দিচ্ছিলেন না। ম্যাচের মধ্যে এদের দুজনের চলছিলো অন্য ম্যাচ। কোনো সাবমিশনে ধরা মাত্রই ব্রেট কাউন্টার করছিলেন, মাটিতে ফেলে দিলেই তড়াক করে উঠে দাঁড়াচ্ছিলেন। তারপরেও শেষরক্ষা হলো না। ম্যাচের এক পর্যায়ে শন মাইকেলস ব্রেট হার্টের নিজস্ব সাবমিশন হোল্ড “শার্পশুটার” দিয়ে ধরলেন ব্রেটকে। চোখের পলকে ব্রেট গুঁড়ি মেরে শনের পা ধরে টেনে তাঁকে ফেলে দিয়ে হোল্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন।

তারপরেই শুনলেন রিং বেলের আওয়াজ। ব্যাপার কি? শন তাঁকে সাবমিশনে ধরা মাত্রই রেফারি আর্ল হেবনার ব্রেট ট্যাপ আউট করেছেন, এমন ইশারা করে বেল বাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ব্রেট হতবিহবল। দর্শকেরা দেখলো, তাঁদের চ্যাম্পিয়ন ব্রেট হার্ট নিজের সাবমিশন মুভেই ট্যাপ আউট করেছেন শন মাইকেলসের কাছে। শনকে বেল্ট দিয়ে দেওয়া হলো। শন বেল্ট নিয়ে আর কিছু দেখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন না।

ট্রিপল এইচ আর চায়না একরকম শনকে কোলে নিয়েই পলায়ন করলেন। ব্রেট এদিক সেদিক দেখলেন, রেফারিকে কোথাও দেখা গেলো না। বুদ্ধিমান আর্ল হেবনার কোনোমতে ইশারা করেই দিয়েছেন ভোঁদৌড়। ব্রেট এগিয়ে গেলেন রিং রোপের কাছে, সেখানে অসহায়ভাবে তাঁর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ভিন্স ম্যাকম্যান। ব্রেট মুখভর্তি করে থুথু মারলেন ভিন্সের মুখ লক্ষ্য করে। এদিকে ক্যানাডিয়ানরা তখন বিক্ষোভ করছে, তাঁদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে উপস্থিত কয়েকশো সিকিউরিটি।

ব্যাকস্টেজে উপস্থিত পূর্ণ WWE রোস্টারের সামনে বসে ভিন্স রুসো শিউরে উঠলেন আর্ল হেবনারকে তাঁর পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে দেখে। ভয়ভীত রুসোর দিকে এগিয়ে এলেন মিক ফোলি। কিছুক্ষন তাঁর চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন, “যা করেছো, এর জন্য তোমার লজ্জা পাওয়া উচিত।“ রুসো পালিয়ে এলেন সেখান থেকে। কেউ বিশ্বাস করবে না, যে তিনি এই ব্যাপারে কিছু জানতেন না।

ভিন্সের খোঁজে লকার রুমের দিকে ছুটে এলেন রুসো। সেখানে তখন লঙ্কাকাণ্ড হচ্ছে। শন মাইকেলস এবং তাঁর দলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আন্ডারটেইকার খ্যাত মার্ক ক্যালাওয়ে লকার রুমের এপাশ ওপাশ করছেন, আর সিংহের মতো হুঙ্কার দিচ্ছেন।


ভিন্স তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের সাথে নিজেকে বন্দী করে রেখেছেন একটা লকার রুমে। দরজার বাইরে থেকে ব্রেট ও পুরো হার্ট পরিবার ক্রমাগত লাথি মারছেন, আর ভিন্সের নামে নানান রকমের কটূক্তি করছেন। এদিকে বাইরে গোলমাল বাড়ছে। হঠাৎ দরজা খুলে গেলো, উন্মত্ত ব্রেট ছুটে গেলেন ভেতরে। ভেতর থেকে কথাবার্তা খুব একটা শোনা গেলো না, কিন্তু একটু পরেই গর্জন করতে করতে বেরিয়ে এলেন ব্রেট। সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন স্টেডিয়াম থেকে।

একটু পরেই সঙ্গীসাথী নিয়ে বেরিয়ে এলেন ভিন্স ম্যাকম্যান। গালে ঘুষির দাগ লাল থেকে ততক্ষনে বেগুনী বর্ণ ধারন করেছে। বাকিদের আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করার স্বার্থে, এবং ঝামেলা গেঞ্জাম থামানোর জন্য নিজে সাধ করে ঘুষি খেয়েছেন ঘটনার মূল চক্রান্তকারী, কোম্পানি রক্ষার স্বার্থে পাগল চেয়ারম্যান ভিন্স।

শেষ হলো নিন্দনীয় মনট্রিওল স্ক্রিউজবের ঘটনা। ব্রেট হার্ট চলে গেলেন WCW তে। কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন পরিবারের সদস্যদের উপর, যেনো ভুলেও তাঁরা কেউ WWE এর দিকে না আসেন। শন মাইকেলসের বড়ই সুসময়। আন্ডারটেইকার, ও অন্যান্য WWE সদস্যদের ভিন্সের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়েছেন। নিজে তখন WWE চ্যাম্পিয়ন। সবচেয়ে কাছের চ্যালা ট্রিপল এইচকেও ধীরে সুস্থে মেইন ইভেন্টে নিয়ে তুললেই হবে।

সমস্যা করছে দুটো নাবালক। এদের নাম যথাক্রমে স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন, আর দ্যা রক। কিন্তু এদের নিয়ে আর চিন্তা কি? একটাকে বানানো হবে জবার, অন্যটাকে আজীবন মিড-কার্ডে ফেলে রাখলেই হবে। শন মাইকেলস তখন WWE এর আইন। বাকিরাও ভয়ে আছেন, মনট্রিওলের ঘটনার পর থেকে। কখন কার উপরে নাখোশ হয়ে কোন অঙ্গুলিহেলনে যে কি করে ফেলেন, কে জানে? দেখাই তো যাচ্ছে, শনের অসাধ্য কিছু নেই।

আমরা মনে করতেই পারি, যে এসব দেখে এরিক বিশফ হয়তো WCWতে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। কিন্তু সেই অবকাশই তাঁর ছিলো না। সেখানে আগে থেকেই স্কট হল আর কেভিন ন্যাশ নামে দুই বান্দা আছে না? এখানেই ক্লিকের কৃতিত্ব, তাঁদের গল্প যেনো শেষ হয়েও শেষ হয় না। ক্লিক তখন লিটারালি রেসলিং দুনিয়া শাসন করছে। শন মাইকেলস ঠিক করলেন, আবার গোটা ক্লিককে এক কোম্পানিতে আনা দরকার। সেজন্য দরকার, এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী WCW কোম্পানিটা ডুবিয়ে দেওয়ার। যেহেতু ক্লিকের নেতা WWE তে আছেন, কাজেই সেটা যেমন আছে থাক। কেভিন ন্যাশের প্রতি আদেশ হলো, WCW এর গলা কেটে নদিতে ভাসিয়ে দেওয়ার।


• ক্লিকের WCW এর উপর কর্তৃত্বঃ-

এদিকে WCWতে ন্যাশ তাঁর দায়িত্বে বেশ পারদর্শী। নিজে বুকিং (কে জিতবে, কে হারবে এটা যারা ঠিক করে) এর কিছুই বোঝেন না, তবুও এরিক বিশফকে বলে কয়ে রাজি করালেন, যে তিনি বুকার হবেন। এরিকের মতো এমন একজন বুদ্ধিমান মানুষ কেনো এই প্রস্তাবে রাজি হলেন, সেটা রহস্যাবৃত। কিন্তু বুকিং এর ক্ষমতা পেয়ে ন্যাশ হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। এসময় আরেকটা রহস্যময় ঘটনা ঘটলো।

WWE এর হেড রাইটার, ভিন্স রুসো অতিরিক্ত কাজের চাপের দোহাই দিয়ে WWE এর চাকরী ছেড়ে দিয়ে উঠলেন WCW তে। বিশফের বুদ্ধিমত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এখানেও। যেই লোকটা এটিটিউড এরার সময়ে টানা WCW কে হারানোর জন্য নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছে, ভিন্সের বিশ্বস্ত সেনানী হিসেবে এতদিন কাজ করে গেছে, তাকে বিশফ কি বুঝে বিশ্বাস করলেন কে জানে? তবে রুসো গিয়ে পড়লেন একেবারে কেভিন ন্যাশের হাতে।

প্রথমদিকে WCW এর বুকিং মোটামুটি সহ্যের মধ্যেই ছিলো। সমস্যা হলো, শুধুমাত্র এনডব্লিউও এর সদস্যেরা ছাড়া আর কেউ কোনো ম্যাচে জিততো না। এনডব্লিউও এর সদস্যসংখ্যাও তখন কম না। যতদুর জানি, সংখ্যাটা ৩০ এর আশেপাশে। বাকিরা একটু গাঁইগুই করতে লাগলেন, ব্যাপারটা কেমন হচ্ছে, যে এনডব্লিউও কখনও হারবেই না? তাঁরা কি অতিমানব? ন্যাশ-রুসো জুটি তাঁদের প্রতিভা সর্বদিকে ছড়িয়ে দিলেন।

ক্রুজারওয়েইটদের তাঁরা আজীবন ক্রুজারওয়েইট হিসেবে রেখে দেওয়ারই পক্ষপাতী ছিলেন। ক্রমাগত বলে বলে ব্যর্থ হয়ে কোম্পানি ছেড়ে দেন ক্রিস জেরিকো, এডি গরেরোর মতো বিখ্যাত ক্রুজারওয়েইটরা। তাঁরা গিয়ে ওঠেন WWEতে। ন্যাশ হয়ে ওঠেন আরও স্বৈরাচারী। WCWতে তখন গোল্ডবার্গের বেশ বড়সড় একটা ফ্যানক্রেইজ হয়েছে। গোল্ডবার্গের আবিষ্কর্তা এরিক বিশফ স্বয়ং। গোল্ডবার্গের গিমিক ছিলো, টানা ম্যাচ জেতার। ১৭০ টা মাচ জেতার পরেই টনক নড়ে ন্যাশের। এতো ম্যাচ তো তাঁর জেতার কথা না। তিনি তো আর এনডব্লিউওর সদস্য না।

এরমধ্যে আবার জিম কর্নেট ঝামেলা পাকিয়ে বসে আছেন। গোল্ডবার্গ হাল্ক হোগানকে চ্যালেঞ্জ করে WCW ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। সুতরাং ন্যাশ ঠিক করলেন, তিনি গোল্ডবার্গকে একেবারে কবর খুঁড়ে মাটি চাপা দিয়ে দেবেন। সেইমতো স্টারকেইড ১৯৯৮তে ন্যাশ গোল্ডবার্গকে হারিয়ে তাঁর ১৭৩-০ উইনিং স্ত্রিক ভাঙ্গেন, গোল্ডবার্গের কাছ থেকে WCW চ্যাম্পিয়নশিপটিও পকেটে ভরেন। হাতে হাত মিলিয়ে রুসো আর ন্যাশ করতে থাকেন আরও বড় বড় অপকর্ম। দর্শকেরা ক্ষেপে গেলো। এরিক বিশফ যতদিনে বুঝতে পেরেছিলেন, ততদিনে আর কিছুই করার ছিলো না।

ধীরে ধীরে WCW এর রেটিংস কমতে শুরু করলো। পুরো শো জুড়ে NWO কি করেছে এবং এখন কি করছে, এতে মানুষের আর কোনো উৎসাহ থাকলো না। যেমনটা হয়েছে TNA এর “এইসেস এন্ড এইটস” স্টোরিলাইনের ক্ষেত্রে। WWE ইতোমধ্যে স্টোন কোল্ডের সাহায্যে এটিটিউড এরায় জয়লাভ করেছে। বিশফ যখন রুসোকে ক্রিয়েটিভ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়াতে নিজের ভুল বুঝেছেন, ততদিনে WCW একটা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে।

রুসোর সবচেয়ে ভয়াবহ ডিসিশনটা ছিলো, অভিনেতা ডেভিড আর্কেটকে দিয়ে WCW ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানো। যেই বেল্টটা একবার ছুঁয়ে দেখার জন্য প্রতিটা রেসলার তাদের সারাজীবন সংগ্রাম করে বেড়ায়, সেখানে একজন অভিনেতা এসে একেবারে রেসলিং এর কিছুই না জেনে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন, এটা WCW এর ভেতরেই কেউ মেনে নিতে পারলো না। বিক্ষোভ শুরু হলো। রুসোর বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকালেন অনেকে, ফলে ম্যাচে পারফরম্যান্স হতে লাগলো খারাপ। রুসো বরং আরও বেশী প্যাঁচ লাগিয়ে দিলেন।

মানডে নাইটরোতে রেসলিং বাদ দিয়ে নাচগান শুরু করে দিলেন, “কিস” নামে একজন এসে সবাইকে গান গেয়ে শোনাতে লাগলো। রুসো উপরে উপরে সবাইকে বোঝালেন, এতে করে এন্টারটেইনমেন্ট বাড়বে, মানুষ দেখতে উদ্বুদ্ধ হবে, হলো উল্টোটা। WCW এর ব্রডকাস্টিং চ্যানেল নাইটরো প্রচার করতে অসম্মতি জানালো, ওয়ার্নারদের সাথে টেড টার্নারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হলো। ফলে WCW হয়ে পড়লো একেবারেই একটা অকর্মণ্য কোম্পানি, যেই ভয়ে এতোদিন WWE ছিলো, WCW এর স্টাফদের সেই না খেতে পেয়ে মরার দশাই হলো।

এগিয়ে এলেন মনট্রিওলের দাগী অপরাধী ভিন্স ম্যাকম্যান, একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত। WCW কে কিনে নিলো WWE. এরিক বিশফ তখন নিজের অপকর্মের জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাঁকেও নিজের কাছে নিয়ে এলেন ভিন্স, কাজ দিলেন WWEতে, জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে তাঁকে তিনি ডেবিউ করান পরবর্তীতে ২০০২ সালে। এদিকে WCW এর সাথে ন্যাশ আর হলও চলে এলেন। আগে থেকে শন, ট্রিপল এইচ আর ওয়ালটম্যান ছিলেন, পুনর্গঠিত হলো ক্লিক।


• স্টোন কোল্ড, দ্যা রক এবং ক্লিকঃ-

এদিকে WCW এর অকর্মণ্য হয়ে যাওয়ার আগে WWE তে কি হচ্ছে? শন মাইকেলস যখন সর্বময় ক্ষমতার কর্তা, তাঁর তো তখনই ১৩-১৪ বার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ার কথা। কেনো হলেন না? সমস্যা হচ্ছে, যখন সবকিছু নিয়ন্ত্রনে থাকে, তখনই কিছু না কিছু সমস্যা হয়ে যায়, নাহলে কোনো মানুষ কখনোই ব্যর্থ হতো না। শনের ক্ষেত্রেও এমনই হলো। ব্রেট চলে যাওয়ার পর যে একাধিপত্য স্থাপন করেছিলেন তিনি, তা থেকে তাঁকে স্বেচ্ছায় সরে আসতে হয়। কারন, তাঁর পিঠের ইনজুরি।

এই ইনজুরির কারনে শনের ক্যারিয়ার পড়ে গেলো শঙ্কায়। তিনি আন্ডারটেইকার এবং অন্য নতুন মেইন ইভেন্টারদের সাথে ইনজুরির কারনে কুলিয়ে উঠতে পারলেন না। সিদ্ধান্ত হলো, কিছুদিন রেসলার হিসেবে রিটায়ার করে পিঠের ইনজুরি সারিয়ে তারপর আবার ফিরে আসবেন তিনি। সেইমতো ১৯৯৮ সালের রেসলম্যানিয়াতে স্টোন কোল্ডের কাছে WWE চ্যাম্পিয়নশিপটা হারানো হয় তাঁকে দিয়ে। শেষ হয় মেইন ইভেন্টে শন মাইকেলসের দাপট।

কিন্তু তাই বলে এমন না, যে শনের ক্ষমতার এখানে ইতি ঘটলো। একটিভ রেসলিং থেকে সরে গিয়ে তিনি বরং আরও জাঁকিয়ে বসেন ক্রিয়েটিভের আসনে। বানিয়ে দেওয়া হলো WWE এর অনস্ক্রীন কমিশনার (অনেকটা জেনারেল ম্যানেজারের মতো)। আগেই বলেছি শন অকৃতজ্ঞ ছিলেন না, তিনি বুঝলেন নিজে যখন অকার্যকর, কাজেই এখন সময় এসেছে প্রধান চ্যালা ট্রিপল এইচকে একটু একটু করে উপরের দিকে তোলার। ছেলেটা অনেক কষ্ট করেছে শনকে লাগাতার সাপোর্ট দিয়ে দিয়ে। কিন্তু ট্রিপল এইচ তখন মেইন ইভেন্ট থেকে যোজন যোজন দূরে। স্টোন কোল্ড তখন টপ ফেইস, মেইন ইভেন্টে আসি আসি করছেন দ্যা রক। ম্যানেজমেন্ট থেকে ম্যানকাইন্ডকেও একটা পুশ দেওয়ার কথা চলছে। এখন উপায়?

ঘুরে আসি ১৯৯৯ সালের রেসলম্যানিয়া থেকে। স্টোন কোল্ড তখন একেবারে ক্রেইজ, মানুষ তাঁকে ছাড়া আর কিছু বোঝে না। ওই বছরের রয়াল রাম্বলে ভিন্স ম্যাকম্যানের জেতাটা আরও বেশী বাড়িয়ে দিলো স্টোন কোল্ডের ফ্যান সাপোর্ট,যেমনটা ২০১৪তে ড্যানিয়েল ব্রায়ান না জেতায় তাঁর বেড়েছে। দ্যা রক তখন WWE চ্যাম্পিয়ন। নিয়ম হচ্ছে, রয়াল রাম্বল যে জিতবে, সেই পারবে রেসলম্যানিয়াতে WWE চ্যাম্পিয়নের সাথে খেলতে। এখন বুড়া দাদা ভিন্স নিশ্চয়ই দ্যা রকের সাথে খেলতে গিয়ে কোমরের হাড্ডি ভাঙবেন না। তাহলে রকের সাথে খেলবে কে? ফ্যান সাপোর্ট বলছে স্টোন কোল্ড।

এদিকে ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছা ম্যানকাইন্ডকে পুশ করার। সিদ্ধান্ত হলো, এই প্রথম রেসলম্যানিয়াতে মেইন ইভেন্ট হবে একটা ট্রিপল থ্রেট ম্যাচ। দ্যা রকের সাথে খেলবেন স্টোন কোল্ড আর ম্যানকাইন্ড। শন তেতেপুড়ে গেলেন। কি জ্বালা! এরা ৩জন মেইন ইভেন্টে চলে গেলে ট্রিপল এইচের কি হবে? তিনি ভিন্সের সাথে দরবার করতে লাগলেন, রাগটা তাঁর স্টোন কোল্ডের উপরে বেশী। প্রথমত, তাঁর কাছে হেরেই শনের ক্যারিয়ার থমকে আছে, আবার মানুষ বলছে, শন নাকি অস্টিনের কাছে হেরে তাঁর কাছে টর্চ তুলে (কোম্পানির প্রধান ফেইস হবার) দিয়েছেন। ক্রিয়েটিভদের সাথে শনের মতামত মিললো না।

ক্রিয়েটিভরা সাফ জানিয়ে দিলো, ট্রিপল এইচকে কোনোমতেই এখন মেইন ইভেন্টে নেওয়া যাবে না। সে এখনো মিড-কার্ডে আছে। বলা নেই, কওয়া নেই, মেইন ইভেন্ট খেলবে মানে? শন তখন উপায়ন্তর না দেখে ক্রিয়েটিভদের বোঝানোর চেষ্টা করলেন, যে এই ম্যাচটা ট্রিপল থ্রেট হওয়ার কোনোই দরকার নেই। দ্যা রকের সাথে ম্যানকাইন্ডকে খেলিয়ে দাও, তবুও বাবারা দয়া করে অস্টিনকে বাদ দাও। শেষ পর্যন্ত শনের বারংবার লবিতে কাজ হলো।

ভিন্স রাজি হলেন ম্যাচটা ওয়ান-অন-ওয়ান করতে। সমস্যা হচ্ছে, দ্যা রকের সাথে ম্যানকাইন্ড নয়, তিনি ঠিক করলেন স্টোন কোল্ডই খেলবেন। ম্যানকাইন্ডের পুশ স্থগিত হলো, রেসলম্যানিয়াতে বেচারাকে খেলানো হলো বিগ শোর সাথে। অস্টিনের তখন যেরকম ফ্যান ক্রেইজ, তাতে তাঁকে বাদ দিয়ে কিছু করার কল্পনাই করা যায় না, তাহলে সেই বছরের রেসলম্যানিয়া দেখতে কেউ আসতো না।

এরপর শন মাইকেলস আর কি পদক্ষেপ নিতেন, তা আর জানা গেলো না। কারন, পিঠের ইনজুরি মারাত্মক অবস্থা ধারন করায়, ডাক্তারের নির্দেশে তিনি চিরকালের জন্যে রেসলিং ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। ২০০০ সালের শুরু থেকে যেকোনো ধরনের অন-স্ক্রীন উপস্থিতিও করা হলো নিষেধ তাঁর জন্য। তবে ইতোমধ্যে বেচারা ট্রিপল এইচের জন্য অনেক কিছুই করেছেন তিনি।

তাঁকে ম্যানকাইন্ডের সাথে জিতিয়ে WWE চ্যাম্পিয়ন করে মেইন ইভেন্টে এনেছেন, নিজের গোড়াপত্তন করা গ্রুপ ডিএক্সএর নেতা বানিয়েছেন, চায়নাকে জেতানো হয়েছে উইমেন্স এর পাশাপাশি ইন্টারকন্টিনেন্টাল টাইটেলও। কিন্তু যে সময়ে ট্রিপল এইচের সবচেয়ে দরকার ছিলো শনকে, তখনই ইনজুরি তাঁকে সরিয়ে দিলো প্রো-রেসলিং থেকে।


• ট্রিপল এইচের উত্থানঃ-

শন মাইকেলস যতদিনে WWE থেকে অবসর নিয়েছেন, ততদিনে তিনি অনেক অপকর্ম করার চেষ্টা করে গেছেন। অস্টিনের ক্ষতি করার চেষ্টা করেও পারেননি। ট্রিপল এইচের মেইন ইভেন্টে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা দ্যা রকএর বারংবার সর্বনাশ করার চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। শন অবশেষে মানতে বাধ্য হয়েছেন, যে দ্যা রক এবং স্টোন কোল্ড এই দুটোই আসলে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অতিমানব। এদের কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যেতো না, কোনো না কোনোভাবে এরা ঠিকই আজ যে জায়গায় আছে, সেখানে চলে আসতো।

শন বহুবার দ্যা রকের কষ্টার্জিত ম্যাচে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ট্রিপল এইচকে, যে কারনে দ্যা রক এখনো এইচবিকের প্রতি যথেষ্ট রাগ পুষে রেখেছেন। মনে করে দেখুন, বিগত বছরগুলোয় দ্যা রক এবং শন মাইকেলসের একসাথে কয়টা সেগমেন্ট দেখেছেন? এমন কিন্তু নয়, যে এরা দুজনে কখনও একইসাথে ছিলো না WWEতে। এমনকি বিগত একটা রেসলম্যানিয়াতে যখন ভিন্স, শন আর রকের একটা ম্যাচের জন্য পরিকল্পনা করেন, তখন দ্যা রক সরাসরি শনের সাথে ম্যাচ খেলতে অসম্মতি জানান। তাঁর সাফ কথা, যার প্রতি তাঁর রেস্পেকট আসে না, তাঁর সাথে তিনি ম্যাচ খেলতে পারবেন না।

যাই হোক, ব্যাপারটা হলো এমন, যে ভিন্স WCWকে কিনে নেওয়ার আগেই শন মাইকেলসকে পিঠের ইনজুরির কারনে WWE ছেড়ে চলে যেতে হলো। ফলে ক্লিক পুনর্গঠিত হতে হতেও হলোনা। ক্লিকের সকল সদস্যরাই পড়ে গেলেন অথৈ সাগরে। এতকাল যা করার শন মাইকেলসই করেছেন, তাদের শুধু তাঁকে সমর্থন দিয়ে গেলেই হয়েছে। এখন কি হবে? হল, ন্যাশ, আর ওয়ালটম্যান ধরলেন ট্রিপল এইচকে। ট্রিপল এইচই একমাত্র পুরুষ, যে কিনা এতোদিন খুব কাছে থেকে দেখেছে শন মাইকেলসের কার্যপদ্ধতি।

ট্রিপল এইচ তখন কিছুটা নিজের যোগ্যতা, আর বাকিটা শনের সুপারিশে একজন মেইন ইভেন্টার। ওদিকে ন্যাশ আর হল অনাহুত, WCWতে ভেগে যাওয়ার কারনে ভিন্সের চোখে অপরাধী। কাজেই, যদি এই অবস্থায় কেউ কিছু করতে পারে, তাহলে ট্রিপল এইচ ছাড়া আর কেউ পারতো কি? ট্রিপল এইচ নিজেও স্বার্থপর ছিলেন না। তাঁর চোখেও ক্লিক সবসময়েই প্রথম প্রায়োরিটিতে ছিলো। নিজের ও বন্ধুদের স্বার্থে তিনি তখন খুবই জঘন্য একটা কাজ করেন। যেটা তাঁকে কোম্পানির শীর্ষে উঠতে অবশ্যই সাহায্য করেছে, তবে মানুষ হিসেবে কোথায় নামিয়েছে?

২০০০ সালের দিকে, রতে দেখা গেলো এক অদ্ভুত সেগমেন্ট। ট্রিপল এইচ ভিন্সের কন্যা স্টেফিনিকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছেন অন্য শহরে, সেখানে কারচুপী করে তাঁকে বিয়ে করে ফেলেছেন। হ্যাঁ, এটা ছিলো পুরোটাই স্টোরিলাইন, তবে বাস্তবের সাথে একেবারে মিল ছিলো না বললে ভুল হবে। ভিন্স নিজের কন্যার সাথে ট্রিপল এইচের বেশ কিছুদিন মাখামাখি দেখে ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিলেন, তখনই তাঁর উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়েছিলো এই বাস্তব ঘেঁষা ভয়াবহ স্টোরি লাইনের আইডিয়া।

ট্রিপল এইচ আর স্টেফিনির বিয়েটা প্রকৃতপক্ষে হয়েছে ২০০৩ সালে। ভালো কথা, চায়নাকে মনে আছে? ওই যে জোনি লরার, দানবাকৃতির মহিলা, যার সাথে ডিএক্স আমলে ট্রিপল এইচের ছিলো মহা প্রেম। ট্রিপল এইচ বন্ধুদের স্বার্থে চায়নাকে সোজা বাংলায় “ছ্যাঁক” দিয়েছেন। জানি না, এই কাজ তিনি কতোটা দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে করেছেন, কিন্তু এই ঘটনার পরে চায়নার ক্যারিয়ার WWE তে বেশ অস্বচ্ছ হয়ে আসে।

পরবর্তীতে চায়নাকে দেখা যায় হাওয়ার্ড স্টার্নসহ কিছু নগ্নতাবিশিষ্ট প্রোগ্রামে, এরপর তো একেবারে পর্ণস্টার। এসব দায় কি ট্রিপল এইচ একেবারেই না নিয়ে পারবেন? ওই যে, সেই পুরনো উক্তির কথা বলতে হয়, ক্লিক সবসময়েই ক্লিকের খেয়াল রেখেছে। শন ওয়ালটম্যান ট্রিপল এইচের অবর্তমানে চায়নার সাথে রিলেশনশীপ করেন এই সময়ে। এই জায়গায় একটা সংশয় আছে। এরা দুজনেই কি ট্রিপল এইচের কাছে প্রত্যাখ্যাত? শন ওয়ালটম্যানও কিন্তু WWE থেকে খুব বেশী কিছু পাননি। ক্লিকের একমাত্র অসফল সদস্য বলতে তাঁকেই বলতে হয়।

যাই হোক, দুই গাধা-গাধী নিজেদের ঘাড়ে মাথা রেখে কান্নাকাটি করলে করুক, আমরা ফিরে যাই ট্রিপল এইচের কাছে। তিনি এই ঘটনাটা যে কিভাবে ঘটিয়েছিলেন, সেটা রহস্যাবৃত। যেই কোম্পানিতে রেসলিং করেন, সেই কোম্পানিতেই নিজের বসের মেয়েকে পটিয়ে ফেলাটা কি একটা স্বাভাবিক ব্যাপার? 

হ্যাঁ, অনেকে বলতেই পারে, যে ট্রিপল এইচ কি দেখতে বুগিম্যানের মতো? তাঁকে কি কোনো মেয়ের পছন্দ হতে পারে না? হ্যাঁ, অবশ্যই পারে। কিন্তু ট্রিপল এইচই কেনো? আশেপাশে কি রক ছিলো না? যাই হোক, ২০০১ এর শেষের দিকে, ট্রিপল এইচ বসের মেয়েকে কব্জা করে যখন সবকিছু মোটামুটি গুছিয়ে এনেছেন, তখনই জানা গেলো, ফিরে আসছেন শন মাইকেলস।


• শন মাইকেলসের পুনর্জন্ম (রিবর্ন এন্ড ফরগিভেন):-

শন মাইকেলসের ফিরে আসার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়লো গোটা WWE রোস্টার। সবাই জানতো, যে এই লোকটা পারে না এমন কিছু নেই। পুরনোরা আগে থেকেই “শন আতঙ্কে” ছিলেন, নতুনেরা তাদের কাছ থেকে শুনে প্রমাদ গুনলো। না জানি এবার এসে কি করেন শন। এইখানে ঘটলো খুবই মজার একটা ব্যাপার। যিনি ফিরে এলেন তিনি শন মাইকেলসই বটে, তবে ৯০এর দশকের আত্মম্ভরি, সুযোগসন্ধানী, ধূর্ত শন মাইকেলস নন।

এই শন মাইকেলস ধীর-স্থির, সদাপ্রসন্ন, মিশুক ও ভদ্র শন মাইকেলস। মনে হলো আগের লোকটা যেনো হারিয়ে গেছে। এই শন মাইকেলস নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন সবার শেষে, বাকিদের সাহায্য করার জন্য যেন সদা প্রস্তুত তিনি। আসল রহস্য জানা গেলো পরে। শন মাইকেলস ইনজুরি তে থাকা অবস্থায় মনে করেছিলেন তাঁর আর কখনোই প্রো-রেস্লিঙ্গে ফিরে আসা হবে না, সেই ভয়াবহ ব্যাক ইনজুরির কারনে।

শন সেই সময় শুরু করেন ধর্মপালন, ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দেন নিজের ভাগ্য। পুরোপুরি ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যক্তিটি নিজের আগেকার সকল অপকর্মের জন্য ছিলেন মারাত্মকভাবে লজ্জিত, তাই ফিরে আসার পর তিনি সবার কাছেই কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা শুরু করেন (রতে সেসময় একটা সেগমেন্টে শন বলেছিলেন, তিনি চলে যাওয়ার পর ঈশ্বরকে খুঁজে পেয়েছেন। যার ফলে চতুর ভিন্স হুট করে একটা স্টোরিলাইন বানিয়ে ফেলেন, যাতে ভিন্স ও শেইন ম্যাকম্যানের সাথে ম্যাচ খেলেছিলো শন মাইকেলস এবং “গড।“বস্তুত সেটা একটা হ্যান্ডিক্যাপ ম্যাচ ছিলো।

গডের কি ঠেকা এসে রেসলিং করার?। ক্লিকের সদস্যেরা এবারের মতো ঝামেলায় আর কখনও পড়েনি। শন মাইকেলস তাদের সাফ জানিয়ে দেন, তিনি অন্যায্যভাবে আর কারো কোনো সাহায্য করতে পারবেন না। ফলে ট্রিপল এইচকে বাধ্য হয়ে ক্লিকের নেতার ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়, বসের মেয়েকে বিয়ে করার পর তিনি ছাড়া নেতা হওয়ার যোগ্যতা মনে হয় আর কারো অতোটা ছিলোও না।

এদিকে শন ক্লিকের ব্যাপারে তদ্বির করায় অসম্মতি জানানোয় গোটা ক্লিক যখন একটু বেকায়দায়, তখনই ভিন্স ম্যাকম্যান কোপ মারেন ক্লিকের ঘাড়ে। একেবারে নগদের মাথায় বের করে দেওয়া হয় কেভিন ন্যাশ আর স্কট হলকে। ন্যাশ পরে আরও দুইবার ফিরে আসেন বটে, কিন্তু হলকে আর কখনও দেখা যায়নি WWEতে। ন্যাশ ও হলের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার একটা উপায় তিনি অনেকদিন ধরেই খুঁজছেন। বলি হয়ে গেলেন এমনকি শন ওয়ালটম্যানও।

মেয়ে জামাইকে তো আর কিছু বলা যায় না, আর শন মাইকেলসের পরিবর্তন দেখে খোদ ভিন্সও প্রচণ্ড অবাক হয়েছিলেন, তাই শনের সাথে তাঁর আগের সুসম্পর্কটিই বজায় থাকলো। ভাগ্য পরিবর্তন হতে হতেও হলো না দুই অভাগার। এদের একজনের নাম “রোড ডগ” জেসি জেইমস, অন্যজন “মিস্টার অ্যাস” বিলি গান। এই দুজন মনে করেছিলেন, ক্লিকের বাকিরা চলে যাওয়ার হয়তো এদের কপালটা খুলবে।

কিন্তু যেমনটা আগে বলেছিলাম, ক্লিকের গঠনটা সুচতুর শন করেছিলেনই এমন কয়েকজন নিয়ে, যাদের হয়তো কোনো রেসলিং লিনিএজ নেই, কিন্তু এরা প্রত্যেকেই ভয়াবহ রকমের প্রতিভাবান (ওয়ালটম্যান ছাড়া )। তাই পরে আর কাউকে ক্লিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শন ক্রিয়েটিভ থাকাকালে অবশ্য এদের উপকার করার চেষ্টা করেছেন, এমনকি বিলি গানকে কিং অফ দ্যা রিংও বানিয়েছিলেন, কিন্তু হতভাগারা সেই সুযোগে বিখ্যাত হতে পারেনি। তাই শনকে চুপচাপ দেখে ভিন্স যখন এই দুটোকে ঘাড় ধরে বের করে দিলেন, তখন ট্রিপল এইচও কিছু বলতে পারলেন না। ডিএক্সের মেম্বার হলে কি হবে, শ্বশুর আব্বার কথার উপরে কি কিছু বলা যায়? যার হাতে আবার তাঁর ভবিষ্যৎ?

ট্রিপল এইচ তাড়াহুড়া করলেন না, শন তো পাশে আছেনই, হোক সে এখন ঈশ্বরভক্ত নরম-সরম মানুষ, তবুও মানুষটা শন মাইকেলস তো। প্রিয় বন্ধুদের কোম্পানি ছাড়ায় তিনি ব্যথিত হলেও ধৈর্যহারা হলেন না। ক্লিক বলতে গেলে তখন আর নেই বললেই চলে, একমাত্র ট্রিপল এইচ শক্তহাতে ধরে রাখলেন ক্লিকের ভবিষ্যৎ। ট্রিপল এইচের ইচ্ছা, শন মাইকেলসের মতো তিনি নিজেও বানাবেন একটি ক্লিক।

পুরানোদের সাথে মিলে সেইসব নতুনেরা শাসন করবেন গোটা প্রো-রেসলিং দুনিয়া। ট্রিপল এইচ গোটা ২০০২ সাল ধীরে ধীরে হবু শ্বশুর ভিন্সকে সাহায্য করতে লাগলেন, স্টেফিনিকে সময় দিতে লাগলেন। ২০০৩ সালে তাঁদের বিয়েটা হয়ে গেলে আর তাঁকে পায় কে? এসে গেলো সেই মাহেন্দ্রক্ষনও। ট্রিপল এইচ বসের মেয়েকে বিয়ে করেই মিশে গেলেন ক্রিয়েটিভদের মাঝে। রিক ফ্লেয়ারের সাথে খাতির করলেন, নিজের দলে ভেড়ালেন ডেভ বাতিস্তা ও র‍্যানডি অরটন নামে দুই নবপ্রতিভাকে। শুরু হলো আবারো ক্লিকের ত্রাস।


• ট্রিপল এইচের স্বৈরাচারঃ-

ট্রিপল এইচ ও তাঁর দলবল মিলে গোটা ২০০৩ সালে যা করলেন, সেটা স্বৈরাচার বললেও কম বলা হবে। ২০০৩ সালে বিয়ের আগ পর্যন্ত তিনি চুপ ছিলেন। এরমধ্যে কোম্পানিতে চলে এসেছে কিছু নতুন মেইন ইভেন্টার। ২০০১ সালেই ক্রিস জেরিকো দ্যা রক ও স্টোন কোল্ডকে হারিয়ে হয়ে গেছেন WWE চ্যাম্পিয়ন, কার্ট এঙ্গেলও জিতে গেছেন WWE টাইটেল। আরভিডি নিজের একটা ফ্যান ক্রেইজ বানিয়ে ফেলেছেন, এজ হয়ে গেছেন কিং অফ দ্যা রিং।

ভিন্স ঠিক যেমন ৯০এর দশকের শুরুতে হাল্ক ও সেইভেজের সাথে করেছিলেন, তেমনই এই দশকের শুরুতে করছিলেন। মিক ফোলি রিটায়ার করেছেন, রক ও অস্টিনও ততদিনে যাইযাই করছেন। ঠিক করা ছিলো এই জেরিকো, এঙ্গেল, এজ বা আরভিডিরাই শাসন করবেন এই দশক। কিন্তু এতো এতো মেইন ইভেন্টার থাকলে ট্রিপল এইচের কি হবে? ট্রিপল এইচ রক ও অস্টিনের সমসাময়িক, যেই সময়ে তাঁর অনিয়মিত হয়ে পড়ার কথা, সেই সময়েই তিনি ঝোপ বুঝে কোপ মারার সিদ্ধান্ত নিলেন। এমন সুযোগ আর আসবে না, WWE এর পুরো অপারেশন তাঁর হাতের মুঠোয়, এখনই তো সময়।

প্রথমেই জেরিকো এবং আরভিডি খুন হলেন ট্রিপল এইচের হাতে। এদের দুজনকেই তাঁর কাছে মনে হলো মেইন ইভেন্টের জন্য অযোগ্য। জেরিকো অলরেডি চলে এসেছিলেন মেইন ইভেন্টে, তাঁকে আবার ট্রিপল এইচের আদেশে চলে যেতে হলো মিড-কার্ডে। আরভিডি বেচারা তো তাঁর একমাত্র WWE চ্যাম্পিওনশিপটা জিতলেন গিয়ে ২০০৬ সালে। এজকে তাঁর আরও কিছু সময় বাজিয়ে দেখার ইচ্ছে হলো, তাই তাঁকেও মিড-কার্ডে পাঠানো হলো। এঙ্গেলকে তাঁর পছন্দই ছিলো, দয়া করে একমাত্র তাঁকেই রাখলেন মেইন ইভেন্টে।

এরপর থেকে কয়েক বছর যারা কখনও মেইন ইভেন্টে এসেছেন, এরা সবই ট্রিপল এইচের প্রিয়পাত্র। তিনি নিজে কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন, রতে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপনা করে পুরো ২০০৩ সালটাই কাটিয়ে দিলেন ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। অনেকে এলো আর গেলো, ট্রিপল এইচের সাম্রাজ্যের পতন হলো না। এরমধ্যে একটা গোপন ব্যাপার হয়েছিলো রেসলম্যানিয়া ১৯, ২০০৩ সালে। সেবার বুকারটিকে ট্রিপল এইচের সাথে জিতে চ্যাম্পিয়ন বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।

বুকার WCW এর একজন পরীক্ষিত মেইন ইভেন্টার, তাঁকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে একমাত্র সমস্যা ছিলো ট্রিপল এইচের। তিনি ক্রিয়েটিভদের কাছে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন, তাঁর কাছে বুকারকে এখনো মেইন ইভেন্টের উপযোগী মনে হয়নি। কাজেই মেইন ইভেন্টের উপযোগী হতে বুকারকে জেতানোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হলো। তিনি উপযোগী হলেন টানা ৩ বছর মিডকার্ডে কাটানোর পর, ২০০৬তে।

অস্টিন মাঝে একবার অল্প কিছুদিনের জন্য এসেছিলেন, ট্রিপল এইচের স্বৈরাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পালিয়ে বাঁচলেন তিনি। দ্যা রক অবশ্য এরপরেও অনেকদিন ছিলেন। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, এসব ঘটনার মাঝেই দ্যা রক নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিয়েছেন, তিনিও একজন বুদ্ধিমান মানুষ, বুঝেছিলেন আর বেশীদিন এখানে থাকা নয়। ট্রিপল এইচের শাসনামলের সময় দ্যা রক একজন হলিউড স্টার, এবং ট্রিপল এইচ সারা বছরের যা কামান, রক এক মাসেই এর বেশী উপার্জন করা শুরু করেন। তাই দ্যা রকের সাথে কোনো তেরিবেরি করার সাহস ট্রিপল এইচের কখনও হয়নি, কিন্তু তাই বলে তাঁকে মেইন ইভেন্টেও তিনি এরপরে আর ঢুকতে দেননি। রক ২০০৪ এর সময় একেবারেই WWE লিভ করেন।

২০০৩ ও ২০০৪ পুরো সময়টাই তিনি কাটান মেইন ইভেন্টে। জেতা হারা তো আছেই, কিন্তু পার্সোনাল ম্যাচ খেলে সময় নষ্ট করেননি, তাঁর প্রকৃত লালসা ছিলো ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিওনশীপের দিকে। তাই ২০০৫ সালের দিকে যখন জন সিনা একেবারে সমুদ্রের তলদেশ থেকে ভেসে উঠলেন, তখন কোম্পানির বাকি সদস্যেরা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ট্রিপল এইচ তারপরেও হার মানবেন না। নিজে খেলে যখন দেখলেন উঠতি রেসলার সিনার সাথে যুঝতে সমস্যা হচ্ছে, তখন তাঁর দুই প্রোটেজেকে এগিয়ে দিলেন সিনার কাছে।

র‍্যানডি অরটনের প্রতিভার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই, কিন্তু WWE তে নিজের ডেবিউএর ২ বছরেরও আগে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাটা একটু বাড়াবাড়ি নয় কি? ২০০৫ সালের রয়াল রাম্বলে জেতার কথা ছিলো জন সিনার। তাঁর উঠতি ক্রেইজ মনে করিয়ে দিচ্ছিলো স্টোন কোল্ডের সেই সাপোর্টের কথা। ট্রিপল এইচ বেঁকে বসলেন। না, বাতিস্তাকে জেতাতে হবে। সিনা এখনো তরুন, এতোবড় এচিভমেন্টের বয়স বা পরিপক্কতা কোনোটাই তাঁর এখনো আসেনি। ট্রিপল এইচ তাঁর প্রতি পদক্ষেপে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ৯০এর শন মাইকেলসকে।


• শেইন ম্যাকম্যানের অন্তর্ধান রহস্যঃ-

২০০৬ সালের দিকে পূর্ণতা পেলো ক্লিক। ক্লিকের প্রাক্তন ও বর্তমান নেতা ফিরে এলেন একইসাথে। পুনর্গঠিত হলো ডিএক্স। শন মাইকেলস আর ট্রিপল এইচ দাপিয়ে বেড়াতে লাগলেন মানডে নাইট রয়ের মেইন ইভেন্ট। ততদিনে আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে। ভিন্সের বড় পুত্র, শেইন ম্যাকম্যান কোনো এক অজ্ঞাত কারনে ছেড়ে দিয়েছেন WWE।

যেখানে শেইনকে ধীরে ধীরে ম্যাচ খেলিয়ে ভবিষ্যৎ ভিন্স ম্যাকম্যান বানানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিলো, WCW কে শেইন কিনেছিলেন, এমন একটা স্টোরিলাইন বানিয়ে যেখানে শেইনকে ভিন্সের পরেই সবচেয়ে বড় রেসলিং প্রোমোটার বানানোর কথা, তখন হঠাৎ শেইনের অন্তর্ধান একটু সন্দেহ কি জাগায় না? ২০০৬ সালে শন মাইকেলসের সাথে ভিন্স ম্যাকম্যানের স্টোরিলাইন রাইভালরিটা শেষ হওয়ার পরে একেবারে হুট করেই শেইন ম্যাকম্যানকে আর কখনও খুঁজেই পাওয়া গেলো না।

কিন্তু এই যে শেইন চলে গেলেন, এতে সবচেয়ে বড় লাভ হলো কার? যেই শেইন ছিলেন WWEতে বাবা ভিন্সের ডানহাত, নেক্সট ইন কম্যান্ড, তাঁর অবর্তমানে তাঁর শূন্যস্থান পুরন করছেন কে? শেইন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, WWEএর ব্যাপারে আর কোনোই উৎসাহ নেই তাঁর, তাহলে ভিন্সের এখন কিছু হলে WWE এর সমস্ত দায়িত্ব কে পাবে? বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিকটাই বা কে হবে? হ্যাঁ, তাঁর মেয়ের নাম এখানে আসবে।

কিন্তু মেয়ে যখন বিবাহিত, তখন মেয়ের আগে অবশ্যই চলে আসে মেয়ে জামাইয়ের নাম। ট্রিপল এইচ। এই যে, ট্রিপল এইচের অপারেশনের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পরেই শেইনের চলে যাওয়া, কিংবা শন মাইকেলসের সাথে রাইভালরির পরেই হঠাৎ সমগ্র প্রো-রেস্লিঙ্গের প্রতি শেইন ম্যাকম্যানের অনীহা, এ সমস্তই কি কাকতালীয়? নাকি এখানেও যোগাযোগ আছে ক্লিকের?

ন্যাশ ২০০৩ সালে ফিরে এসেছিলেন একবার, কিন্তু ইনজুরির কারনে তাঁকে আবার সাইডলাইন হয়ে যেতে হয়েছিলো। ট্রিপল এইচের টেস্ট প্রোজেক্টে র্যািনডি, বাতিস্তার পরে যোগ হয়েছে জন সিনার নামও। সিনার ব্যাপারে প্রথমদিকে ট্রিপল এইচ ছিলেন বেশ সরব, বেশ কিছু অফস্ক্রীন ইন্টারভিউতে বলেওছিলেন, যে এই লোকের কোম্পানিতে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

কিন্তু, সেই ভবিষ্যৎহীন লোকটি যখন ক্রমেই জনপ্রিয় থেকে জনপ্রিয়তর হয়ে উঠতে লাগলেন, তখন ট্রিপল এইচের আর কোনো উপায় ছিলো না তাঁকে প্রধান ফেইস বানানো ছাড়া। বাতিস্তার ব্যাপারে তাঁকে প্ল্যান কাজে লাগাতে অসমর্থ বলা যায়। বাতিস্তার বয়সটা কখনোই তাঁর পক্ষে ছিলো না। বাতিস্তা ২০০৫এ রয়াল রাম্বল জেতার সময়েই তাঁর বয়স প্রায় ৪০। তাঁকে তাড়াহুড়া করে রয়াল রাম্বল জেতানো, বা নিজে জব করে তাঁকে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন বানানোর দরকার ছিলো এখানেই।

ট্রিপল এইচ বুঝেছিলেন, যে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বাতিস্তা তাঁর সেরা সময়টা হারিয়ে ফেলবেন। র্যাননডির ব্যাপারে সেই ভয় ছিলো না। র্যাানডিও বুঝেছিলেন, যে কোম্পানিতে কিছু সুবিধা তিনি সবসময়েই পাবেন পল লেভেকের প্রিয়পাত্র হবার সুবাদে, কিন্তু প্রধান ফেইস হতে গেলে তাঁর নিজেরও কিছু যোগ্যতা লাগবে। সিনা বা র‍্যান্ডি কারো যোগ্যতা নিয়েই কোনো প্রশ্ন তুলবো না, কিন্তু একটা সময়ে দেখা গেছে এই দুজন ছাড়া মেইন ইভেন্ট ইমেজওয়ালা আর কোনো রেসলার ধারেকাছে নেই, তাই একটা সময় নিজেদের সাথেই এই দুজন খেলে গেছে একের পর এক ম্যাচ।

কিন্তু সেসময় এমন কেউ কি ছিলো না, যাকে মেইন ইভেন্টে সুযোগ দেওয়া যায়? জেরিকো আরভিডিরা তো বরাবরই ছিলেন, কিন্তু প্রতিবারই এরা ছিলেন উপেক্ষিত। স্টিং এমনকি WWEতে আসতে সাহসই পাননি। এছাড়া প্রতিভাবান নতুনেরা কেউ TNA, কেউ ROH, অথবা অন্যন্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট সার্কিটে গিয়ে খেলছেন। WWEএর, থুড়ি ট্রিপল এইচের, কখনোই তাঁদের কাউকে দরকার হয়নি।

পরবর্তীতে অনেক নতুন নতুন স্টার উঠে এসেছে। সিএম পাঙ্ক, বা ড্যানিয়েল ব্রায়ানের কথা বলা যায়। কিন্তু ক্লিকের সর্বনাশা ছোবল খেয়ে তাঁদেরও উঠে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। ধারনা করা হয়, সিএম পাঙ্কের WWE ছাড়ার নেপথ্য কারন, রয়াল রাম্বল ২০১৪তে বাতিস্তাকে জেতানো। খুব একটা মতবিভেদ হওয়ার কথা নয়, একটা ৫০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধকে দিয়ে মেইন ইভেন্ট খেলানোর চেয়ে রোম্যান রেইনসকে দিয়ে খেলালেও হয়তো কেউ কিছু বলতো না। কিন্তু বাতিস্তাকে জিততে দেখে রাগে ফেটে পড়েছে দর্শকেরা।

ফেইস বাতিস্তাকে হিল বানিয়ে ছেড়েছে। অনেক নতুন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ মেইন ইভেন্টার ছিলো হাতের কাছে। ব্রে ওয়াইয়াট, ড্যানিয়েল ব্রায়ান, রোম্যান, বা সিএম পাঙ্ক? যে লোকটা ২০১০ সালে তাঁর শেষ ম্যাচ খেলে গেছে, তাঁর ৪ বছর পরে ফিরে এসে জেতার চেয়ে যেই লোক ২০০৬ সাল থেকে টানা ফ্যান সাপোর্ট পাচ্ছে, এবং এখনো একটা রেসলম্যানিয়াতেও মেইন ইভেন্ট খেলতে দেওয়া হয়নি, তাঁর জেতাটা যুক্তিযুক্ত হতো না কি?


• ক্লিকের বর্তমান অবস্থা-

আসুন আমরা শেষে ক্লিক যোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটু জেনে নেই। ক্লিকের প্রথম নেতা শন মাইকেলস, প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন, অনেকের মতে সর্বকালের সেরা প্রো-রেসলার, ৯০এর দশকেরই সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র। কেভিন ন্যাশ প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন। তিনি আর স্কট হল একসময় বলতে গেলে গোটা WCW চালিয়েছেন। ন্যাশ এই দুজনের মধ্যে বেশী ক্ষমতাবান ছিলেন। হলের মাদক নিয়ে সমস্যা ছিলো বরাবরই।

ন্যাশকে দিয়ে ছাড়া এসব হতো না। এই দুজন মিলে WCW এর মতো একটা বড় রেসলিং এম্পায়ার ধসিয়ে দিয়েছেন। ট্রিপল এইচ। ইনিও প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন। সোজা কথায়, এই মুহূর্তে পুরো প্রো-রেসলিং দুনিয়াতেই সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। এঁর অঙ্গুলিহেলনেই ইদানিং প্রো-রেসলিং জগতে সবকিছু হয়। বাকি রইলো শুধু শন ওয়ালটম্যান। তাঁর সমস্যা ব্যাপক। একেবারেই মাইক স্কিল বলে কিছু ছিলো না বেচারার। তার উপরে আবার ট্রিপল এইচের ছেড়ে দেওয়া গার্লফ্রেন্ড চায়নার সাথে লাগাতার প্রেম করেছেন।

তবে ওয়ালটম্যান বা স্কট হলের রিহ্যাবের খরচ কিন্তু ট্রিপল এইচই দেন। ক্ষমতাধর হলেও তাঁর বন্ধুদের তিনি কখনোই ভুলে যাননি। এই কিছুদিন আগেও স্কট হলকে হল অফ ফেইম সম্মাননা দেওয়া হলো, এছাড়া ন্যাশও ইদানিং বেশ জমিয়ে ফিল্মে অভিনয় করছেন। মাঝেমাঝেই এসে ঘুরে যান WWEতে। আমরাও তাঁকে দেখে ধন্য হই। ট্রিপল এইচকে কি তবে কোনোভাবে স্বার্থপর বলা যাবে?

আরেকটা প্রশ্ন করা যায়। ট্রিপল এইচ কেনো ১৪ বার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন? যেখানে তার সমসাময়িকেরা এর চেয়ে অনেক কম বার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন? (দ্যা রক কিছুদিন আগে জিতে মোট ১০ বার, স্টোন কোল্ড ৬ বার) সেক্ষেত্রে স্টোন কোল্ডের চেয়ে কি এতোই বেটার সে? আবার যদি বিপরীত দিকে প্রশ্ন তুলি, যে বর্তমানে প্রো-রেসলিং এর হর্তা কর্তা, সে কি চাইলেই পারতো না, সর্বোচ্চ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিওনশীপের রেকর্ডটা নিজের পকেটে ভরতে? (রিক ফ্লেয়ার ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন)!

এই পোস্ট পড়ার পরে আমরা জানি, যে কিছুটা অনৈতিকতা ট্রিপল এইচ করেছেন নিজের স্বার্থে, কিন্তু যা ইচ্ছা তাই করতেই বা তাঁকে বাধা দিয়েছে কে? ট্রিপল এইচ যদি ২০১৪ সালেও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়, আমরা সাধারন ভক্তরা কিন্তু এতকিছু না দেখে অতীত রেকর্ড দেখে খুশীই হবো, আমাদের কাছে “যোগ্য রেসলার জিতেছে,” এমনই মনে হবে। ২০০২ এবং ২০০৬ এর পর তাঁর ইনজুরি ঘটিত তেমন কোনো সমস্যাও ছিলো না। এর কারন হিসেবে একটা খুব মজার প্রসঙ্গ টানা যায়।

২০০৩ সালে স্টেফের সাথে বিয়েটা যদি ট্রিপল এইচের কাছে লটারি জেতার মতো কিছু হয়েও থাকে, এবং চায়নাকে ছ্যাঁক দেওয়ার পর তাঁর সততা সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই, তবে পরবর্তীতে খুব সম্ভব স্টেফিনি ম্যাকম্যানকে তিনি মনে থেকেই ভালোবেসেছেন। এই দুজন একটি সুখী কাপল এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, এবং একজন সৎ ও প্রেমময় স্বামীর মতোই ট্রিপল এইচ তাঁর স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবারকেও আপন করে নিয়েছেন।

শেইন ম্যাকম্যানের অন্তর্ধান রহস্য যাই হয়ে থাকুক না কেনো, পরিশেষে তাঁর জায়গা নিয়ে ট্রিপল এইচ কিন্তু খুব খারাপ করছেন না। কোম্পানির ভালোমন্দ বুঝে তিনি নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন, যখন তিনি বুঝেছেন যে তাঁর সময় ফুরিয়েছে। সময়টা এখন তরুণদের। তাঁদেরকেই এখন সুযোগ করে দেওয়া উচিত। ইদানিং তিনি ইচ্ছা করেই সব ম্যাচে হেরে নতুনদের সুযোগ করে দেন, এটা কোম্পানির প্রতি ভালোবাসা না থাকলে তাঁর পক্ষে করা উচিত ছিলো না, কারন আমরা ২০০৩ সালে দেখেছি, ক্ষমতা থাকলে ট্রিপল এইচ কি কি করতে পারেন।

শেষ করার আগে একটা শেষ কথাও বলতে হয়। সেই কথাটা হচ্ছে, ক্লিক এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সামনে দিয়েই ক্লিকের দৌরাত্ম্য এখনো চলছে। হয়তো এটা কখনও শেষ হবে না। ভিন্স কিছু দিন পরে মারা গেলে, শাসন পুরোপুরিই ট্রিপল এইচের হাতে চলে আসবে, তখন তিনি আপনজনদের বাঁচাতে হয়তো আরও বেশী সক্রিয় হয়ে উঠবেন। আচ্ছা, ক্লিক আসলে কি? কিছু কাছের বন্ধুদের নিয়ে একটা গ্রুপ বৈ আর কিছু তো নয়। যারা অনেক আগে থেকেই বুঝেছিলো, যে পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর।

এখানে মামা-চাচা ছাড়া কোথাও কিছু হয় না। কিন্তু জীবনে প্রতিষ্ঠিতও তো হওয়া চাই। কয়েকজন কাছের বন্ধু মিলে তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যে নিজেরা বড় হওয়ার জন্য কখনও কারো কাছে সাহায্য চাইবেন না। নিজেদের বুদ্ধি ও ঐক্যের বলেই জীবন গড়বেন সবাই। এঁরা প্রায় প্রত্যেকেই নিজের নিজের প্রতিশ্রুতি পালনে সফল। তাঁদের সাফল্যে আমরা অভিভুত হতেই পারি, কারন এঁরা প্রথম জীবনে যা যা সংকল্প করেছেন, তার প্রতিটিই করে দেখিয়েছেন।

ভবিষ্যতে হয়তো এমন আরও ক্লিক বা ক্লিকসদৃশ দল আসবে। কেউ সফল হবে, কেউ ব্যর্থ, তবে শন মাইকেলস, ট্রিপল এইচ প্রভৃতি অন্তরঙ্গ বন্ধুরা প্রো-রেস্লিঙ্গের ইতিহাসে যা করে দেখিয়েছেন, তাতে তাঁদের সমকক্ষ হতে হয়তো আর কেউ কখনও পারবে না। এঁদের মহত্ত্ব এখানেই, “কিছু না” হিসেবে শুরু করেও আজ এঁরাই “সব কিছু।"

 • লেখকঃ Abid Hasan Chowdhury

কোন মন্তব্য নেই

কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ!